সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৯২)

রেকারিং ডেসিমাল

সে বারে বড় বড় বেতের টুপি মাথায় দিয়ে ঘুরে আর সমুদ্রের নানান রকম ঢেউ খেয়ে এক লাফে বড় হয়ে গেল দুই ছানা অনেকখানি।
তারপর গোয়া থেকে সোজা মুম্বাই।
জুহুর বালিতে এই প্রথম পা রাখা মায়ের।

বাবা স্মার্টলি তিনজনকে সব কিছু দেখান, চেনান। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসে কাজ শুরু করে থেকে মুম্বাই তাঁর বহু পরিচিত জায়গা।
প্রথম বার ফ্লাইট নিচে রানওয়েতে নামতে শুরু করতেই জানলা দিয়ে তাকিয়ে মা অবাক হয়ে কর্তাকে জিগেস করেছিলেন, চারদিকে এত নীল রঙ কেন ?
শুনলেন, এই সেই প্রসিদ্ধ বস্তি। পৃথিবীর অন্যতম ঘেটো। নীল প্লাস্টিকের ঘেরাটোপে এক হাত আধ হাত জায়গায় ঠাসাঠাসি করে সংসার, অজস্র মানুষের।

জুহুতে আরব সাগরের আছড়ে পড়া দেখতে দেখতে মা বুঝলেন, কেন ইয়ে হ্য বম্বাই নগরিয়া।
যত সম্পদ, তত দারিদ্র্য। যত আলো, তত অন্ধকার।
পুরোনো বম্বে, কটন মিলস, সব ঘুরিয়ে নিয়ে এলেন বাবা।
আর তার পরের দিন কলকাতা।

এই ঘুরে বেড়ানোর সময়টুকুতেই কত বড় হয়ে গেল দুই ছানা । কত কিছু শিখে স্বাধীন হয়ে গেল অনেকখানি।
প্লেনে ওঠা নামা, নিয়ম কানুন, হোটেলে নিজে নিজে বুফে, ডাইনিং হলের এটিকেট সামলানো, এমনকি এসব জায়গায় ওয়াশরুমের ব্যবহার ও বাড়ির থেকে অন্যরকম তো হয়ই।
দিব্যি সড়গড় হয়ে গেল দুই চকচকে চোখের সুন্দর মানুষ।

ইদানীং দু জনে নিজেদের মধ্যে কত গল্প খেলা আবিষ্কার করে ব্যস্ত হয়ে থাকে।
বাবা মা, কিছু ফাঁকা সময় হাতে পেয়ে দূর থেকে দেখে খুশি হন।

মা ভাবেন, বই পড়ার থেকে বেড়ানোর দাম শিক্ষার ক্ষেত্রে কম হওয়া উচিৎ নয়।

সুযোগ পেলেই চলো মুসাফির, বাঁধো গাঁঠরি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।