কঠিন পরিস্থিতে কাটাচ্ছি সকলে। তাই ভাবলাম আমার পড়া বা জানা রবীন্দ্রনাথের কিছু বাস্তবধর্মী হাস্যকৌতুক সবার সাথে ভাগ করি। বহুমাত্রিক সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের কাব্যমানসে ছিল হাস্য রসিকতা। কেমন?
শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক বিধুশেখর শাস্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথ একবার লিখে পাঠালেন, “আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এজন্য আগামীকাল বিকেলে আমি আপনাকে আমি দণ্ড দিব।”
গুরুদেবের এমন কথায় শাস্ত্রী মশাই তো একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। এমন কী অন্যায় তিনি করেছেন যার জন্য তাঁর দণ্ডপ্রাপ্য?
চিন্তিত ও শঙ্কিত শাস্ত্রী মশাই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরদিন উপস্থিত হলেন কবির কাছে। তখনো তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ উৎকণ্ঠার মধ্যেই বসিয়ে রাখেন কবিগুরু। অবশেষে পাশের ঘর থেকে একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হন রবীন্দ্রনাথ। শাস্ত্রী মশাই তখন ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান লুপ্তপ্রায়। তিনি ভাবলেন, সত্যি বুঝি লাঠি তাঁর মাথায় পড়বে। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন আপনি!”
আর একটা ঘটনা বলি,
একদিন শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সঙ্গে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের ছেলেদের ফুটবল খেলা ছিল। শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট-শূন্য গোলে জিতে। সবাই দারুণ খুশি। তবে এ জয় দেখে রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করলেন “জিতেছে ভালো, তা বলে আট গোল দিতে হবে? ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে!”
আরও একটা—
স্বনামধন্য সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা বলাইচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই একজনের কাছে জানতে পারেন, বয়স হওয়ার কারণে রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তিনি যখন বললেন, “কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?” তখন বলাইচাঁদের ভাই চিৎকার করে জবাব দিলেন, “আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।” রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বলেন, “না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই!”
আজকের মতো এটাই শেষ —
একবার রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধী একসঙ্গে বসে সকালের প্রাতঃরাশ করছিলেন। তো গান্ধীজী লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল। আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি। গান্ধীজী তাই দেখে বলে উঠেন, “গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।” উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খেয়েই বেঁচে আছি!”
হাসুন হাসুন আর হাসতে হাসতে ভাবুন বহুমাত্রিকতা কাকে বলে