সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১৯)

পুপুর ডায়েরি
বুড়ো চিকিৎসক হবে পুপু, কেউ কোনো দিন ভেবেছিলো?
রূপোলি চুল এক মাথা। চোখে গুরুগম্ভীর চশমা।
তখন বন্ধুরা নানান রকম প্রশ্ন করে।
বলে, তুমি একেই তো বিজ্ঞানের ছাত্রী তায় আবার তুমুল ভালো ছাত্রী । সাহিত্য কোন ফাঁকে ঢুকলো ?
ডাক্তার পুপুসোনালি ততোধিক গম্ভীর হয়ে জবাব দেয় :সাহিত্যই ত আগে ছিল।বাবা মা দুজনেই সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। দাদু দিদা,ঠাকুর্দা ঠাকুমা সবাই গান কবিতায় ডুবে থাকা মানুষ। লেখা, বা মুখে মুখে অন্তমিলে লম্বা গল্প বলে চলা বাড়িতে সবার অভ্যেস ছিল। আমার জন্মের আগের দিন জন্মে ছিল বাবা মার পত্রিকা ” বিদ্যার্থী রঞ্জন “.দেশের মুখ্যমন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী, এমন কি বাংলাদেশ থেকে বংগবন্ধু মুজিবর রহমান ও স্বীকৃতি দিয়ে প্রশংসা করেছেন সে পত্রিকার। বিদ্যাসাগর মহাশয়এর জন্মদিনে উদ্বোধন হয়েছিল এর। ১০ বছরের ও বেশি দিন প্রকাশিত এ পত্রিকা এখনো জাতীয় গ্রন্থাগার বা রামকৃষ্ণ মিশনের গ্রন্থাগারএ রাখা আছে।
আমি বড় হয়েছিলাম সম্পাদকীয় লেখাতে ব্যস্ত বাবা,পাতা সাজাচ্ছেন,লেখকদের সংগে বাবা মায়ের সাহিত্য রাজনীতি নাটক ধর্ম নাচ গান নিয়ে বিতর্ক আর আলোচনা এই দেখে শুনে।অভিমন্যুর মত এই পরিবেশ ছোট মনকে মননশীল হতে শিখিয়েছিল।
আমার ইস্কুল, নব নালন্দা, বড় হচ্ছিল আমার সঙ্গে সঙ্গেই। মেনকা সিনেমার পাশের গলিতে, ক্লাস টু থেকে পড়তে গেলাম। ছোটো ছোটো ঘর। টু হল নিচের ঘরে। দোতলার ছোটো ঘরে ক্লাস থ্রি, আর ফোর।
ক্লাস ফোরে,ইংরেজি পরীক্ষার খাতায় রচনার বদলে একটা লম্বা কবিতা লিখে ফেলেছিলাম। নাম “মাই গার্ডেন “। খাতাটা সব টিচারদের হাতে ঘুরেছিল। হাইয়েস্ট পেয়েছিলাম,আর নব নালন্দা হাই স্কুল রেখে দিয়েছিল খাতাটি। সেই প্রথম নিজস্ব একটি লেখার জন্য ভারি আনন্দ হয়েছিল।
আর সেই টের পেলাম, শব্দ দিয়ে ছবি আঁকতে আমি ভারি ভালোবাসি।