রম্য নাট্য রচনায় রবীন জাকারিয়া

মাছ-মাংস তিন বেলা, করবো না আর কোন হেলা

১ম দৃশ্য
(শহরের একটি আধুনিক প্রাইভেট স্কুল ক্যাম্পাস৷ শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে৷ চমৎকার স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত শিক্ষার্থীরা শৃংখলার সাথে উপবিষ্ট৷ আজ পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাশ হবে৷)

একজন শিক্ষিকা শিক্ষা উপকরণ হাতে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করবেন৷

ম্যাডাম: Good morning students.
শিক্ষার্থী: Good morning teacher.
ম্যাডাম: পুষ্টি বিষয়ক একটি চার্ট দেখিয়ে পুষ্টির গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন৷ বলছেন, “দ্যাখো আমরা যদি নিয়মিতভাবে তিন বেলা মাছ-মাংস না খাই কিংবা দিনে অন্তত তিনটি ডিম না খেলে শরীর ঠিক থাকবে না৷ আর মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হবে না৷ অন্যদিকে মেধা না থাকলে জীবনে বড় কিছু হতে পারবো না৷”
তোমরা কি বুঝতে পেরেছো?
১ম ছাত্র: বাবা-মা যদি আমাদের জন্য এত দামী খাবার না দিতে পারে?
ম্যাডাম: দায়িত্বশীল অভিভাবক হতে হলে এগুলোতো তাদেরকে পারতেই হবে৷
২য় ছাত্র: আমার বাবাতো বড়লোক নন৷ তিনি অনেক কষ্ট করে সাধ্যের বাইরে গিয়ে এত ভাল স্কুলে পড়াচ্ছেন৷ এতেই হিমশিম খাচ্ছেন৷ তিনিতো পারবেন না!
ম্যাডাম: এগুলো কোন বিষয়ই নয় বর্তমানে৷ আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ৷ মাথাপিছু আয় বেড়েছে৷ রিজার্ভ বেড়েছে৷ আমরা এখন ইচ্ছে করলেই তিন বেলা মাছ-মাংস খেতে পারি৷
ঠিক আছে?
সকল শিক্ষার্থী: ঠিক আছে ম্যাম৷
ম্যাডাম: Good bye students.
শিক্ষার্থী: Good bye teacher.

