নভেলা গল্প হলেও সত্যি-তে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ধারাবাহিক (রু)

— রেমি আছে?

— না, দাদাবাবু তো নেই। তবে দিদিমণি আছেন। ডেকে দেব?

— হ্যাঁ, বলবেন পলাশ এসেছে।

— আপনি ভিতরে এসে বারান্দায় বসেন। আমি ডাকছি।

লাল মেঝেওলা টানা বারান্দা। জুতো খুলে সেখানে বেঞ্চে গিয়ে বসল পলাশ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ইন্দ্রাণী হাজির। হাসিমুখে বলল — একটা খবর দিয়ে তো আসতে হয়। মোবাইলে ফোন করে এলে কি খুব অসুবিধে হতো?

— আরে না না। আসার কোনো ঠিক ছিল না। হঠাৎই মনে হল তাই চলে এলাম। খুব অসুবিধায় ফেললাম তো?

— অসুবিধা বলে অসুবিধা! একেবারে গভীর সমুদ্রে পড়ে গেলাম। যাহোক মনে করে এসেছ এতেই খুশি। উপরে এসো।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে জানতে চাইলাম – রেমি কোথায়? এখনো ফেরেনি?

— আজ্ঞে না পলাশ বাবু। তিনি আপাতত ভাগলবা।

— মানে? কোথায় গেছে?

— তোমার রেমি গতকালই দিল্লি গেছে। সেখানে হিল্লিদিল্লি করে বেড়াচ্ছে।

— যাহ। সত্যি ভুল হয়ে গেছে। আমার ফোন করে আসা খুব উচিত ছিল।

— কেন, আমি কি তোমার আহারাদির যোগাড়যন্ত্র করতে পারব না? নাকি আমার সঙ্গে সময় কাটাতে শুধুই বোর হবে?

— আহা, তা কেন। কিন্তু ও সবসময় দেখা হলেই এখানে আসতে বলেছে বারবার। আর ওর সাথেই দেখা হল না। যাহোক ফিরবে কবে?

— সে এখনো সপ্তাখানেক। কিন্তু তুমি যখন এসেই পড়েছ তাহলে দু’দিন থেকে যাও। খুব অসুবিধা হবে না।

— তা হয় না। আমি এমনিতেই কিছুক্ষণ পরে ফিরব বলে ঠিক করে এসেছি।

— মিথ্যেটাও গুছিয়ে বলতে পার না। এখনই বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে। তুমি এই সময় এসে গল্পগুজব করে আবার নাকি ফিরে যাবে!

— হ্যাঁ, তাতে সমস্যা কী! বাস তো পাবো।

— অনেক হয়েছে। ব্যাগটা রেখে টয়লেটে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নাও। আমি রতন দা-কে বলছি গেস্টরুম খুলে দিতে। গিয়ে দ্যাখো তোমার ভাড়া বাড়ির চেয়ে খুব খারাপ কিনা!

পুরনো আমলের বাড়ি যেমন হয় আর কী! দোতলায় চার-পাঁচটা ঘর। একেবারে কোণের ঘরটি গেস্টরুম। আকারে বেশ বড়সড়। ডবলবেড পাতা। এটাচ বাথরুম। দক্ষিণের জানলা খুলে দিলে অনেকটা খোলা জমি। সন্ধের মৃদু আলোয় এখন বাইরে সব অস্পষ্ট। তবু চারপাশে প্রকৃতির নিবিড় স্পর্শ বেশ অনুভব করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইন্দ্রাণী এসে রতন দা-কে দিয়ে কাচা বেড কভার, পিলো কভার, তোয়ালে সব দিয়ে গেছে। বড় বোতলে খাবার জল রেখে গেছে টেবিলে। আলুর বড়া, নারকেল আর পিঁয়াজ কুচি দিয়ে মুড়ি মেখে নিয়ে এসেছে ইন্দ্রাণী। সাথে এক ফ্লাক্স চা।

