সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৩৩)
বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ৩৩
এক লহমায় সমস্ত রহস্য পরিস্কার হয়ে গেলো। বল্টুদার সঙ্গে কলকাতা থেকে আসা পুলিশ অফিসারদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিলো। তাদের কাছ থেকেই হীরের রহস্যটা জেনেছেন। কিন্তু তাদের কাছেও নির্দিষ্ট কোনো খবর ছিলো না যে আসল চোর কে। কিন্তু তাদের কাছে খবর ছিলো এই বাসটিতে চোর রয়েছে। তারপরের ঘটনা গুলো পরপর এগিয়েছে। ওদিকে কানাই চিল্কার দিকে দৌড় লাগিয়েছে। বল্টুদাও কানাইয়ের পিছু নিয়েছে। কিন্তু ছিপছিপে চেহারার কানাইয়ের সঙ্গে বল্টুদা দৌড়ে পারবেন কেন। ঠিক এমন সময় পুলিশের জিপ এসে হাজির। বল্টুদাকে তুলে নিলেন পুলিশের জিপে। জিপ ধাওয়া করলো কানাইয়ের পিছনে। কানাই তখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। পিছনে জিপে করে বল্টুদা। চিল্কার পাড়ে পৌঁছে দেখলেন দলের সকলে নৌকায় বসে অপেক্ষা করছেন। কানাইকে কোথাও দেখতে পাওয়া গেলো না। কানাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই দলের অনেকেই বলে উঠলো, একটা নৌকায় চড়ে এক্ষুনি দ্বীপের দিকে রওনা দিয়েছে কানাই। অবাক হয়েছেন সকলে। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার আগেই নৌকা স্টার্ট নিয়ে নেয়। বল্টুদা আর অপেক্ষা করতে চাইলেন না। দুজন পুলিশও বোটে উঠে এলেন। ফোনে খবর চলে গেলো। স্থানীয় থানা থেকে এক দল পুলিশ দ্বীপে পৌঁছে যাবেন কিছুক্ষনের মধ্যেই।
এর পরের অভিযান রোমহষর্ক। দুটো নৌকা পরপর রওনা দেয় দ্বীপের উদ্দেশ্যে। প্রবল গতিতে চালাতে বলা হয় বল্টুদাদের নৌকা। সামনে কানাই যে নৌকাতে সেটাও চলেছে দ্রুতগতিতেই। বল্টুদাদের নৌকা দ্বীপে দিয়ে পৌঁছানোর কিছুক্ষন পর বল্টুদাদের নৌকা গিয়ে পৌঁছায় সেখানে। বোট চালককে জিজ্ঞেস করতেই খবর পাওয়া যায় যে নৌকা ঠিক মত পাড়ে লাগানোর আগেই ঝাঁপ দিয়ে পাড়ে নেমে গেছে কানাই। এবং নিমেষের মধ্যে উপরের জঙ্গলগুলোর মধ্যে চলে গেছে। দুজন পুলিশ অপেক্ষা করছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে। অল্প কিছুক্ষন পরেই একটা বড় বোট করে বেশ কয়েকজন স্থানীয় থানার পুলিশ চলে এলেন। এবার সবাই বল্টুদাকে বললেন, চোর পালাতে পারবে না আর কিছুতেই, আমরা খুঁজে বার করবো, আপনারা তারচাইতে দ্বীপটা দেখে খাওয়া দাওয়া করে নিন। চোরকে ধরতে পারলেই আপনাদের জানিয়ে দেবো।
নৌকা যেখানে নোঙর করে, সারি দিয়ে বেচাকেনা চলে। বিশেষ করে জ্যান্ত মাছ, কাঁকড়া। বিশাল সাইজের চিংড়ি, লব স্টার বলা হয় যাকে, ইয়া ব্বড় কাঁকড়া আরো কত কিছু। কিনলেই ওরা রান্না করে দেবে। বল্টুদারা স্বীপ ঘুরতে লাগলেন। ঘোরার এমন কিছুই নেই। দ্বীপের মাঝখানে একটা হোটেল। সেখানে খাবারের অর্ডার দেওয়া হলো। পার্শে, ভেটকি, চিংড়ি, কাঁকড়া সব মিলেমিশে রাজকীয় ব্যপার আর কি। এই আনন্দটা একটা রহস্য উন্মোচনের। দলের সবাই বল্টুদার মুখ থেকে পুরো ঘটনাটা শুনলেন। এবং আশ্চর্য হয়ে গেলেন। খুব ঠান্ডা মাথায় বল্টুদা একেবারে গোয়েন্দার মত রহস্য উন্মোচন করেছেন। এবং চিল্কার ধারে জুতো না পরে সেই চায়ের দোকানে যাওয়াটা বল্টুদার আসলে একটা ট্রাপ ছিলো।
ঘন্টা দুয়েক কেটে গেছে। খাওয়া দাওয়া করে আশেপাশে একটু বিশ্রাম করছে সবাই। এমন সময় কানাই কে ধরে নিয়ে এলো পুলিশের দল। কলকাতার পুলিশ অফিসার বললেন, ভয়ঙ্কর এক ডাকাতের পাল্লায় পরেছিলেন আপনারা। এর আসল না কান কাটা নিতাই, বোম বাধতে গিয়ে কানের কিছুটা অংশ উড়ে গিয়েছিলো, যদিও বাইরে থেকে বোঝা যায় না। কান কাটা বলে লোকে ওকে কানাই বলে ডাকে।