সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব – ১৬)

যাও পাখি দূরে

এদিকে টেবিলে তখন গরম গরম খাবার চলে এসেছে। আমি,পলি আর কুমারী ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ ললিতদা এসে কুমারীর হাতটা ধরে বলল,‘ আর ভিজো না। চলো চেঞ্জ করে নেবে।’ কুমারী হেসে বলেছিল,‘এখানে?’ ললিতদা,‘ গাড়িতে। আমার ব্যাগে তোয়ালে, টি-শার্ট আছে। যাও চেঞ্জ করে নাও।’ কুমারী আর ললিতদা গাড়ির কাছে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ কাটার পর রঞ্জনা গাড়িটা যে দিকে পার্ক করা আছে সেদিকে যায়। আমাকে আর পলিকে বলে যায়,‘ তোরা খা ,বাকি অর্ডারগুলো বুঝে নে, আমি আসছি ।’ আমি আর পলি গল্প করতে করতে খাচ্ছিলাম। প্রায় মিনিট দশেক পর রঞ্জনা ফিরে আসলো। আমরা ভেবেছিলাম ও হয়তো চেঞ্জ করতে গেছে। কিন্তু না,ও মোবাইল দেখতে দেখতে চলে এলো। আরো মিনিট দশেক পর কুমারী আর ললিতদা গল্প করতে করতে ফিরল। তারপর আমরা সবাই মিলে খাবার শেষ করলাম।
খাওয়া শেষ করে উদয়পুর বিচকে বাই বাই করে কলকাতার দিকে রওনা দিলাম। রঞ্জনা সারাক্ষণ ফোনে কি ঘাটাঘাটি করছিলো। আমরা গান শুনতে শুনতে ফিরছিলাম। কোলাঘাটের খানিক আগে রঞ্জনা বলল ও বাড়ি যাবে দেখা করতে।
“ওর কি সেদিন বাড়ি যাবার কথা ছিল,নয়ন?” “ও বলেছিল বাড়িতে একবার দেখা করে আসবে। সেইমতো ওর বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। ওর বাড়িতে ওর মা আর ওদের ড্রাইভার ছিল। ওর মা কোথায় বেরোতেন বোধহয়। আমাদের দেখে ওর মা আর বেরোলেন না। কাজের মাসিকে ডেকে আমাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করতে বললেন। ললিতদা বললো, ‘আজ থাক। আমার একটা জরুরি মিটিং আছে। তাছাড়া ওদেরও বাড়ি ফিরতে হবে।’ আমরা নীচে ড্রই্ংরুমে বসেছিলাম। রঞ্জনা দোতলা থেকে ললিতদাকে ডাকল। ললিতদা উপরে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর নীচে এসে বলল, ‘চল’ —- ওর মা
আমাদের খাওয়া-দাওয়া করে যেতে বলেছিল কিন্তু আমরা কেউ রাজি হইনি। সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল। হঠাৎই একটা কিছু ভাঙার শব্দ পেলাম। কাঁচ ভাঙার মত আওয়াজ। আমরা সবাই গাড়ীতে উঠলাম। রঞ্জনাকে ডাকছি,রঞ্জনা আর আসে না? ওর মা এসে জানালো, ‘ওর শরীরটা খারাপ লাগছে তাই ও এখন যাবে না। তাছাড়া পরীক্ষা তো শেষ হয়ে গেছে। ও ক’দিন পরে হোস্টেলে ফিরবে। ললিত তুমি মুম্বই এ যাবার আগে একবার এখানে এসো।’.
আমরা সবাই একটু অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ি ফেরার তাড়াতে আমরা আর দেরি করিনি। আমি সামনের সিটে উঠতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পলি বলল,‘এই আমি এবার সামনের সীটে বসে যাব তোরা পেছনে বোস।’ সবই নিয়তি না হলে সেদিন তো আমারই সামনের সিটে বসার কথা ছিল। ওখান থেকে বেরিয়েই ললিতদার ফোনে ঘনঘন ফোন আসছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কে বারবার ফোন করছে! এসি চলছে,তাও দেখছি ললিতদার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। ও তার আগে ফোনে কাউকে বলেছিল, ‘ফোনটা এখন রাখ। আমি এই নিয়ে পরে কথা বলব।’ কিন্তু ফোন আসা বন্ধ হয়নি। পরপর ফোন আসছিল! গতকাল থেকে আমরা এতবার ফোন কল আসতে দেখিনি। বুঝতে পারছিলাম ললিতদা বেশ টেনশানে আছে। গাড়ি বেশ দ্রুত গতিতে ছুটছে – – – – – । হঠাৎই সামনে একটা গাড়ি দেখলাম! তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন দেখি হাসপাতলে মাথায় ব্যান্ডেজ। বুকে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও আমার আঘাত ওদের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। পরে আস্তে আস্তে জানলাম সেদিন আমরা কী কী হারিয়েছি।”
“ আচ্ছা,নয়ন,আমাকে একটা কথা বল দেখি, সেদিন গাড়িতে এসি ঠিকঠাক চলছিল? মানে তোদের গরম লাগছিল কি?”
“ না তো। নতুন গাড়ি বেশ ভালই ঠান্ডা ছিল। সামনে পলি ছিল। ওই বলেছিল, ‘কার ফোন ললিতদা? তুমি এত ঘামছো কেন,কি হয়েছে?’
নতুন গাড়ি এসি ঠিকঠাক তবুও ললিতের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম কেন?

ক্রমশঃ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।