ক্যাফে গল্পে রঞ্জন চক্রবর্ত্তী

রেনেসাঁসের ইউরোপ

ইউরোপের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি রেনেসাঁসের ঘটনা আছে। সেগুলির মধ্যে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীর (১৪৫০ – ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ) ইতালীয় রেনেসাঁস সব থেকে বিখ্যাত। তাই একে বলে ‘মহান রেনেসাঁস’। রেনেসাঁস কথাটিকে ১৮৬০ সালে প্রথম জনপ্রিয় করে তোলেন য়্যাকব বুর্খহার্ট তাঁর ‘Civilisation of the Renaissance in Italy’ বইটি লিখে। এখানে ‘সভ্যতা’ শব্দটি ব্যবহার করে তিনি রেনেসাঁসকে একটি ব্যাপক ব্যঞ্জনা দিয়েছেন। এর পরে ১৮৭৩ সালে ওয়াল্টার পিটার লেখেন ‘The Renaissance’ বইটি। তবে তিনি রেনেসাঁস বলতে শুধু একটি দেশের একটি যুগের শিল্প-সাহিত্যকে বুঝিয়েছেন।
কাকে রেনেসাঁস বলা হবে তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সাধারণভাবে রেনেসাঁস বলতে বোঝায় খ্রিস্টধর্মীয় ভাবনায় ঘুমিয়ে থাকা মধ্য যুগ থেকে গ্রিসের ধ্রুপদি যুগে পুনর্জাগরণ, তথা আধুনিক যুগে উত্তরণ। এই জন্য অনেকে মনে করেন রেনেসাঁসের সূচনা হল ১৪৫৩ সালে অটোমান তুর্কীদের হাতে গ্রিসের ঐতিহ্যবাহী কনস্তান্তিনোপলের পতন এবং তার ফলে গ্রিক বুদ্ধিজীবীদের সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ইতালিকে আশ্রয় নেওয়া থেকে। কেননা তার ফলে প্রাচীন গ্রিকদের ধ্রুপদী জ্ঞান ও সুন্দরতার সাধনা এবং মানবিকতার মহত্ব পুনরুদ্ধার হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জার্মানির মাইনৎস শহরে গুটেনবার্গ দ্বারা আধুনিক মুদ্রণালয় প্রতিষ্ঠা থেকেই নবজাগরণের সূচনা। কেউ কেউ ঘড়ির আবিষ্কার ও সময়ের মূল্যের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য ও আর্থিক উন্নতির সম্পর্ক বিচার থেকে রেনেসাঁসের বিকাশের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন (যেমন কার্লো কিপোলো, তাঁর ‘Clocks and Culture, Before the Industrial Revulution’ বইতে)।
রেনেসাঁসের আক্ষরিক অর্থ হল পুনর্জাগরণ। খ্রিস্টজন্মের আগে প্রাচীন গ্রিসের (বিশেষত এথেন্সের) জীবনে ইহলোকের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, ঐহিক রূপ-সৌন্দর্য, মানুষ সংক্রান্ত জ্ঞান-বিদ্যা, সাহিত্য ও শিল্পের চর্চার যে মূল্য ছিল তার পুনরুদ্ধার। ইতালির নবজাগরণের প্রাথমিক ব্যাখ্যা ছিল ধ্রুপদী জ্ঞান-বিদ্যা ও শিল্প-সাহিত্যের নতুন উৎসাহে অনুশীলন, শুধু পরলোকই সত্য এই ধারণাকে পাল্টে দিয়ে ইহলোককেও সত্য বলে স্বীকার করা, দিব্যতার সঙ্গে মানবিকতার খোঁজ। এই যুগান্তরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রেনেসাঁসের অন্যকম ব্যাখ্যাতা বুর্খহার্ট লিখেছেন – “In the Middle Ages both sides of human consciousness – that which was turned within and that which was turned without – lay dreaming or half awake beneath a common veil. The veil was woven of faith, illusion and childish prepossessions, through which the world and history were seen clad in strange hues. Man was conscious of himself only as a member of a race, people, party, family or corporation – only through some general category. In Italy this veil was first melted into air, an objective treatment and consideration of the State and all things of this world became possible.” এই বিবরণের ধারা অনুসরণ করে তিনি বইয়ের চতুর্থ ভাগের আলোচ্য বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন – ‘The discovery of the world and of man’।
