ক্যাফে কলামে সঙ্কর্ষণ

প্রায় প্রত্যেক বছর অফিসের মারোয়াড়ি শিক্ষানবীশ বন্ধুটি দূর্গাপূজার প্রবল জনস্রোত সহ্য ক’রতে না পেরে আজমীড় চ’লে যায়। মাসিক মাত্র ৮০০০/- ছাত্রবৃত্তির অধিকারী এই তরুণের পারিবারিক ব্যবসা ‘শেয়ার মার্কেটের দালালি’। সেখান থেকে তার যে উপার্জন, তাতে সে ৫জন কর্মচারীকে বেতন দিয়ে রাখতে সক্ষম।

গভীর রাত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় বাজারমূল্য দেখতে না পেলে সে অনিদ্রায় ভোগে। বাসগৃহ থেকে অফিস সেরে সন্ধ্যায় ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ ব্যতীত সে কোথাও যায় ব’লে আজ অবধি শুনিনি। ভিনরাজ্যের কাজে বাঙালি ছাত্রদের বায়ু সেবন অপরাধ হ’য়ে দাঁড়ায়, কারণ এ এবং এরই মতো অন্যান্যরাও কেবল ‘আর্থিক লাভ’ বোঝে।

কেবল এদেরই সংস্রবে কর্মস্থলে নিজস্ব ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা বিষম সন্দিহান হ’য়ে প’ড়ি, মনে ক’রি আমাদের দ্বারা কিছুই হ’লোনা। এদের পৈতৃক সম্পত্তি ও বৈভবে ঈর্ষান্বিত হ’য়ে প’ড়ে অত্যন্ত সীমিত ক্ষমতায় বাঙালি তার অহৈতুকি বিলাসিতা দ্বারা নিজেকে অতিক্রম ক’রতে চায় এবং পারেনা। শেষে নিজেদের কটূক্তিতে ক্ষান্ত হয়।

লক্ষ্যণীয় যে অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত বিলাসিতায় বাঙালি নিজেকে যখন আক্ষরিক অর্থেই ভিখারীতে পর্যবসিত ক’রছিলো, প্রায় তারও আগে থেকে এদের সঞ্চিত সম্পত্তি ক্রমবর্ধমান। বঙ্গীয় বণিক পরিবারগুলি ক্ষয়িষ্ণু হ’লেও এরা আজ সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে তারা চাকরি তৈরী ক’রছে, ভবিষ্যতেও ক’রবে।

বাঙালি সঞ্চয়ের মর্ম বোঝেনা ব’লে যে সকল অবস্থাপন্ন বঙ্গসন্তান প্রতিনিয়তঃ করাঘাত করেন, তাঁদের যদি মনে করানো হয় যে অস্তিত্বরক্ষার্থে পুঁজির কলেবর বৃদ্ধি করা যন্ত্রকে জাত্যাভিমান বোঝানো অসম্ভব, তখন প্রত্যেকেই উপহাস করেন যে আত্মগরিমা তাঁদের স্বজাতির সর্বনাশ ক’রেছে। এঁদের অনেকে গেরুয়া বলয়ের উগ্র সমর্থকও।

প্রায় প্রতি বছর বিশ্বের সেরা ধনীত্রয়ের মধ্যে হিন্দী বলয় থাকলেও সাহিত্য বা অর্থনীতির মতো বিষয়ে নোবেল কিন্তু ভারতকে একটিই মাত্র জাতি এনে দিয়েছিলো। এই নির্বোধ অর্থলোলুপ ইতরগুলি যখন মুখের ওপর জানায় যে তারা না থাকলে বাঙালি চাকরি পাবেনা, দুর্ভাগ্য যে তখন বলা হয়না যে জন্মগত ভৃত্য তো বাঙালি নয়।

মা’য়ের পূজায় চলমান জনস্রোত অসহ্য, কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে একে অপরের ওপর পা রেখে হাঁড়ি ভাঙতে কারো সমস্যা নেই। দীপাবলীতে ১মাস আনন্দ করা সম্ভব, অথচ শারদোৎসবে ২দিন ছুটি। ‘পুজো বোনাস’ নিতে হাত নিশ্চিন্তে পাতা যায়, কিন্তু যে উৎসব বাঙালির নয়, তাতে অফিস খোলা রাখতেই হবে, নতুবা ‘প্রফিট’ কীসে?

অস্তিত্বরক্ষার্থে অর্থ নিতান্ত প্রয়োজন। কিন্তু যারা উত্যক্ত করে, “তুমকো কিস কাম কে প্যায়সে মিলতে হ্যায়? ” তাদের উত্তরটুকু দেওয়া আবশ্যক। পুঁজিবাদের জন্য এতোখানি ঔদার্যও নিষ্প্রয়োজন, যাতে ভূমিপুত্র সংরক্ষণ বিষয়টির গুরুত্বই অনুধাবন ক্ষমতার বহির্ভূত হ’য়ে পড়ে। স্মর্তব্য, পরিশ্রমী মানে কিন্ত বলিপ্রদত্ত নয়…

পাশবিকতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোবার আগে প্রতিরোধ তৈরী হোক। সেজন্য কোনো পক্ষ নয়, বাঙালির প্রয়োজন।

ধন্যবাদ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।