অনুগদ্যে শাশ্বত বোস

অতসী গোধূলির স্বপ্ন

চিড়ে যাওয়া বিকেলের রোদটা বাড়িটার কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পাড়তে চেয়েছিল হয়তো, পারেনি| অনেকটা এলিয়ে পড়ে পাঁচিলে আটকে গিয়ে যেন কুমির ডাঙা খেলছে| একটা আলগা হয়ে ভাসতে চাওয়া পাখি ঝুপ করে বাড়িটার কার্নিশে এসে বসে মনকেমনের একটা গান ধরে| গানটা যেন আমি শুনে আসছি মাতৃগর্ভ থেকে| শুনেছিলাম বাড়িটা বানাতে আমার বাবা উদয়াস্ত পরিশ্রমের পর ওভারটাইম করতেন| বিরহী আফ্রোদিতির ঢঙে বাড়িটা যেন বলতে চায়, না বলতে পারা লোকগান| আমার দেশের ভাটিয়ালি কুলীন সংগীতের মর্যাদার আশায় যেন ওড়না হয়ে জড়িয়ে আছে বাড়িটার সমস্ত শরীর জুড়ে| পাশের বাড়িটা ভেঙে ফেলেছে| সেই শব পরিষ্কারের পর ফুটে উঠেছে একটা গোটা দেশের মানচিত্র| মৃত্যুকে সস্তার চুমু ছুঁড়ে বোকা বাক্সের মতো আমাদের বাড়িটা আজ বড়ো একা হয়ে গেছে| আর আমার চোখের অগভীর স্বপ্নে ভেসে আসছে ছেলেবেলায় পাশের মাঠে শীতকালে হওয়া যাত্রাপালার কথা| সেই যাত্রায় ধোপা পট্টির রমেনের করা শকুনির নাচ বহু বড় বয়স অবধি নকল করে দেখাত আমার মামারা| ছেলেবেলায় আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় পুরো পাড়া পাত পেড়ে খেত| সেই লক্ষ্মীপুজোর গল্প করে কেটে গিয়েছে কত অনামী শনি রবিবার| বাড়িটা কাল ভাঙা শুরু হবে| আমার কানে কানে কে যেন বলে উঠল, “ইরাবতীর চড়ায় যাবি?”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।