রেমি দিল্লি গেছে একটা আর্ট ওয়ার্কশপে। তাই এই কদিন ইন্দ্রাণী আর খোয়াইতে যাচ্ছে না। এখানে বাড়িতে রেমির বৃদ্ধ বাবা আর রতন দা আছে। প্রায় বছর ষাটেক আগে অ্যাঁন্দ্রে ফ্রান্স থেকে শান্তিনিকেতনে আসেন কলাবিভাগে নবীন শিক্ষক হিসেবেই। তখন তাঁর বয়স প্রায় তিরিশ। এখানকার পরিবেশের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে পড়েন যে আর দেশে ফিরে যাওয়া হয়নি। এক বাঙালি ছাত্রীকে বিয়ে করে স্থায়ী ভাবে থেকে যান। তিনিই সেইসময় মহুলিতে জমি কিনে বাড়ি করেন। রেমির সতের বছর বয়সে ওর মা মারা যায়। তখন থেকে বাবাই তার অবলম্বন। অবশ্য আ্যাঁন্দ্রে এখন একেবারেই শয্যাশায়ী। তাই রতন দা তাঁর ভরসা। মুড়ি খাওয়া শেষ করে চায়ে চুমুক দেয় দুজনে। ইন্দ্রাণী বলে — এবার তুমি একটু রেস্ট নাও। এই দেওয়াল আলমারিতে কিছু বইপত্র আছে। পড়তে পারো। আমি রান্নাঘরে একবার ঘুরে আসি। রতন দা একা সব পারবে না। বাবাকে আবার খাইয়ে দিতে হবে। অনেক কাজ।

বিশ্বভারতীর পুরনো পত্রিকা বেশ কিছু ছিল র‍্যাকে। তারই পাতা ওল্টাতে লাগলো পলাশ। গত শতাব্দীর ছয়-সাতের দশকের বই সব। সচরাচর এখন বাইরে চোখে পড়ে না এসব। বাড়িতে মা’কে ফোন করে নিল একবার। বাবার ডান চোখের ছানিটা এবার কাটাতে হবে। নেক্সট উইকে বাড়িতে যাওয়া দরকার। এরমধ্যে আবার সুমি ফোন করেছিল। ওদের কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য একটা কবিতা লিখেছে। পলাশকে একবার দেখিয়ে নেবে তাই। কিন্তু আজ ও ফিরবে না শুনে একটু ঠোঁট ওল্টালো। মেয়েটার মনে কী আছে কে জানে! সুমিকে এমনিতে খারাপ লাগে না পলাশের। দেখতে শুনতে মন্দ নয়। বড় কথা মেয়েটা ভীষণ সহজ সরল। কিন্তু তাবলে পলাশের সাথে মানসিক ভাবে জড়িয়ে পড়লে মুশকিল। সমীর বাবু বা তার স্ত্রী বেশ গোঁড়া। সুমির সাথে বয়সেরও বেশ ফারাক। তাছাড়া পলাশের এখুনি বিয়ের পিঁড়িতে চড়ে বসারও খুব ইচ্ছে নেই। একত্রিশ বছর চলছে। আরও দু-চার বছর হাওয়া খেয়ে বেড়াবে। তারপর ইচ্ছে হলে করবে নতুবা এই একলা থাকাও কম আনন্দের নয়।

সাড়ে আটটা নাগাদ রতনদা ডাকতে এলো – দাদাবাবু চলেন। বৌদি ডাকছে আপনাকে। খেতে হবে এবার।

একবার টয়লেটে ঘুরে এসে রতনদা’র সাথে এক তলায় ডাইনিং রুমে গেল পলাশ। ভাত বাড়ছে ইন্দ্রাণী। পলাশকে দিয়ে ও নিজেও বসে পড়ল। বলল – আজ আর বিশেষ কিছু খাওয়াতে পারলাম না অতিথি মহাশয়কে। এই দিয়েই চালিয়ে নাও। কাল দেখা যাক কতদূর কী করা যায়।

ভাত, ডাল, আলুভাজা আর রুই মাছের কালিয়া। তরিবত করেই খেতে লাগলো পলাশ। দুপুরে অফিস ক্যান্টিনের থেকে এ অনেক ভালো। রেমি থাকলে কী কী কান্ড করে বসতো তাই বলছিল ইন্দ্রাণী। পলাশ জিজ্ঞেস করল- কাকাবাবু মানে রেমির বাবা কোথায় থাকেন?

