।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় প্রীতম সাহা

রিজেক্ট

শোনা গল্প।
ইন্ড্রাস্টির সবথেকে উজ্জ্বল প্রতিভার রহস্যজনক মৃত্যু!
নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে যে কিনা রাতারাতি আপামর দর্শকের মনে অফুরান ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গা করে নিয়েছিল–সে নাকি হঠাৎ বিষ খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিল!
তারপর পাঁচ-ছয়মাস ধরে খাবারের কাগজ-মিডিয়া-এখানে-ওখানে-সেখানে নানান সব তথ্য উঠে আসতে লাগলো।এটা আত্মহত্যা নয়, সুপরিকল্পিত হত্যা…স্বজনপোষণ…ব্যানড আরো কত কি।
দিনকে দিন এই ভার্চুয়াল হুঙ্কার আর প্রতিবাদের সরব অবস্থানকে কেমন অন্তঃসারশূন্য মনে হল মনীষার।
মনীষা এযুগের মেয়ে।স্মার্ট,তার উপর নির্ভীক।তাই প্ৰিয় অভিনেত্রীর মৃত্যুতদন্ত থেকে উঠে আসা নানান বিতর্ক ওকে এতটুকুন বিচলিত করতে পারেনা। সেলুলয়েডের দুনিয়াকে কেরিয়ার করবার লক্ষ্যে ও অনড় থাকে।তাই প্রতিদিনকার লড়াই থেকে আজকের স্ক্রিনটেস্ট অডিশনে পৌঁছানোর যাত্রাপথটা ওর কাছে একটা দীর্ঘ সংঘর্ষ বিরতির মতো।
কাস্টিং ডিরেক্টর ‘কাট’ বলতে সম্বিৎ ফিরলো মনীষার।
ক্যামেরা ক্লোজ আপ শটে রাখা;স্ক্রিনে ওর ইতস্ততঃ ভাবটা ফুটে উঠেছে।স্ক্রিপ্টেড ছিল অন্যকিছু;মনীষা বললো আরেক কথা—
“অর্থ নয়,কীর্তি নয়/সচ্ছলতা নয়-আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে/আমাদের ক্লান্ত করে…।”
কথাগুলো বলেই পুরো অডিশন প্যানেলকে স্তম্ভিত করে চোখের নিমেষে সে বাইরে বেরিয়ে এল।
গতকাল রাতের স্বপ্নটা মনীষার স্মৃতিতে এখনো টাটকা।ওর অথর্ব মা রক্তশূন্য মুখে চেয়ে আছে ওর দিকে।রঙিন দুনিয়ার রঙচঙ-কে যেন তিনি ভয় পাচ্ছেন।একমাত্র মেয়ের চিন্তায় রেখাভরা কোঁচকানো মুখটাতে গভীর উদ্বিগ্নতা স্থির হয়ে আছে।
স্টুডিও ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে বারবার সে কথাই মনে হচ্ছিল মনীষার।যতটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে সে এসেছিল;ফিরলো ঠিক ততটাই দৃঢ় দৃপ্ত ভঙ্গিমায়…।
আর শেষেমেষ বোঝাও গেল না কে কাকে প্রত্যাখ্যান করলো;শুধু কিংবদন্তি হয়ে থাকলো একটা কথা–“রিজেক্ট করে দিয়েছিল!”
শোনা গল্প।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।