|| বাইশের বাইশে শ্রাবণ একটু অন্যরকম || বিশেষ সংখ্যায় রীতা চক্রবর্তী

বাইশে শ্রাবণ

(আঞ্চলিক ভাষায়)

লমস্কার!
সকল গুরুজনদি’কের গোর লাগি।আইজ বাইশে শারাবন।
ইস্কুলের ছার বইললেক্ আইজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পয়ান দিবস। তাথে আইজ উয়ার ল্যাখা কবিতা – গানের অনুষ্ঠান কইত্তে হবেক।আমার নাম রবীন্দনাথ বাউরি কিনা, তাই ছাড় বুইললেক তুই যায়েঁ কিছু শুরু করগা। তাথেই আমি আইলোম তুমাদি’কে কিছু শুনাবার লাইগ্যে। আর কি কইরবো!
ছাড়ের পাশে শুনিচি রবিঠাকুর ছুটকালে ইস্কুলে যেইতে চাইথনা। ইস্কুলের মাস্টার ছুটোছেলেগালাকে খুব পিটাইঁথো। তা দেইখেপদে রবিঠাকুরের খুব ঘিন আইসথো। উয়ার মনের মইদ্যে তখন রিষ চাইপে যেইথো। সইন্ঝা কালে ঘরকে আইসে উ তখন বইখাতাগালাকে ছাত্তর বানায়িঁ খুব ঠ্যাংগাইথো।আসলে মনে মনে উ থ তখন মাস্টারগালাকেই ঠ্যাংগাইথো কিনা! রবিঠাকুরের মত আমারও ইস্কুলের পড়াটো মোটেই ভাল লাগেনা। তবু বাপটো এত সাধ কইরে নামটো রেইকেচে, উয়ার মানটো রাইখবার লাইগে মাজেমইদ্যে ইস্কুলে আইসথে হয়। আর অখন এই মাস্টারটো বুইল্লেক তাই তুমাদিকে কিছু শুনাইথে আইলোম।

মনি, টুনি, বাপন, তুরা থ্রি কেলাশে পইর্ছিস।
তুরা সকলে তালগাছ কবিতাটো পইড়েইছিস। আর পথেঘাটে, আগানেবাগানে দেইখেওছিস। কেমন ঢ্যাংগা পারা, লয় ! আর এই ইস্কুলের ফাইব’তকো সব ছিলাগালার মইদ্যে মু তালগাছ আছি। রবির কথা শুনে ছেলেমেয়েরা হো হো করে হেসে ওঠে।
চুপ যা কেনে, শুন মুর কথাটো।
ওই তালগাছটো যেমুন কইরে ইয়ার মাথাটো ইধার উধার কইত্তে থাকে মুরও না সারাদিন তেমনি কইরে ইধার উধার কইত্তে খুব মজা লাগে।কিন্তুক সইন্ঝা কালে ঘরকে একলা থাইকতে ইতটুকো মন লাগেনা। আগে বাপটো পচাই টাইনে আইসে মা’টোকে বড্ড পিটাইঁথ।উয়ার কান্না মু সইতে লাইরথোম। কতবার যায়েঁ বাপের পা’ দুটা জড়ায়েঁ ধইরেছি কিন্তুক আটকাইতে পারি লাই। মা’টো আমার মইরেই গেলেক মাইর খায়েঁ খায়েঁ। অখন আমার রেইতে ঘরকে যাইথে মন লাগেনা। তা’হইলেই কি! যেইতেও হয় থাইকতেও হয়। রবি ঠাকুরেরো তো মা টো এমনি এক রেইতে মইরেছিল- বলতে গিয়ে এগারো বছরের মাতৃহারা রবির গলার স্বর কান্নায় বুজে আসে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করে, “তবে রাইতটো পিরাইং গেলে ফির ই’বাগান, উ’লদীপার চইলতেই থাকে। আগে মা’আইসে ধইরে লিয়ে যাইথ। অখন আর কেউ খুঁজে না মু’কে। মু’তো অখন হরবখত ফুত্তি কইরছি। কত মজা ছড়ায়ে রইংছে খুলা মাঠে। ইধার উধার, আগান বাগান ঘুইরে গাছে উঠ, আঞ্জীর হইল লকেট হইল – পাইরে লাও। জলকে লাইমে যাও, কমলকাঁকড়ি তুইলে আনো, কত মজা আছে। ইস্কুলে বদ্ধ থাইকতে মুর বড্ড কষ্ট লাগে।
ই বুড়া রবি ঠাকুরেরো মা ছিল না আর মুরও লাই। উয়ার যেমুন মুরো তেমুন।
এইবার মজার কথাটো শুন কেনে! ই সাদা দাড়িবালা বুড়া হইল বিশ্বকবি।
তুরা রবিঠাকুরের গানগালা সকলেই শুইনেছিস, বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা “,” সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান”-এই সকলগুলা। হিঁ হিঁ..
বুড়ার বুদ্দি দেখো কেনে?
বিপদে যদি রইক্কা না কইরবেক তো উয়াকে ডাইকবেক কেনে লুকে? লাও ঠ্যালা! বুজো কেনে কেমন পাগলাবুড়া!
আবার বুলছে কি, ‘সঙ্কোচ করাটো লিজের অপমান’.. ই টো শুইনলে আমার প্যাটের মইদ্দে গুরগুরকরে। অখন ধরো মুরা সকলে আইশপাইশ খেলচি, দলে মিয়াঁগালাও রইংচে। ক্যাও ধাপ্পা দিলেক, ধরো কুনো মিয়াঁ, তো তাখে জড়াইং ধইত্তে সঙ্কোচ হবেক লাই? বল কেনে! উয়ার এই ল্যাখ্যাটো দেইখে এইটো বুজিচি কি বুড়া কুনোদিন আইশপাইশ খেলেক নাই। কিন্তুক বুড়ার গান গালা যখন দুর হইথে শুইনথে পাই বড্ড দুক্কু হয় মুর। কিশোর কুমার ওই যে গানটো গাইলেক হে,” দিনের শ্যাষে ঘুমের দ্যাশে”.. সত্যি কইরেই বুলছি বিশ্বাস যা কেনে মু খুবই কান্দি।
এই সকল কেমুন কইরে লিখথো সেইটো বুড়া বাঁইচে থাইকলে যায়েঁ সুধায়েঁ আইসথোম।অখন যেঁ লাই তাখেঁ লিয়ে আর কি বুইলবো। তু’দিকের সকলকার জইন্নে পেন্নাম দিলোম আর ছুটো ছুটো মানুষগালার জইন্যে ভালোবাসাটো দিলোম। আসি কেনে কেমুন। লমস্কার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।