মার্গে অনন্য সম্মান রঞ্জনা মন্ডল মুখার্জী (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৬২
বিষয় – প্রিয় সাহিত্যিক

বিভূতি স্মরণে

বাংলার সাহিত্য আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কসম,
চির শাশ্বত, দীপ্তমান তুমি বিভূতি….
বাঙালীর মনিকোঠায় চির স্মরণীয়,
প্রিয় সাহিত্যিক অমূল্য ভূষণ।

মহানন্দ- মৃণালিনীর আদরের ধন,
ভূমিষ্ঠ হলে মাতুলালয়ে,নিদারুণ অভাবে
দিনযাপন।
অভাবকে দেখেছো কাছ থেকে,
দারিদ্র্যতা করেছে তোমায় সমব্যথী,
তাইতো তোমার লেখায় ফুটে ওঠে ওদের জীবনের খন্ড করুণ গাঁথা….!
লবটুলিয়ার জঙ্গলের সেই দরিদ্র মেয়ে কুন্তা,
যে ক্ষুণ্ণাবৃওির জন্য বন্যকূল সংগ্রহে ব্যস্ত বা শীতের জ্যোৎস্না রাতে তোমার পাতের অবশিষ্টাংশ অন্নকূটের জন্য ইঁদারার কাছে অপেক্ষারত,
তাকে লেখনীবন্দী করেছো,
নগরবাসীর সঙ্গে করিয়েছো পরিচয়।
আর ওই নাটুয়া বালক ধাতুরিয়া….
চীনা ঘাসের দানা ভাজা আর আখের গুড়ের মিলাপে উদরপূর্তির যে পরমতৃপ্তি….
সেই পরিমল আনন্দ – অম্লান হাসি তুমি সহজেই দেখেছিলে তার চোখ মুখে।

সভ্যতার আলো থেকে অনেক অনেক দূরে,
উপেক্ষিত- হত- দরিদ্র -অবিন্যস্ত – সহজ সরল মানুষ গুলোর জীবনধারাকে হৃদয়ঙ্গম করেছো অন্তরে।
তুমি স্মরণ করিয়েছো বারে বারে..
শহুরে জীবনের সমান্তরালে চলে সভ্যতার আদিমতম এক নির্ভেজাল কঠিন, গতিশীল, ব্রাত্য জীবনধারা।

বিভূতি তুমি প্রকৃতি প্রেমিক….
তোমার স্রষ্টা মন প্রকৃতির রূপ-সুধা পান করেছে আকন্ঠ..
পাহাড় – মালভূমি – জঙ্গল – বাঁশবন- শালবন- রক্ত পলাশের অরণ্য – ভাঁট ফুল- সরস্বতী কুন্ডীর জল- নদী চরের ঝাউ আর কাশের বন…
জ্যোৎস্নাস্নাত তিমির রাএি কিংবা রৌদ্রদগ্ধ তামাটে দ্বিপ্রহর…..
তোমার কলমের শৈল্পিক আঁচড়ে হয়েছে চিএিত…
প্রকৃতির নিগূঢ় সৌন্দর্যের রহস্য তুমি করেছো উন্মোচন,
বাঙালীর সমস্ত অন্তর জুড়ে ঘটেছে মানসভ্রমণ।

বিভূতি তুমি দেখিয়েছো স্বপ্ন দেখার অধিকার,
শত লাঞ্ছনা- বঞ্চনা – অবহেলা – অবমাননার কণ্টকাকীর্ণ পথেও,
সততা ও অধ্যাবসায়ের জোরে স্বপ্ন ছিনিয়ে আনা যায়…
মাটির মানুষ হাজারী ঠাকুরের স্বপ্নজয়, জীবনের কথা বলে…
রাণাঘাট স্টেশন বাজারে ” আর্দশ হিন্দু হোটেল ” আজও স্বপ্নের বীজ বোনে।

বিভূতি তুমি কল্পনাপ্রিয়….
বাঙালির মনের নিদ্রামগ্ন অপুকে করেছো করাঘাত,
করে তুলেছো দুর্ধর্ষস্পর্ধা, দুঃসাহসিক -অপ্রতিরোধ্য, অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় দুর্নিবার আকর্ষণে….
কল্পলোকে অবাধ বিচরণ আফ্রিকার দুর্গম প্রান্তরে,
রোমহষর্ক অভিযানে ” চাঁদের পাহাড় ” হাতছানি দেয় বারে বারে।

বিভূতি তোমার লেখনীর দর্পণে…..
সহজ সরল মুখ গুলো ধরা পড়ে এক গভীর জীবনবোধে,
অপু- দুর্গা আজও নস্টালজিক পাঠকের হৃদিমাঝে…
আজও খুঁজলে পরে, রেললাইনের সম্মুখ পানে…
ওদের দেখা মেলে কাশের চামর বনে।
কাশ ফুল হাতে শারদীয়ার আবাহনে।

বিভূতিভূষণ বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল এক নাম…
আরণ্যক, অপরাজিত, পথের পাঁচালী, দেবযান, ইচ্ছামতী,মেঘমল্লার, মৌরিফুল,দৃষ্টিপ্রদীপ, যাএাবদল,অশনিসংকেত, কিন্নরদল, স্মৃতিরেখা, তৃণাঙ্কুর…তাঁর অনন্য কাব্যিক সৃষ্টি – সৃজন।

তোমার সৃষ্টিসুধায় আছে সেই অমৃত….
যার পরশে শ্রান্ত মন হয় হরষিত,
তোমার লেখনীর স্পর্শে চরিত্র হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত…
অনায়াসেই পথিক বেশে ঘুরে আসা যায়… ভাগলপুর- পূর্ণিয়া- ঘাটশিলা- লবটুলিয়া- বইহার প্রান্তর!
তুমি আজও বাঙালির মনে বিরাজিত,চির অম্লান – চির ভাস্বর!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।