বিশ্ব আবিষ্কার বলতে বোঝায় অজানা পৃথিবীকে জানার আকাঙ্ক্ষায় নতুন দেশে পৌঁছানো এবং সে দেশকে জানা। ক্রুসেডের সময় থেকেই ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ যাত্রায় রেওয়াজ শুরু হয়। আরব মুসলিমরাও বিদেশযাত্রার নজীর দেখিয়েছিল, নিজেদের সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে তারা সুদূর আরবভূমি থেকে স্পেন পর্যন্ত এসেছিল। অবশ্য প্রাচীন যুগেও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যথেষ্ট সামুদ্রিক যোগাযোগ ছিল। সে যুগে ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে দক্ষিণ ভারতীয় দেশগুলির নিবিড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। সেই বাণিজ্যে আরব সওদাগরেরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত।
ইউরোপে যখন রেনেসাঁসের সূচনাকাল তখন ইসলামের আহ্বানে আরবরা উজ্জীবিত হয়ে পারস্য উপসাগর থেকে আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জলরাশির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ইউরোপের বাজারে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির পণ্যদ্রব্যের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়। তখন ইতালি ও পর্তুগাল আরবদের প্রভাব এড়িয়ে কীভাবে ভারতে পৌঁছানো যায় তার বিকল্প পথের সন্ধান শুরু করে। এই কাজে ইতালির বণিকদের যেমন ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিল, তেমনই রোমের ধর্মযাজকদের স্বার্থ ছিল ধর্মান্তরকরণের প্রক্রিয়াকে প্রসারিত করা। কিন্তু ইতালির নতুন দেশ আবিষ্কারের প্রয়াস আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে ক্যানারিজ দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত গিয়েই শেষ হয়।
নতুন দেশ ও নতুন জলপথ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পর্তুগীজেরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। তাদের রাজা প্রথম জনের পুত্র হেনরির সমুদ্রে অভিযানের এমন নেশা ছিল যে তাঁর নামই হয়ে যায় হেনরি দ্য ন্যাভিগেটর। তাঁর প্রেরণায় পর্তুগীজরা ক্যানারিজ দ্বীপপুঞ্জ পেরিয়ে এগোতে থাকে এবং উত্তমাশা অন্তরীপে পৌঁছায়। এই অবধি এসে তারা বুঝতে পারে সামনে আরব সাগরের জলরাশি পেরোলেই ভারতে যাওয়া যাবে। এদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন ঘাটে জাহাজ ভিড়িয়ে পর্তুগীজরা যে নতুন ব্যবসা শুরু করেছিল সেটা হল দাসব্যবসা। এক দিকে বন্দুকের দাপটে কৃষ্ণাঙ্গদের খ্রিস্টান করে পুণ্য উপার্জন, অন্য দিকে ইউরোপের বাজারে কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে বেচে অর্থ উপার্জন, এটাই ছিল ইতালির প্রতিবেশি পর্তুগীজ রেনেসাঁসের স্বরূপ। ভাস্কো দা গামা যখন উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে ভারতে আসার জলপথের সন্ধানে বের হবেন তখন পোপ ষষ্ঠ আলেকজাণ্ডার বিশেষ শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেন। তার সঙ্গে এটাও বলে পাঠালেন যে জলপথ আবিষ্কার না করে দেশে ফিরলে শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড, আর সফল হয়ে ফিরলে পাবেন আশাতীত পুরষ্কার। ভাস্কো দা গামা সফল হলে পোপ তাঁর নামে জেরোনিমাস নামক স্থানে একটি মঠ উৎসর্গ করেন, তাঁকে সত্যধর্মের মহান রক্ষক খেতাব দেন এবং সম্ভ্রান্ত-বংশীয়দের মতো সাজ-পোশাকের অধিকার দেন। এর থেকে বোঝা যায় নতুন দেশ আবিষ্কারের পিছনেও একটা খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রেরণা কাজ করছিল।
