নিজের সম্বন্ধে আর কি বলি ! পেশায় একটি কলেজের অধ্যাপিকা , তবে পাশাপাশি সংগীত শিল্পী হিসেবেও কিছুটা পরিচিতি আছে। আছে বিভিন্ন ভাষার আর দেশের প্রতি আকর্ষণ , সেই টানেই বেশ কিছু বিদেশী ভাষা করায়ত্ত করার সৌভাগ্য হচ্ছে , হয়েছে দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও - তবে সেটা নিছক কর্মসূত্রে । সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে কাজ করছি আর অনেক অজানা তথ্য যা আমিও জানছি , সেগুলোই লেখার মাধ্যমে সবার সাথে ভাগ করে নিচ্ছি ।
রেস্তোরাঁ রাতারাতি বদলে গেলো মিউসিয়ামে
সময়টা ২০০০ সাল, ইতালির লেস শহরে একটা ছোট রেস্তোরাঁ কুঁওভদিস হঠাৎ খবরের শিরোনামে চলে আসে। ইতিহাসবিদ, প্রত্নত্ত্বাত্তিক, সংবাদমাধ্যম, পর্যটক সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এই রেস্তোরাঁ এবং প্রায় রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন মালিক লুসিয়ানো ফাজিয়ানো। কিন্তু কি এমন ঘটলো ? ঘটনা হলো যদি আপনার অজান্তে আপনার পায়ের নীচে কোনো সভ্যতা চাপা পড়ে থাকে আর আপনার অজান্তেই আপনি তার সাক্ষী হন তাহলে আশ্চর্যের বিষয় তো বটেই। ঠিক এমন ঘটনা ঘটে এই ফাজিয়ানোর সাথেও, যা ছিল তার কল্পনাতীত।
তার কুঁওভোদিস রেস্তোরাঁ বেশ বহুদিন ধরেই চলছিল। কিন্তু তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জমা জলের অভিযোগ পান আর দেখেন রেস্তোরাঁর বেশ কিছু জায়গায় ক্রমাগত ড্যাম্প ধরে যাচ্ছে। জায়গাটা বেশ পুরোনো হওয়ায় নীচের পাইপ মেরামত করতে হবে এই ভেবেই তিনি তার ৩ ছেলেকে নিয়ে ওই জায়গা খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। যদিও সাময়িক সমাধান হলেও সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। জমা জলের সুত্রানুসন্ধানে লেগে গেলো আট বছর। কিন্তু যে সূত্র হাতে এলো তাহলো প্রাচীন যুগের ও রোমান যুগের বহু মূল্যবান সামগ্রী সমন্বিত একটি আস্ত ঘরসহ আরো একাধিক প্রত্ন-উপাদান। প্রত্নতাত্ত্বিক তারান্টোর তত্ত্বাবধানে এবং আর্কিটেক্টস ফ্রাঙ্কো এবং মারিয়া আন্তোনিতা দে পাওলিসের নেতৃত্বে ফাজিয়ানোর পরিবার পুরোপুরি এই কাজে সহযোগিতা করেন। জানা যায় যে, নিচে প্রাপ্ত বাড়িটি এক সময় নানদের একটি প্রাচীন কনভেন্ট ছিল, যদিও ষোড়শ –সপ্তদশ শতাব্দী থেকে তা বন্ধ ছিল। পাওয়া গেছে, সম্ভবত মেসাপিয়ান কালের (পঞ্চম খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) ঝুপড়ি তৈরির জন্য যে শিলার মধ্যে বৃত্তাকার ছিদ্র করা হতো তার একটি ঘাঁটি, উদ্ধার হয়েছে একটি বেল-আকৃতির একটি বড় জলাশয় ,যা দৃশ্যমান ও প্রবেশ যোগ্য। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর পূর্ববর্তী ডিম্বাকৃতির ও আয়তক্ষেত্রাকার আকৃতির জলাশয়, মধ্যযুগীয় সময়ে শস্য এবং খাবারের জিনিসগুলি সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত একটি বৃহদাকার সিলোস। পাওয়া গেছে অনেক সেরামিকের বাসনপত্র ও আসবাবপত্র , একটি ১০ মিটার গভীর কূপ যা থেকে ইদুমে নদীর জল দেখতে পাওয়া যায়। আয়তক্ষেত্রাকার বেসিন, সমাধি ছাড়াও বহুমূল্যবান সামগ্রী।
এখন ফাজিয়ানোর কুঁওভদিস পৃথিবীর একমাত্র রেস্তোরাঁ যা পাশাপাশি লেসের বেসরকারী মিউসিয়ামও বটে । ইতালির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বে আছে এটি। ইতালির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুমতিক্রমে ভবনটি ব্যক্তিগত ইভেন্ট, সভা, অনুষ্ঠান, প্রদর্শনীর জন্য ভাড়া নেওয়া যায়। যদিও সাথে বিখ্যাত রেস্তোরাঁও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। তাই ইতিহাস – ঐতিহ্য – খাবারের আশ্চর্য্য মিশেল এই কুঁওভদিস পর্যটকদের কাছে অন্যতম গন্তব্যের।