শিক্ষকের প্রস্থান
১ম দৃশ্য শেষ
——————————————

২য় দৃশ্য
(প্রাঙ্গণের পাশেই একটা শেড৷ অভিভাবকদের ওয়েটিং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ স্বল্পসংখ্যক চেয়ার আর বেঞ্চ বেদখল হওয়ায় অনেকে দাঁড়িয়ে কিংবা নিজের আনা মাদুর বিছিয়ে বসে আছে৷ ছোট ছোট দলে বিভক্ত৷ কেউ লুডু খেলছেন৷ কেউ নিজেদের আভিজাত্য আর ক্ষমতার নির্লজ্জ বর্ণনা দিচ্ছেন৷ কেউবা সাম্প্রতিক সময়ে তার স্বামী কতগুলো গয়না আর শাড়ি কিনে দিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরছেন৷)
এমন সময় বিরক্তিভরা মুখে একজন অভিভাবকের প্রবেশ৷
১ম অভিভাবক: কী ব্যাপার আপা মন খারাপ? নাকি ছেলের উপর রাগ করেছেন?
আগন্তক অভিভাবক: আর বলবেন না আপা! মেজাজটা খারাপ৷ রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে৷
১ম অভিভাবক: কেন?
আগন্তক অভিভাবক: ছেলেটাকে কোনভাবেও তিনবেলা মাছ-মাংস খাওয়াতে পারছি না৷ বলেনতো কেমন লাগে?
১ম অভিভাবক: কেন ভাই কী করেন? আর্থিক সমস্যা?
আগন্তক অভিভাবক: না না আর্থিক সমস্যা হবে কেন? এখন কি সেই দেশ আছে? আর আপনার ভাই বর্তমানে জবলেস৷ করোনার সময় ওর চাকুরিটা চলে গেছে৷ গত দুই বছর ধরে চেষ্টা করছে৷ কিন্ত পাচ্ছে না৷ অসুবিধা হচ্ছে না৷ বেকার হলেও প্রতিদিন এতটাকা খরচ করে মাছ-মাংস আনে৷ অথচ ছেলেটা খেতে চায় না৷ আপনিই বলুন না খেলে বুদ্ধি বাড়বে? রেজাল্ট ভাল করবে৷
১ম অভিভাবক: সেটাও ঠিক৷
আগন্তক অভিভাবক: জানেন না আপা গতকালই ওর বাবা ৭০০টাকা দরে ২কেজি গরুর মাংস, ৮৫০টাকা দরে ২ কেজি খাসির মাংস আর ৫০০টাকা দরে ৩কেজি মুরগির মাংস কিনে এনেছে৷ আমরাতো তিনবেলাই মাছ-মাংস খাচ্ছি অথচ ছেলেটা মুখেই দেয় না৷ ভাগ্য ভাল দেশের লোকের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে৷ তা নাহলে যে কী হতো? আপা আপনার Husband কী করেন?
১ম অভিভাবক: ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করে৷
আগন্তক অভিভাবক: কোন পজিশন?
১ম অভিভাবক: ড্রাইভার৷ তাছাড়া আমাদের শহরের ভেতর দশতলা দুটো বিল্ডিং আর শপিং মলে কয়েকটি দোকান কেনা আছে৷ ওগুলোর ভাড়া তুলি৷ বেশ ভালই কাটছে আপা৷ তাছাড়া আমার স্বামীর হাত খুব বড়৷ বেহিসাবী খরচ করে৷ ছেলেমেয়েদের দেশি খাবার খেতে দেয়না৷ বোঝেনই তো দেশের খাবারে যে ভেজাল৷ দেশটা অনিয়মে ভরে যাচ্ছে৷
আগন্তক অভিভাবক: একদম৷

এমন সময় স্কুল ছুটির ঘন্টা বাঁজলো৷ সকলের প্রস্থান৷
২য় দৃশ্য শেষ
—————————————————
৩য় ও শেষ দৃশ্য
(বিরাট অডিটরিয়াম৷ একটা হলরুম রাজকীয় কায়দায় সজ্জিত৷ জনগণের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার৷ প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন মাননীয় মন্ত্রী৷ হলরুম কানায় কানায় ভরা৷ অতিথিদের আসনে উপবিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা, পুষ্টিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধি৷)
মাল্টিমিডিয়ায় প্রদর্শিত মন্ত্রীর ভার্চুয়াল বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠানে সূচনা৷ তিনি বললেন দেশ আজ গতিশীল উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷ এই উন্নয়নকে ধারাবাহিকভাবে চলমান রাখতে হলে সকলকে বিশেষ করে আগামী প্রজন্মকে মেধাবী ও সক্ষম করে তুলতে হবে৷ আর সেজন্য পুষ্টির কোন বিকল্প নেই৷ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পরও যারা কৃপণতা করে তিনবেলা মাছ-মাংস খাবেন না তাদের জন্য অতি শ্রীঘ্রই একটি আইন আসছে৷ অতএব সকলে সরকারী নীতিমালা মেনে চলবেন৷ প্রকারান্তরে নিজেরাই সুস্থ্য থাকবেন বলে আশা করি৷ সবাই ভাল থাকুন৷ দেশকে সমৃদ্ধ করুন৷ ধন্যবাদ৷
মন্ত্রীর বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানের সভাপতি সভা শেষ করা পূর্বে সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন৷
উপস্থিত সকলে ডান হাত কাঁধ বরাবর সামনের দিকে প্রসারিত করে একযোগে বলতে থাকেন “করবো না আর কোন হেলা, পুষ্টি খাবো তিন বেলা৷”
এমন সময় সমস্ত লাইট বন্ধ হবে৷ সাথে সাথে মঞ্চের স্ক্রীন নেমে যাবে৷

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।