ইতালিতে যখন রেনেসাঁসের জোয়ার বইছে তখন পাশের দেশ স্পেনে চলছিল ইনকুইজিশনের পালা। এর আসল লক্ষ্য ছিল সত্যধর্ম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসু বা অন্য মত পোষণকারীদের আগুনে পুড়িয়ে মারা। অন্য দিকে পর্তুগালের উদ্যোগী ব্যক্তিরা আফ্রিকার ঘাটে ঘাটে গিয়ে আফ্রিকাবাসী কৃষ্ণাঙ্গদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে বলছিল হয় আমাদের সত্যধর্ম স্বীকার করো, নয় দাস-ব্যবসার পণ্য হও, নতুবা গুলি খেয়ে মরো। মহান রেনেসাঁসের পর্বে এটাই ছিল স্পেন ও পর্তুগালের প্রকৃত ইতিহাস। ঘটনাক্রমে এই সময়েই রোমের পোপ হয়েছিলেন স্পেনের রডরিগো বরগিয়া, পোপ হয়ে যাঁর নাম হয় ষষ্ঠ আলেকজাণ্ডার। তাঁর প্রধান কীর্তি হল ১৪৯৩ সালে দেসিলাসের চুক্তিতে গোটা পৃথিবীকে স্পেন ও পর্তুগালের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেওয়া। রেনেসাঁসের তীর্থক্ষেত্র ইতালিতেই ছিল রোমান চার্চের শক্তিকেন্দ্র। সেই ১৩৭৭ সাল থেকে রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ এখান থেকেই বিশ্বের সকল খ্রিস্টভক্তদের সঞ্চালনা করেছেন।
জার্মানি এক সময় পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত ছিল। প্রকৃতপক্ষে ৮০০ খ্রিস্টাব্দে মহাপরাক্রান্ত শার্লেমান পোপের হাত থেকে রাজমুকুট মাথায় পরে এই পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। তিনি ফ্রান্সের রাজা ছিলেন, কিন্তু পোপের হাত থেকে মুকুট পেয়ে সম্রাট হয়ে যান। তিনি শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিদ্যা ইত্যাদির চর্চায় উৎসাহ দিতেন। যেভাবে পোপের হাত থেকে মুকুট পেয়ে তাঁর সাম্রাজ্য ধর্মসঙ্গত রোমান সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, তেমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় দশম শতাব্দীর ছয়ের দশকে। মধ্য ইউরোপ তখন বিদেশিদের আক্রমণে বিপদগ্রস্ত, বিশেষ করে সুদূর পূর্ব থেকে আসা মেজিয়ার নামক এক মোঙ্গল জাতির আক্রমণের জর্জরিত। তখন মধ্য ইউরোপের আধিবাসীদের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে জার্মানভাষী হেনরী দ্য ফাউলারের। তাঁর মৃত্যুর পর মেজিয়াররা আবার সক্রিয় হয়ে ইতালির মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং বিভিন্ন নগর-রাষ্ট্রেও হামলা চালায়। তখন হেনরির পুত্র প্রথম ওট্টো ইতালি তথা ইউরোপ থেকে তাদের বিতাড়ন করেন। প্রথম ওট্টোর এই কীর্তিতে মুগ্ধ হয়ে পোপ দ্বাদশ জন ৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে দেন এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ঘোষণা করেন। মহান রেনেসাঁসের সময় পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন প্রথম ম্যাক্সিমিলিয়ান (১৪৯৩ – ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ) এবং তাঁর পরে পঞ্চম চার্লস (১৫১৯ – ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দ)।
১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জার্মানভাষী অঞ্চলের অন্তর্গত মাইনৎস শহরে য়োহান গুটেনবার্গের পরিকল্পনায় মুদ্রণব্যবস্থার সূচনা হয়। ছাপাখানা আসার পরে যাজকদের পক্ষে যেমন ঘরে ঘরে বাইবেল পৌঁছে দেওয়া সহজ হল, তেমনই ফ্রানসিসকো পেত্রার্কা, জিওভান্নি বোক্কাসিও প্রমুখের সাহিত্য ব্যাপক পাঠকসমাজ লাভ করল। এই ঘটনা রেনেসাঁসকে বিশেষ সামর্থ্য জোগায়। এ জন্যই মার্শাল ম্যাকলুহান, অ্যান্টনি গ্রাফটন প্রমুখ অনেকে মনে করেন ১৪৬০ থেকে ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালই রেনেসাঁসের যুগ।
মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলনে ইউরোপে বিদ্যাচর্চার খুবই বিস্তার হয় একথা সত্য, কিন্তু টাকার উল্টো পিঠটাও দেখা দরকার। ১৫০১ সালে পোপ চতুর্থ আলেকজাণ্ডার মুদ্রণব্যবস্থার উপর চার্চের নিয়ন্ত্রণ জারি করেন। জার্মানিতেও ছাপাখানার উপর পাহারাদারি বসানো হয়। ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় হেনরি ১৫৪০ সালে আইন করেন যে সরকারী অনুমোদন ছাড়া কোনও কিছুই ছাপা যাবে না, অন্যথায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। ইংল্যণ্ডে রাণী এলিজাবেথ মুদ্রণালয়ের জন্য লাইসেন্স প্রথা চালু করেন এবং সেই লাইসেন্স শুধু লন্ডন, অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
