গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৫২)

নীল সবুজের লুকোচুরি

দেশিকান সুমিতাকে নিয়ে যখন পৌঁছেছে তখন ওদের চারজনের জন্য ডিনার রেডি। পরদিন মোস্ট ইমপরট্যান্ট সিডিউল বলে দেরি না করে আনসারি স্যার দেশিকানকে সাথে নিয়ে ফিরে যান নিজের নিজের রুমে।

আজ দিনভর নানা ধরনের ব্যস্ততার মধ্যেও মিঠির চোখ দুটো বারবার বড় গেটের কাছে গিয়ে আটকে থেকেছে। কোথায় গেল সে? সারাদিনে একবারও এলনাতো আজ!
এই কদিনের এতো ব্যস্ত সিডিউল থাকা সত্ত্বেও এমন তো হয়নি!তবে কি তাঁরা দুজনেই চলে গেছে? একবার বলে গেল না! এই বুঝি দিদিভাইকে ভালোবাসার নমুনা! মিঠির খুব কষ্ট হচ্ছে আরিয়ানের জন্য। আজ তো অনেক কথা বলার ছিলো! কাল এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়েছিল যে কারোরই কথা বলার মতো মুড ছিলনা। কিন্তু সেসব ঘটনার প্রেক্ষিতটা জানতে হবে তো! নাহলে বারে বারে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। মিঠি নিজের মনে অনেক কিছু ভাবছিল। এমন সময় হস্টেলের একটা বাচ্চা ছেলে এসে একটা ভাঁজ করা কাগজ মিঠির হাতে তুলে দেয়। বলে, সাদা ডাক্তারবাবুর ঘরের টেবিলে এটা রাখা ছিলো। আমি জ্বরের ডাক্তারবাবুর কাছে কাগজটা নিয়েগেলাম। তো উনি বললেন তোমাকে দিতে। মিঠি অবাক হয়ে যায়। এটা আবার কি? কোনও ‘নোট’ রাখা আছে নাকি মিঠির জন্য? বাচ্চাটার থুতনিটা ছুঁয়ে হাত বাড়িয়ে কাগজটা নেয় মিঠি। ভাঁজ খুলতেই চোখে পরে, “Dear sis, will meet soon. Bye.”
মন কেন আজ উদাস এমন! মন কেন ঘর ছাড়া?
মন দেয়ালের ছায়ার ছবি কেন পাগলপারা?
নিজের যখন কেউ ছিল না তখন ছিল সে সুখে।
ভালবাসা পেলেই তখন আপন জানতে তাকে।
দুরের স্বজন ক্ষণিক আপন, না জানিয়ে গেল চলে। স্নেহের বাঁধন কাটল যখন ভরল এ মন দুঃখে।
ভালবাসায় বাঁধন আছে, মুক্তি সেথা প্রাণভরা।
ভালবাসায় জড়িয়ে আছে জগতের প্রাণভোমরা।
সত্যি বলতে কি আজও কারোর সাথে তেমন আপন করে মেলামেশা হয়নি। এমন মমত্ববোধ আগে কখনও অনুভবে ধরা দেয় নি। এমন ভাবে কেউ তো তার ওপর ভরসা করেনি। স্নেহের ছোঁয়ায় বিশ্বাসের অঙ্গনে একটা সুন্দর সম্পর্ক আরিয়ান উপহার দিয়েছে মিঠিকে। সেই সত্য সুন্দর সম্পর্কের মাধুরীতে মনের প্রতিটা কোণ ভরে আছে। সেই সম্পর্কের তাগিদে তাকে না দেখা পর্যন্ত বড্ড অস্থির হয়ে রয়েছে মিঠি। সকালে কারা যেন আলোচনা করছিল সাদা ডাক্তার আখতার ম্যাডামের সাথে রাতেই চলে গেছে।
মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে মিঠির। চোখের পাতায় চিকচিক করছে জল। কেন এরকম হচ্ছে? অবুঝ মনকে কি করে শান্ত করবে মিঠি? কাকে বলবে ওর মন খারাপের কথা? চোখের জল মুছতে টেবিলের ওপর মুখ নামিয়ে চুপ করে থাকে। একটু দুরে অনেকের কথা কানে আসে। উঠে দাঁড়ায় মিঠি। নিজেকে নিজের মধ্যে গুছিয়ে নিয়ে বর্তমানের জন্য তৈরি হয়ে যায়।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।