সম্পাদিকা উবাচ

আজ একই সাথে গুরু পূর্ণিমা এবং পুরুষ দিবস৷ তাই আজ সম্পাদকীয়তে তাই নিয়ে দুচার কথা৷

১৯ নভেম্বর হলো পুরুষ দিবস। এই দিবসটি বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে পালন করা হয়। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাকো, জ্যামাইকা, সিঙ্গাপুর, ভারত, পাকিস্তান, কিউবা ইত্যাদি। ১৯৯৪ সালে প্রথম এই দিবসের প্রস্তাব করা হয়। এর ইতিহাস অবশ্য বেশ পুরনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে পালন করা হতো। এটি ছিল মূলত পুরুষদের ত্যাগ ও বীরত্বসূচক দিবস। ২০০২ সালে এই দিবসটির নামকরণ হয় ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে। এই দিবস পালিত হতো রাশিয়া, ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। এই দিনটি ছিল মূলত ৮ মার্চে নারী দিবসেরই অনুরূপ একটি দিন। তবে এই দিনটির পরিসর সংকীর্ণ বলে ১৯ নভেম্বর বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করা হতে থাকে। বেলারুস, ইউক্রেন, মলদোভা, রাশিয়া ও জর্জিয়াতেও ২৩ ফেব্রুয়ারি বদলে ১৯ নভেম্বরকে বেছে নেয়া হয়। ১৯ নভেম্বরকে পুরুষদিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে ষাটের দশক থেকেই। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস পুরুষ দিবস পালনের উপযোগিতা তুলে ধরেন। তিনি নারী দিবস পালনের পাশাপাশি জেন্ডার সমতা রক্ষার স্বার্থে পুরুষ দিবস পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কিন্তু অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরে ১৯ নভেম্বর দেশগুলোতে পুরুষ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরুষ ও ছেলে শিশুদের স্বাস্থ্য এই দিবসের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। শিশু, বালক ও কিশোর বয়সে ছেলেরা নানা রকম বৈষম্য, নির্যাতন ও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। সেসব বিষয়ে বিশেষ যত্ন ও মনোযোগের কথা বলা হয় এ দিবসে।
মনে হতেই পারে পুরুষদের উপর নির্ষাতন ?
তাহলে জেনে নিন- সমীক্ষা বলছে, নারীদের থেকে তিন গুণ বেশি আত্মহত্যা করেন পুরুষেরা। প্রতি তিনজন পুরুষের একজন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। নারীদের থেকে সাধারণত ৪-৫ বছর আগে মৃত্যু হয় পুরুষদের। এবং মহিলাদের থেকে পুরুষদের হৃদরোগে আক্রান্তও হন বেশি। শাসনের পাশাপাশি পুরুষদেরও যে সোহাগের প্রয়োজন— সেই বার্তা দিতেই এই বিশেষ দিন উদযাপন।

আজ ১৯ নভেম্বর শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানকের জন্মদিন। প্রতিবছর এই দিনটাই তাঁর জন্মদিন হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। গুরু নানকের জন্মদিনেই গুরু পূরব নামে পবিত্র উৎসব পালিত হয়।
এই বিশেষ দিনে ইশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার জন্য শিকদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিখ জাতির সৃষ্টিকর্তা এই গুরু নানক দেবের জন্ম হয় ১৪৬৯ খ্রীষ্টব্দে। লাহোরের কাছে নানাখা সাহিব-এ গুরুজির জন্ম হয়। গুরুনানক বিশ্বাস করতেন, একজন সাধারণ মানুষও ইশ্বরের প্রার্থণা করতে পারেন। ইশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। তিনি চিরাচরিত প্রথা রীতিনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন। তাই এই বিশেষ দিনে তিনি যা শিখিয়ে গিয়েছিলেন, তা আরও একবার মনে করে নেওয়ার পালা। শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থও এদিন পাঠ করা হয়ে থাকে। গুরু নানকজি বিশ্বাস করতে এক ইশ্বরে। তাঁর কথায়, সকল শক্তি এক ইশ্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এই উৎসবের ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে এক টানা গুরুগ্রন্থ পড়া হয়। কোনও বিরোতি ছাড়াই এই বিশেষ দিনে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয়ে থাকে। এর ঠিক আগের দিন আয়োজন করা হয়ে থাকে নগর কীর্তণের। গুরু নানক জয়ন্তীর দিন সকাল হয় প্রার্থণা দিয়েই। এরপর দিনভর উৎসব চলতে থাকে, যার মধ্যে লঙ্গর অন্যতম। এদিন সব গুরুদোয়ারাতে লঙ্গরের ব্যবস্থা করা হয়।

লিখতে থাকুন পড়তে থাকুন সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন৷

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।