এবার রেনেসাঁসের আঁতুড়ঘর ইতালির দিকে তাকানো যাক। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হন হোহেনস্টাউফেন বংশের ফ্রেডারিক বারবারোসা, যিনি প্রথম ফ্রেডেরিক নামে পরিচিত। এই বংশের পতনে ইতালির পরিস্থিতির পরিবর্তন হল। পোপের অধীনস্থ অঞ্চলগুলি ও নেপলসের রাজত্ব বাদ দিয়ে বাকি অংশ যাদের হাতে গেল তাঁদের ঐতিহাসিকেরা ডেসপট বলেন। সাধারণত এঁরা ছিলেন এক একটি নগরের ধনী ও প্রভাবশালী বণিক পরিবার। এই ডেসপটেরা সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি ও মারামারি করতেন। পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে চলত অর্থ উপার্জনের জন্য বাণিজ্যিক প্রতিযোগীতা। ইংল্যন্ডের রেনেসাঁসের অন্যতম প্রতিনিধি উইলিয়ম শেক্সপীয়রের রোমিও জুলিয়েট নাটকে আমরা এর প্রতিচ্ছায়া পাই। তা ছাড়া ১৪৩২ সালে ইতালীয় মনীষী লিয়োন বাত্তিস্তা আলবর্তি লিখিত ‘On the Family’ বইটিও উল্লেখযোগ্য। এখানে তিনি বলেছেন – “Wealth, if it is used to help the needy, can gain a man esteem and praise. With wealth, if it is used to do great and noble things and to show a fine magnanimity and splendor, fame and dignity can be attained.”
বিভিন্ন বণিক ও বিত্তবান সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় রেনেসাঁস সম্পন্ন হয়েছিল। বুর্খহার্ট বলেছিলেন রেনেসাঁস মানুষকে আবিষ্কার করেছে। ১৯৫২ সালে মাইরোন গিলমোর ‘The World of Humanism 1453-1517’ বইটি লিখে রেনেসাঁসের বিশ্বকে মানবিকতার বিশ্ব বলেছেন। নবজাগরণের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন নিকলো দি বার্নাদো মেকিয়াভেলি, যাঁর প্রশংসার মার্কসও মুখর হয়েছেন। স্বাধীনতা কথাটির একটি অংশ যদি দেশের স্বাধীনতা হয় তাহলে অন্য অংশ হল চিন্তার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। রেনেসাঁসের বৌদ্ধিক স্বাধীনতা ও মহৎ মানবিকতা সম্পর্কে এর ব্যাখ্যাতারা সকলেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ইউরোপের মহান নবজাগরণ সম্পর্কে সাধারণভাবে বলা যায় অবিশ্বাস্য রকমের সৃষ্টিশীলতা ও একান্ত সৌন্দর্যসচেতনতা এর কেন্দ্রে রয়েছে, যার কথা ওয়াল্টার পিটার তাঁর বইতে বলেছেন। এই আন্দোলন অবশ্যই কিছুটা পৃথিবীকে জানবার কৌতুহলে অনুপ্রাণিত ছিল।
রেনেসাঁস পর্বের শেষের দিকে ইউরোপের চেহারা কেমন ছিল তা বিশ্লেষণ করলেই এই যুগের অবসানের কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠবে। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের পীঠস্থান জার্মানি তখন সম্রাটের অভিষেক প্রসঙ্গে পোপ বড় না রাজা বড় এই বিতর্কে উত্তপ্ত ছিল। ফ্রান্স তখন শতবর্ষের যুদ্ধ করে প্রায় বিধ্বস্ত, তার ওপরে প্রথম ফ্রান্সিসের রাজত্বকাল পঞ্চম চার্লসের সঙ্গে কলহে ভারাক্রান্ত। আর মহান রেনেসাঁসের তীর্থক্ষেত্র ইতালির কোনও ঐক্যই ছিল না। দেশটা তখন মেদিচি, লমবার্ড, ভিসকোন্তি, গুয়েলফ্, ঘিবোল্লিন, স্ফোরৎসা প্রভৃতি পরিবারের বিবাদে বিদীর্ণ। তা ছাড়া ইতালীয়দের অধিকাংশই ছিল পোপতন্ত্র শাসিত। এটাই ছিল পশ্চিম ইউরোপের প্রকৃত চেহারা। কোনও রাষ্ট্রীয় সংহতি ছিল না বলেই ধর্মযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ স্পেনের কাছে ইতালি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। সেই সঙ্গে ইতালীয় রেনেসাঁসের গরিমাও শেষ হয়ে গেল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।