— উনি তো বিশেষ ওঠানামা করতে পারেন না। এই একতলার ঘরেই থাকেন। রতন দা রাতে ওখানেই শোয়। কখন কী দরকার হয়।

— ও আচ্ছা। তুমি রেমিকে ফোন করেছিলে? আমি তো করে লাইন পেলাম না।

— আমিও পাচ্ছিলাম না। ও নিজেই করেছিল একটু আগে। তোমার আসার খবর দিতে খুব আপসোস করছিল।

খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো পলাশ। ইন্দ্রাণী বলল – তুমি যাও। আমি সব গুছিয়ে উপরে যাবো। ঘুমিয়ে না পড়লে গল্প হবে খানিকক্ষণ।

এত তাড়াতাড়ি সাধারণত ঘুমোয় না পলাশ। অন্তত এগারোটা বাজে শুতে শুতে। কিছুক্ষণ পরে ইন্দ্রাণী এলো উপরে। ইতিমধ্যে গা ধুয়ে শাড়ি চেঞ্জ করেছে। পলাশ ওর মেয়ের কথা জানতে চাইছিল। সেই প্রসঙ্গেই পুরনো কথা সব উঠে এল।

ইন্দ্রাণীর ইতিপূর্বে বিয়ে হয়েছিল কম বয়সেই। কলা ভবনের এক সিনিয়র দাদার সাথে। বছর চারেক স্থায়ী সেই সংসারজীবনের প্রমাণ মেয়ে মৃত্তিকা। তারপর পারস্পরিক অশান্তি, ডিভোর্স ইত্যাদি। এরপর কয়েক বছর একা একাই থাকা। ইন্দ্রাণীর বাবা ওর বিয়ের পরপরই মারা যান। আর ডিভোর্সের কয়েক বছর পরে মা’ও চলে গেলেন। সেই সময় তীব্র ডিপ্রেশন চলছিল ওর। তখনই রেমির সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে তখন খোয়াইতে স্টুডিও করে ইন্দ্রাণী। আর রেমির সাথে একসঙ্গে থাকাও শুরু হয়। আপাতত বছর তিনেক এভাবেই চলছে। পলাশ জিজ্ঞেস করল- তাহলে প্রথম প্রোপজ করল কে? তুমি না রেমি?

— দূর। ও আবার প্রোপজ করবে কী! ওসব ভাবনাই ওর মধ্যে নেই। বয়সেই বড় হয়েছে। রেমির কোনও ম্যাচুরিটি নেই এখনো। আর তাছাড়া আমরা কিন্তু প্রথাগত বিয়ে করিইনি আজও। দুজনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। তাই একসাথে আছি। তুমি চাইলে একে লিভ টুগেদারও বলতে পারো। যেদিন আবার অন্য রকম মনে হবে ছিটকে যাবো।

— কেন বাজে কথা বলছ? আমি তো দেখি তোমরা দুজন জোড়া শালিকের মতো জুড়ে জুড়ে থাকো সব সময়।

— দ্যাখো, আমি একবার ঘরপোড়া মানুষ। প্রথমবার সবার চোখেই কিছু মায়া কাজল থাকে। খুব আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় সবকিছু। সেই বাঁধন একবার কেটে গেলে কাজল মুছে যায়। তারপর যতই প্রসাধন লাগাও না কেন সেই মন আর ফেরে না।

