সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৬৭)

পুপুর ডায়েরি
সদ্যই শেষ হল ২০২৫ ইংরেজি সালের কলকাতার বইমেলা।
বইয়ের উৎসব ছোটো বেলা থেকেই একটা মহা আনন্দমেলা।
কারণ আমরা বইপোকা পরিবার।
আজ বুঝি, শেকড়ের মজবুত হওয়াটা কতখানি জরুরি।
ইদানীং অবাক হচ্ছি দেখে, অনেক শিক্ষিত, মানে পেশাগত উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণ মানুষ ও মহাভারত রামায়ণের মত দেশের মাটির সাথে মিশে থাকা মহাকাব্যের চরিত্র সম্বন্ধে বলতে পারছেন না।
বিশ্বায়ন আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে।
কিন্তু বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পেলেকে কী নিজের ঘরের সঙ্গে সম্পর্ক মুছে যায়?
পুপুর দু বছরের পাঠ্য তালিকায় ঠাকুমার ঝুলির পাশেই ছিলো শিশু সাহিত্য সংসদের ছবিতে রামায়ণ আর ছবিতে মহাভারত।
আজও পর্যন্ত সে বইয়ের ছবি আর লেখা বুকের ভেতর আঁকা হয়ে আছে।
তাই কুম্ভকর্ণ বানান ভুল হয় না। আর শ্রুতকীর্তি কে জিজ্ঞেস করলে হাঁ করে থাকব না, যা আজকের কেবলমাত্র ইংরেজি রাইমস পড়া অনেক ভাল ছাত্রছাত্রীরা থাকে অনেক সময়ই।
সেই বইয়ের ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি আর সোনার হরিণ সাজা মারীচ রোজ দুপুরবেলায় ভাত খেতে বসত তখনও ইস্কুলে ভর্তি না হওয়া পুপুর পাশে।
ইস্কুলে ভর্তি হতেই প্রমোশন হল।
নতুন ক্লাসে উঠতেই নতুন বই। ইস্কুলের ব্রাউন পেপার লাগানো, এন এন লোগো দিয়ে নবনালন্দা লেখা লেবেল সাঁটা বই খাতার সাথে বাড়ির গল্পের বইয়ের স্তুপ।
সিগনেট প্রেস থেকে আসা সত্যজিৎ রায় বাবুর আঁকায় সাজানো আবোলতাবোল, হযবরল, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটোদের রামায়ণ, ছোটোদের মহাভারত, টুনটুনির বই।
সেই জন্যই তো আজও হিসেব করছি, কত অক্ষৌহিণী নারায়ণী সৈন্যকে ডেকে নিয়ে আসতে পারলে, এই সময়ের পৃথিবীর কিছু উপকার হবে।
আধুনিক ছোটোরা , অক্ষৌহিণী আর ব্যূহের হিসেব রাখে কী?
নাকি আমরা বাবা মা হিসেবে ফেল করে যাচ্ছি ক্রমশ?
পরের প্রজন্মের উজ্জ্বল অভিমন্যুদের কী চক্রব্যূহে ঢুকিয়ে দিয়ে হাত ছেড়ে দিলাম?
দিশাহারা ছোটোরা আর খুঁজে পাচ্ছে না নিজেদের পূর্বসুরীদের রেখে যাওয়া পথের নিশানা?
কেউ তাদের আর জানাচ্ছে না, পড়াচ্ছে না সেই প্রশ্ন উত্তরের সিলেবাস….
–— পথ কী?
–— মহাজনো যেন গত: স পন্থা:।
যে পথে মহৎ মানুষরা হেঁটে গেছেন, তাকেই অনুসরণ করো। সেইটেই পথ।