মার্গে অনন্য সম্মান রীতা চক্রবর্তী (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১৩১
বিষয় – ভৌতিক / বসন্তের শেষে / কালবৈশাখী

ঝড়নামা

তোমার ওই চোখের গভীরে লুকিয়ে আছে আমার সাধনার তপোবন।
ছায়া সুনিবিড় কাজলকালো ঘনপল্লবে যেন স্নিগ্ধ আবেশ জড়িয়ে আছে।
সেখানে জুড়াতে চেয়েছিলাম আমার রোজনামচার কয়েকটি তপ্ত প্রহর।
ভেবেছিলাম ওখানেই আছে আমার প্রাণের সুখ।
সে চিরশান্তির দেশে হয়তো কখনো ঝড় ওঠেনা।
কখনও ভাঙেনা শাখা ফলন্ত পল্লব।
তুমি আমার ভাবনার ভুলটা দিলে ধরিয়ে।
আসলে তোমারোতো ছিল ফুলেফলে সাজানো আপাত শান্তির পিছনে কিছু কাঁটার যন্ত্রণা।
তুমিও মনেপ্রাণে বুকপেতে চেয়েছিলে একটা উদ্দাম ঝড়কে।
যে তোমার শুকনো ডালপালার বোঝাকে ঝেড়ে ফেলে দেবে অনায়াসে।
তাইতো প্রচন্ড রোদ যখন পিচরাস্তা গলিয়ে দিচ্ছে
তখনও তুমি স্তব্ধ।
নীরবে সয়ে গেছ সব তাপ একগ্র সাধকের মতো।
সিদ্ধ হল তোমার সাধনা।
হঠাৎই কালো মেঘের পাহাড় কোথা থেকে ছুটে এসে দখল করে নিল রোদেলা আকাশটা।
দিকে দিকে বেজে উঠল ঝড়ের দুন্দুভি।
মহাকাল দেখা দিলেন রুদ্র সাজে হুহু হুল্লোরে।
প্রাচীন বুড়োবটের শিকড়ে ঝুড়িতে শাখা -প্রশাখায় ছড়াল কালবৈশাখীর থরথর নাচন।
পাগলা হাতির মতো মাথা দুলিয়ে আমজামের বনে ফলগুলি বোঁটা ছিঁড়ে ঠাঁই পায় মাটির কোলে।

ঝড়ের দাপটে উড়ে গেল কত জরাজীর্ণ চারচালা।
একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের গুঁড়ি আলগা হয়ে পরল দুরের কুঁড়েঘরের মাথায় ।
নীড়হারা পাখি সমস্বরে চিৎকার করে ডানামেলে উড়ে যায় ঝড়ের হাওয়ায়। কালবৈশাখীর তান্ডবে উত্তাল হয়ে ওঠে সাগরের ঢেউ। সরোষ গর্জনে আছড়ে পরে বার বার তটের বুকে।
বিপর্যস্ত বনানীর এদিক সেদিকে পরে থাকে শাখা প্রশাখা লুন্ঠিত রমণীর মতো।
মন্থনশেষে অঝোর ধারায় মাটিতে নতুনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে শান্ত হন প্রলয়েশ অবশেষে।
পৃথিবীকে প্রাণসুধা দিয়ে উপহার
ফিরে যায় মেঘমালা বিজয়ীর বরমালা নিয়ে ।
সকল আঘাত সয়ে আছ তুমি দাঁড়িয়ে ভিতটুকু আঁকড়ে।
পাতার হাসির সাথে শান্তির বাতাসে লিখে দিতে নতুন প্রজন্মের আগমনী বার্তা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।