গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৯)

নীল সবুজের লুকোচুরি

…তাই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে তোর সাথে যেদিন দেখা হবে সেদিনই আমি সবকথা খুলে বলবো তোকে। তোর আমার মধ্যে কোনো লুকোচুরি থাকাটা উচিত নয়। আর হ্যাঁ, আমাদের দুবছরের একটা ছেলে আছে।”

সুমিতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। হঠাৎ করে কে যেন ওর গলা টিপে ধরেছে। বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ক্ষণিকের জন্য ওর মুখটা কালো হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,” বিয়ে করেছিস?”
—হ্যাঁ, সেটা বলতে পারিস, কাগজে কলমে হয়েছে।
—তোর বাড়িতে সবাই জানে?
—-হ্যাঁ, বাবা মা কে জানিয়েছি।
—ছেলের কি নাম রেখেছিস?
—-” অরমান।”
—” আর কিছু বলবি কি? নয়তো এবার চল। বাড়ি ফিরতে হবে তো।”
—“তুই কি রাগ করলি?”
—-“তোর কি তাই মনে হচ্ছে?”
—-” আমার মনে হচ্ছে তুই হয়তো কিছু বলতে চাইছিস, কিন্তু বলছিস না। তোর কি আমাকে বলার মতো কোনো কথা নেই? আমি কি তোর মনের কোনো কোনায় এতটুকুও নেই? এত বছরে একবারও যোগাযোগ করলিনা, কখনো কি তোর জানতে ইচ্ছে করেনি আমি কেমন আছি? কি করছি? কেমন ভাবে কাটছে আমার? আমাকে কি একেবারেই ভুলে গেছিস?”
–“কি আর বলবো! তুই তো তোর দুঃখের কথা বলেই খালাস। যে অভিযোগগুলো আমার ওপর চাপিয়ে দিলি সেগুলোতো আমিও একইভাবে করতে পারি। তবে কি জানিসতো কিছু কিছু সময় আসে যখন শুধুমাত্র সেই মানুষটাকেই দরকার হয়। হাওয়ায় ভেসে আসা কয়েকট সাজানো কথা মুহূর্তের প্রয়োজন মেটাতে পারে না। ঠিক সেজন্যই কতগুলো অর্থহীন শব্দের বোঝা চাপিয়ে আমি তোকে দোষী করতে চাই না। তাই আজ আর আমার বলার মতোও কিছু নেই। আমাকে কাল সকালেই বেড়িয়ে যেতে হবে। পরে নিশ্চয়ই তোর সাথে দেখা হবে। তখন তোর প্রেমের বাকি গল্পটা শুনব কেমন। এখন বাড়ি ফিরতে হবে, চল।”
রাগ, দুঃখ, অভিমান সুমিতাকে এমনভাবে ঘিরে ধরেছে যে সেই মুহূর্তে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আয়ানের সামনে থেকে দুরে চলে যেতে চাইছে। ওর স্বপ্নের সাজানো বাগান যেন এক মুহূর্তের ঝড়ে তছনছ হ?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।