সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রিতা মিত্র (পর্ব – ১)
মেদলা ওয়াচ টাওর
আমরা পাঁচজন গ্রুপের নাম গোয়া গ্রুপ। আসলে এই নামকরণের পেছনে কারণ হচ্ছে একটা অন্য গ্রুপের সঙ্গে গোয়া ঘুরতে গিয়ে এই পাঁচজনের মধ্যে আলাদা সক্ষ্য জমে উঠৈছিল। তাই এই নাম দেওয়া। তার মধ্যে তিনজন মহিলা আর দুই যুবক। এই মহিলাদের মধ্যে পাপিয়াদি থাকেন জলপাইগুড়িতে। তার ইচ্ছেতে সায় দিয়ে দিন ঠিক হল এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আমরা চার কলকাতাবাসী পাড়ি দেবো জলপাইগুড়ি। সেই জন্য রেলের নিয়ম মেনে টিকিট কাটা হল বাইস সালের ডিসেম্বর মাসে।
এরপর অপেক্ষা। কাউন্ট ডাওন। যথাক্রমে এসেগেল কাঙ্ক্ষিত দিন। আমরা দার্জিলিং মেলে উঠে বসলাম।
পরেরদিন ট্রেন সামান্য দেরি করে নিউ জলপাই গুড়ি স্টেশনে ঢুকল। পাপিয়াদি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। আমরা চললাম
Unique Inn Resort &Hotel । আগে থেকেই অনলাইন বুকিং করে রেখেছিলেন পাপিয়াদি। যাবার পথে গরুমারা জঙ্গল সাফারি করব বলে টিকিট কাটতে গাড়ি থামতেই শুনলাম শনিবার বলে সাফারি বন্ধ। সকলের মন খারাপ হয়ে গেল। আমরা রিসোর্ট এ পৌছে রুমের চাবি নিয়ে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিলাম। হোটেলের লোকেরা বলল জঙ্গল সাফারি বন্ধ থাকলেও মেদলা ওয়াচ টাওর খোলা থাকবে। যা জঙ্গল সাফারি থেকে কোনো অংশে কম নয় বরং বেশি জন্তু জানোয়ার দেখা যায়।
রুমে এসে ফ্রেস হয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। কেননা টিকিট কাটতে হবে। খাওয়া সেরে একটা টোটো বুক করা হল দরাদরি করে। সে টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত নিয়ে যাবে আবার পরে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
টিকিট কাটা হল পাঁচটা। জিপসির নম্বর দিয়ে দিয়েছে। জিপসি আসতে দেরি আছে জেনে টোটো ড্রাইভার বলল একটু টাকা বাড়িয়ে দিলে পাশের চা বাগান ঘুরিয়ে আনবে। রাজি হলাম। সুন্দর সবুজ চা বাগান তার শেষ প্রান্ত দেখা যায় না। ময়ুরের ডাক শুনে সকলের চোখ ময়ুর খুঁজতে লাগল। ওই তো ওই তো। আরে কোথায়? দেখতে পাচ্ছিনা তো পাপিয়াদি বলে উঠলো।
ওই তো দেখো ময়ূরের মাথার কলকে দেখা যাচ্ছে নীল গর্দান দেখা যাচ্ছে।একটা ময়ূর চা বাগানের ঝোপ থেকে উড়ে একটা গাছের ডালে বসল। তবে ছবি ভালো তোলা গেল না। আমরা কয়েটি সেলফি তুলে ফিরে এলাম। সাড়ে তিনটের পর আমাদের জিপসি এলো। সবাই চড়ে বসলাম। তবে আমি বসিনি। আমার ঢাউস ক্যামেরা বন্দুকের মতো তাক করে দাঁড়িয়ে থাকলাম জিপসির রড ধরে। চলল গাড়ি জঙ্গলের পথে। এক অদ্ভুত গন্ধ নাকে লাগছে। গাড়ির ঝাঁকুনিতে ব্যালেন্স রাখা যাচ্ছে না।
জঙ্গলের মেঠো পথে কত ময়ূর ঘোরাঘুরি করছে। হঠাৎ প্রতাপ আমার হাত শক্ত করে ধরে আন্টি দেখো। দেখলাম আমাদের বাঁ দিকে জঙ্গলে একটা পুর্ণবয়স্ক সাম্ভর হরিন। এক মুহুর্তের জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল আমাদের তারপর সবুজের আড়ালে চলে গেল। আমি ক্যামেরার সাটার টেপার সুযোগ পেলাম না।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর একটা গ্রাম। ছোট ছেলেপিলেরা খেলছে। মহিলারা কেউ উঠোন ঝাঁড় দিচ্ছে তো কেউ জল ভরছে কল থেকে। হঠাৎ রাস্তার উপর একটা ময়ূর। রোদে তার পালকের রঙ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আমি বললাম একটু দাঁড়া। কয়েকটি ছবি তুলি। সবাই হাসল আমার উপর। ওমা দেখি ময়ূর বাবাজি একটু এগিয়ে বাঁদিকে একটা গাছের গুড়ির উপর দাঁড়িয়ে পড়লেন। গাইড বলল আপনার ছবি তুলুন গাড়ি থামাচ্ছি। আহা। কী মনোরম দৃশ্য। আমাদের গাড়ি আরো মাইল দুই পেরিয়ে কালিপুর বলে জায়গা থামল। এখান থেকে মোষের গাড়ি করে ওয়াচ টাওর যেতে হবে। দুটো মোষ একটা গাড়ি টানে। দশজন আরোহী চড়তে পারে। এখানে কয়েকটি কটেজ আছে। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের। অনলাইন বুকিং হয়। এক দিকে বিস্তৃত চা বাগান। নাম যাদবপুর টি স্টেট। মালিক যাদবপুর বাসিন্দা। একদিকে ঘন জঙ্গল। জঙ্গলের দিকে ফেন্সিং করা তারে কারেন্ট দেওয়া যাতে জঙ্গলের পশুরা এপাশে না আসে।
যাবার পথে একটা বাইসন দেখতে পেলাম। আরো কিছুটা এগোতেই একদিকে কুনকি হাতিদের থাকার ব্যবস্থা দেখা গেল ডানদিকে একটু ঢালূ জমি ঘাসের মাঠ সেখানে একটা মোষ চরে বেড়াচ্ছে। আমাদের গাড়ি মোষ তাকে দেখে হাঁকডাক আরম্ভ করল। পারে তো পক্ষিরাজ হয়ে উড়ে যায়।
কোনো মতে তার গলার দড়ি টেনে ধরে রাখল চালক। আমরা নামতেই গাড়ি আর মালিক দুই নিয়ে হুড়মুড়িয়ে নেমে গেল ঘাস খেতে।
কুনকি হাতিরা সরকারি কর্মচারী। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে মাস মাইনে সেখানেই জমা হয়। তার থেকে মাহুতের মাইনে ও হাতির খাওয়া খরচা চলে বলে জানা গেল।
ক্রমশ