ঘরের পরিবেশটা বদলে গেছিল কথায় কথায়। চুপ করে বসেছিল দুজনেই। নীরবতা ভেঙে ইন্দ্রাণীই মুখ খুলল আবার — একবার সবকিছু হারাবার পরে ওই ভয় অনেকটা কেটে যায়। মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে। নিজের হাত নিজেই চেপে ধরতে শেখে। এরপর যত বন্ধন আসুক, আবেগ আসুক, ভালোবাসা – দুঃখ – বেদনা – আনন্দ আসুক না কেন সেই কাঁচা বয়সের নরম মন আর থাকে না। সেই প্রবল বন্যার জলে ভেসে যাওয়ার দিন আর কিছুতেই ফিরে আসে না। বাদ দাও, তুমি এসব বুঝবে না এখন।

— তুমি তো সব বুঝে বুঝে একেবারে বুড়ি হয়ে গেছ!

— তা প্রায় ছত্রিশ বছর বয়স হল। তোমার থেকে পৃথিবীকে কিছুদিন বেশিই দেখেছি। এবার তোমার কথা শুনি। পলাশ বাবুর এমন ঘা কিছু আছে নাকি?

— না না। পড়া আর খেলাধুলো করেই খরচ করে ফেলেছি সব বয়স। আঘাত করার বা পাওয়ার মানুষ খুঁজে পাইনি এখনো।

— হুম, তাই বুঝি! দেখি আমার দিকে তাকাও সোজা। চোখ দেখলে আমি কিন্তু সব বলে দিতে পারি।

— ওরেব্বাবা! লাস্টে ভৈরবীর খপ্পরে পড়লাম দেখছি।

— নাহ্, তোমার জীবন বেশ স্বচ্ছ। সাধারণ ওঠাপড়া আর স্বজন বিয়োগ ছাড়া অন্যরকম বেদনাবিধুর পালা তেমন নেই দেখছি।

— ভৈরবীর দক্ষিণা কত দিতে হবে শুনি!

হেসে ফেলল ইন্দ্রাণী — থাক, দক্ষিণা নিলে ভবিষ্যৎবাণী সফল নাও হতে পারে। যাইহোক রেমি থাকলে খুব আনন্দ হতো। কী আর করা যাবে। খেতে অসুবিধা হয়নি তো আজ?

— একেবারেই না। তবে রেমির জন্য একটা জিনিস এনেছিলাম। এখন সেটার সদব্যবহার করা যাবে কী করে?

— কী জিনিস শুনি…

— এক বোতল হুইস্কি। মাঠপুকুরে আর ভালো কোয়ালিটি পাবো কোথায়… ওই কাজ চালানো জিনিস আর কি!

— ঠিক হ্যায়। রেখে দাও তোমার কাছে। কাল সন্ধেবেলা দুজনে মিলে সাবাড় করব।

— মানে! আমি আজই চলে যেতাম। তুমি জোর করলে তাই থাকা। কাল অবশ্যই ফিরতে হবে আমাকে।

— আগেই বলেছিলাম আমি বোর করব তোমাকে। বেশ চলে যেও।

কপট রাগের মুখভঙ্গি দেখে অপ্রস্তুত হলো পলাশ। ওকে আমতা আমতা করতে দেখে ইন্দ্রাণীই বলল — কাল এখানে থেকে পরশু সকালে সরাসরি অফিস গেলে কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না স্যার।

মৃদু হেসে ফেলল পলাশ। ওকে দেখে ইন্দ্রাণী মুখ খুলল — তোমরা ছেলেরা চিরকাল ইমম্যাচিওরড রয়ে যাও। একটু মুখ বেঁকালাম সঙ্গে সঙ্গে গলে গেলে। তোমার বউ-এর ভাগ্য খুব ভালো হবে। বরকে আঁচলে বেঁধে রেখে দেবে বেশ।

হঠাৎ পলাশের একটা বিষয় মনে পড়ল। ও বলল, একটা সত্যি কথা বলবে?

— শুনি কী কথা। সবই তো বলে ফেললাম তোমাকে।

— আবার রাগ করবে না তো?

