কবিতাগুচ্ছয় ঋত্বিক সেনগুপ্ত

কলকাতায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঋত্বিক সেনগুপ্ত, ছোট ভাই মৈনাকের সঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন বাবার চাকরির সুবাদে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেক্ট ঋত্বিক এবং স্ত্রী পর্ণা বাঙালিয়ানাকে ভালোবেসে ছুঁয়ে থাকেন দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কেও। শৈশব আর এখনকার কাজের খাতিরে খুঁজে পাওয়া দেশের বিভিন্ন স্বাদ গন্ধ মানুষের রীতিনীতির গল্প কল্পনার তুলিতে সাজিয়ে ঠাকুমার ঝুলির গল্পের মত পরিবেশন করেন ঋত্বিক। কখনও বা কবিতায় ও ফুটে ওঠে নষ্টালজিক বাংলা, বর্তমান আর অতীতকে মিলিয়ে মিশিয়ে। নবনালন্দার ছাত্র ঋত্বিক তাঁর সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে দিয়ে যেতে চান পুত্রকন্যা তিথি ও দেবের হাতে। তিনি বলেন, পাঠকদের মতামত জানতে পারলে ভালো লাগবে।

১| আমার শরৎ

আজ আবার শরৎ এসেছে,
আরবারের মতো,
উৎসবের গন্ধে ভেসেছে,
মাঠ, পথ, বারান্দা আর
জানালার কাঁচ।
বয়স পেড়িয়ে দশক-পাঁচ!
মনে-আর মাথাতে বারবার,
বিতর্ক উজাড় –
জীবনের এখন তো শরৎকাল বটে,
কিছু যদি বেহিসেবি ইচ্ছে এসে জোটে,
অনিয়ম, অসময় অচেনা সাময়িক যতো,
খেয়ালগুলো, একবারের মতো,
যদি পাথেয় করে,
খুশীর মেঠোপথ ধরে দেই ছুট,
একদিন ভুলে গিয়ে রোজকার রুট।।
কিছু চেনা সাথে নিয়ে,
আর যে ছুটতে রাজি আছে,
চল ছুটে নিয়ে আসি শরৎ কুড়িয়ে –
ঝোলা ভরে গান, আকাশ আর শিউলির রঙ আনব ভরে।
দেখি নয় একবার ক’রে –
আশ্বীন এসে ঘরে, দেবে পরিচয়,
শরতেও বসন্তের খুশীর উদয়।
যদি একটা শরৎ রেখে বাজী,
বেনিয়মি খেয়ালগুলো করতে থাকো রাজি।

২| একান্তে

তখন ছিল আলগোছা,
আর – এখন অগোছালো;
দেখছি আকাশ বৃষ্টিমোছা,
মেঘের ফাঁকে আলো।।
সাঁঝ আভাতে স্বপ্ন ছোঁয়াও
রামধনূ দর্শনে –
মেঘলা বিকেল, তোমার কাছেই –
সাথী ভরা বর্ষণে।
ছেলেবেলার লুকোচুরিতে,
তুমিই কেল্লাফতে!
কিশোর দুপুর, যুবক বিকেল
তোমার হেফাজতে।
লুকিয়ে পড়া বইগুলো, আর,
আড়ালে ডায়েরি লেখা –
প্রথম যখন প্রেমের প্রকাশ,
তাওতো তোমার দেখা!
তোমায় ছেড়ে ভিনদেশে যাই,
পেশার হাতকড়া!
তোমার টানে ছুটির ফাঁকে
এলাম, দিতে ধরা।
তোমার কাছেই গা এলিয়ে,
থাকবো অতঃপর,
এত ভিড়েও, নিরালা আমার,
চিলেকোঠার ঘর।

৩| খামখেয়ালে

বলেছিলি যে মেলাতে যাবি,
একসাথে ?
চলনা!
এখন নাহয় দুপুর বটে,
না বলা কথা উথলে উঠে,
তোর সাতে বা আমার পাঁচে –
একটুখানি বাতাস লাগুক,
বলনা!
পথ আমারও অবশিষ্ট,
চেনা খেলা কিছু পদপিষ্ট,
তবু পা বাড়িয়ে চল ছুটে যাই,
লাফ দিয়ে ওই উঠোন পার হই –
চলনা!
বলেছিলি, সাথে মেলায় যাবি –
চলনা।
যাওয়ার পথে পড়বে চোখে,
পথের ধারে লোকের মুখে,
আমাদের সেই ফেলে আসা,
সহজ গল্প, সহজ ভাষা,
স্বপ্ন বুনছে আরো অনেকে,
জলছবি আর খেলনা।
মেলার মাঠে চেনা-অচেনা,
ব্যস্ত সবাই বেচা-কেনায়,
পণ্য জিনিস সম্পদ হয়,
আশ্বাস মজে ছলনা।
আমরা আজকে রোদবেলাত,
পথ হারিয়ে চল মেলাতে,
থমকে নাহয় পথ চলাতে,
বসব মাঠে, আলগা ঢঙেই,
সেই কথাটাই বলনা।
সাধ হয়েছে মেলায় যাবো,
তুইও সাথে চলনা।।

৪| কালের কথা

দশ বছরের বাচ্চা মেয়েটা,
হারিয়ে গেছে!
ওই গাছের গুঁড়ির গায়ে নোটিশ,
সাঁটা আছে।
ভাবছি মেয়ে নেহাৎ যদিই
ফিরেই আসে,
আবার কি সে খেলবে মাঠের
সবুজ ঘাসে?
চোখ বেঁধে সে দৌড় দেবে,
কানামাছি,
খোলা চোখে ও, সব কি চেনা,
কাছাকাছি?
শুধাবে কি, বুড়ির কথা
চাঁদ দেখিয়ে?
নাকি মায়ের কানের উপর
ঠোঁট ঠেকিয়ে –
বলবে কিছু জানা কথা,
হারিয়ে ফিরে,
মা কে ছাড়া সব চিনেছে,
সমাজ ভিড়ে!
কে বা কাছের, কে বা দূরে,
দাদা-কাকা;
হাটে-ঘাটে-বাটে হাওয়ায়,
ভাসছে টাকা।
আর যদি বা ভুল হয়ে যায়
অনুমানে,
কুন্তিও ভুল ভাসিয়েছিলেন,
হারিয়ে ফেরার অভিমানে।
হারানোটা বিপত্তি নয়,
কোনো কালে,
গান্ধারীরা পুত্রস্বার্থ,
রাখে আগলে।।
Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!