সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১০)

পিরিচ পেয়ালার ও একটি সন্ধ্যা
পিরিচ পেয়ালার ঠুংঠাং- এ ভরে ওঠে সন্ধ্যা, সাথে ভীমসেন মেজাজী আড্ডা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা ভারতটা ঘুরে ফেলি কিংবা বলা কি যায় গোটা পৃথিবীটাই হয়ত ঘুরে ফেলি আমরা আড্ডা দিতে দিতে৷ আর বিষয়? সম্পর্ক থেকে রসায়ন, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি কোন বিষয়ে আলোচনা হয় না বলুন তো এই আড্ডায়! যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বারেবারে ধরা পড়ে পিরিচ পেয়ালার এই সন্ধ্যার আড্ডায়৷
তেমনই এক সন্ধ্যায় স্মৃতি নিয়ে বাঁধল গোল৷ কোনটা ভুল আর কোনটা অন্যায় তাই নিয়ে চলল বিস্তর তর্ক৷
একেবারে চুলচেরা বিচার৷ নিত্তি মেপে এগানো৷ সমানুপাত ব্যস্তানুপাত কিছু কি বাকি থাকল? আমার আবার হিসেব কষাকষির এমন বহর দেখলে কেশব চন্দ্র নাগের কথা ভারি মনে হয়৷ আর ঐ বাঁদরটার কথা
তেল মাখা ডান্ডায় কিছুটা উঠছে আবার স্লিপ করে ততটাই নেমে আসছে৷
কিছু কিছু দিন স্মৃতি নড়ে উঠলে কবিতারা জেগে ওঠে৷ তখন শুধু কবিতার ঘরবাড়ি, কবিতায় বাস৷
আজ কিছু অগোছালো হাওয়া এলোমেলো করে দিয়ে গেল আমায়। বিকেলের জমিয়ে রাখা হলুদ খামেরা বাগানের ঘাসগুলোর ডগায় প্রজাতি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গোপন কথাদের ছায়া জিরিয়ে নিতে থাকে, আমার ঠিক পাশটাতে৷ আমি বোগেনভেলিয়ার গাছটার দিকে তাকিয়ে আমার পিঠে, আমার ঘারে তোমার গরম নিঃশ্বাস টের পাচ্ছিলাম৷ তোমার অনুপস্থিতি, গাঢ় হয়ে তোমার উপস্থিতি প্রমাণ করছিল৷ সামনের ছাতিম গাছটাতে পাখি দুটো, নীলাভ আভা ছড়াচ্ছিল৷ ওদের বাসা তখন অমরাবতী৷ প্রতিবেশী চাঁদ তখন চুইয়ে পড়ার অপেক্ষায়৷
আমি চিরকালই কস্তুরীর খোঁজে হরিণের পেছনে ছুটেছি৷ সাজানো ঘর, আতরের বাড়াবাড়ি দেখে তীব্র অনীহায় পাহাড়ের কাছে ছুটে গেছি, কষ্টের কথা জানাতে৷ অগোছালো জীবন, অগোছালো মানুষের প্রেমে পড়েছি বারবার৷ তোমার একমাথা উস্কোখুস্কো চুল, না-কামান দাড়ি, দেওয়ালে টাঙানো সাঁওতালি মেয়েটার মত আমাকে অসহায় করেছে৷ সম্মোহনের শিকে ছিঁড়বার নয়! সামনের গাছটায় এখন চাঁদ এসে মেহফিল জমিয়েছে৷
রাত যত ভারি হয়, তোমার স্মৃতিগুলো আলো-আঁধারিতে কখনও অরণ্য, কখনও জলপ্রপাত হয়ে ওঠে । নিঝুম বট গাছটার ডালে বাহারি মেজাজে, পেঁচাটা শরীরী ভাষায় ডেকে চলে বিলম্বিত লয়ে । দূর থেকে ভেসে আসা গাভিনের আকূতি রাতকে স্নেহময়ী করে ৷ ঘরের আগল খুলে উঠোনে এসে দাঁড়াই, রাতের শরীরে আঁশটে স্বপ্নরা তোমার ঘ্রাণে মশগুল ৷ ঘাটের কাছটাতে জোয়ারের জলে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ৷ তোমার অনুষঙ্গ গাঢ় হয় ক্রমশ ৷ দূরে কোথাও এসরাজের সুরে বেজে ওঠে সমর্পণ৷ আমি মুহূর্তের উদযাপন করি ৷৷
আসছে সপ্তাহে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডায় আবার কী নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাঁধে দেখি! চিন্তা করবেন না, একেবার সেই বিষয়টা নিয়েই চলে আসব আগামী সপ্তাহে ” পেয়ালা পিরিচ ও একটি সন্ধ্যা”-র পরের পর্বে৷ ভালো থাকুক সকলে৷
*বিঃদ্রঃ পেয়ালা পিরিচ সহযোগে সন্ধ্যায় আপনিও জমিয়ে আড্ডা মারুন।