— রাগ করার মতো কথা হলে অবশ্যই রাগ করব। আবার এত কায়দার পরে না বললেও খুব রাগ করব।

পলাশ বলল, আচ্ছা রেমির ছবিগুলোতে মডেল কী তুমিই হও?

— হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

— না মানে তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে প্রথম দিন তোমাদের স্টুডিও থেকে যে ছবিটা নিয়েছিলাম তার সাবজেক্টের সাথে কোথাও তোমার বেশ মিল আছে। তাই…

— হুম বুঝেছি। তা পলাশ বাবু সেই ছবি রেখেছো কোথায়?

— সে তো আমার শোবার ঘরের দেওয়ালে টাঙানো আছে।

— কী কান্ড! বিছানায় শুয়ে সারাক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকো নাকি?

— না তাকালেও চোখ তো চলে যায়। তাছাড়া ছবির মেয়েটি তো সর্বক্ষণ আমার দিকেই চেয়ে থাকে। সেটা বুঝি দোষের নয়?

হাসিমুখে ইন্দ্রাণী বলে — ক্রেতা এমন হ্যাংলা জানলে ও ছবি দিতামই না।

— আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পেলাম না।

— উত্তর দেওয়া কী ঠিক হবে? যদি বলি হ্যাঁ, তাহলে এরপর থেকে ছবির মেয়েটিকে আমি বলে ভাবতে শুরু করবে যে!

— তা হয় নাকি! ছবি তো ছবিই। আ পিস অফ বিউটি।

— তাই নাকি! বেশ তাহলে মিলিয়ে দেখে নাও। সন্দেহ নিরসন হোক।

শাড়ির আঁচল নামিয়ে রাখে ইন্দ্রাণী। আর সামান্য কিছু ডালপালা সরিয়ে ফেলতেই বেরিয়ে আসে দুটি মৃদু নম্র দোয়েলপাখি। অবাক হয়ে পলাশ দেখে ঠিক জলরঙের মতো ছড়ানো অ্যারিওলা। উঠে দাঁড়ায় ইন্দ্রাণী। খোঁপা খুলে চুল ছড়িয়ে দেয়। দরজার দিকে হেঁটে গিয়ে ঠিক ছবির ভঙ্গিতে ফিরে তাকায়। হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে পলাশ। তার চোখের পাতা পড়ে না।

থমকে দাঁড়িয়ে থাকা সময়কে ভেঙে দিয়ে কখন যেন বিছানা থেকে ফুল – পাতা সব কুড়িয়ে নেয় ইন্দ্রাণী। শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে নেয় ভালো করে। ঘোরের মধ্যে থাকা পলাশের মাথার চুল মৃদু আঙুলের খেলায় ঘেঁটে দিয়ে বলে — দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন মশাই। রাত বাড়লে গ্রাম দেশে ভূতেরা বেরোয়। এমন ব্যাচেলর সুদর্শন যুবক পেলে শাঁখচুন্নী ঘাড় মটকে খায়। আমি আপাতত চললাম। কাল সকালে আবার দেখা হবে।

মদ না খেয়েও তীব্র নেশার মধ্যে ক্রমশ ডুবে যেতে থাকে পলাশ। এক সময় ধীরে ধীরে উঠে দরজা লাগিয়ে বাথরুমে ঢোকে। ঘাড়ে – গলায় জল থাবড়ে তোয়ালে দিয়ে মোছে। অনেকটা জল ঢকঢক করে খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বুঁজলেই তখনও মনের পর্দায় স্পষ্ট ভেসে উঠছে ইন্দ্রাণীর মোহিনী রূপ। স্বচক্ষে এভাবে কোনো নারীকে ও কোনোদিন দেখেনি আগে। প্রতিবার মনে পড়লেই মুহূর্তে তীব্র জ্বরে ফুলেফেঁপে উঠতে চায় সারা শরীর।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *