সম্পাদকীয়

“অন্য চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু।
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য। আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।”

লিখে গিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের পরিবেশ। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জীবনধারণের পথ অপ্রস্ত হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রা আজ বিজ্ঞান কেন্দ্রিক। সাইন্স ইন এভরি ডে লাইফ। শ্বাস-প্রশ্বাস এর মত প্রতি মুহূর্তে আমাদের জীবনে তার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতি সত্ত্বেও সভ্যতার কপালে আজ দুশ্চিন্তার প্রশ্নচিহ্ন! মুক্ত প্রাণ, মুক্ত বায়ু আজ বিপন্ন। বিজ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ, অপরিমেয় ভোগ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য। বিশ্ব পরিবেশ আজ গভীর সংকটের মুখোমুখি। ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে আমরা কি বুঝি?
বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে সারা পৃথিবীর গড় উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পাওয়াকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ সূর্যরশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পরে এবং তার ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। এরপর ভুপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত সূর্য রশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গ রূপে মহাশূন্যে ফিরে যায়। কিন্তু মানুষের অবিবেচনা প্রসূত ক্রিয়া-কলাপ এর ফলে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সৌররশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গ রূপে মহাশূন্যে ফেরার সময় এই গ্রিনহাউস গ্যাস গুলির দ্বারা শোষিত হয়। ফলে নিম্ন বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা ক্রমশ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিজ্ঞানীরা ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’নামে অভিহিত করেছেন। এর ফল আমরা সকলে ভুগছি। এর জন্য আমরা কতটা দায়ী?
কলকারখানা,যানবাহন,বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি এবং নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি যথা কয়লা,পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি হাইট্রোকার্বন জাতীয় যৌগ দহনের ফলে বায়ুতে CO₂,CO,SO₂ প্রভৃতি ক্ষতিকারক গ্যাস মেশে বায়ুতে। গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবাধে বৃক্ষছেদন,কৃষিকাজ,বাসস্থান নির্মাণ,নগরোন্নয়ন,সম্প্রসারণ,জ্বালানি কাঠের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদির কারণে মানুষ অবাদে গাছ ছেদন করছে। ফলে বাতাসে CO₂পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। CFC একটি গ্রিন হাউস গ্যাস। এটি রেফ্রিজারেটর,এয়ার কন্ডিশন,ইলেকট্রিক শিল্প এবং রং উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
খোদার ওপর খোদগারি কাজটি আমরা অবাধে করে চলেছি। এখন সাবধান না হলে ভয়ঙ্কর দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

রীতা পাল

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।