কবিতায় স্বর্ণযুগে প্রদীপ সরকার (গুচ্ছ কবিতা)

১) বন্ধকী মেরুদন্ড

চোখের সামনে অবলীলায়
বদলে যায় দৃশ‍্যপট অবিরল
বুকের ভীতর আপত্তির চিৎকার
কে শোনে সে নিরুচ্চারের ভাষা!
উচ্চারিত প্রতিবাদই যখন নতি মানে
নষ্ট মানুষগুলোর আস্ফালনের কাছে!

হাজার হাজার বছর নিরন্তর হেঁটে চলা
মহত্তর আলোর নীচে,আঁধার মোচনস্নান চেয়ে
স্বচ্ছ যাপনের তৃষ্ণায় বুক ভরে নিয়ে।
তবু তো পূর্ণিমা অতিথি হয়েই আসে আকাশে।
তুমি আমি সবাই বন্ধকী মুখ
মুখোশওয়ালার দৌলতখানায়
চিৎকার করতে গিয়েও চুপ করে যাই
অবসন্ন শরীর, মন বয়ে নিয়ে যেতে
ঋণ করেছি সুবিধাবাদের হাওয়ায়।

২) বাঁধিনি তাই

তোমার অপসৃয়মান ছায়া
ক্ষীণ হয়ে আসা পদধ্বনি
হাওয়ায় হাল্কা হয়ে আসা
পারফিউমের এর গন্ধ
আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে
তুমি চলে যাচ্ছ ।

হারিয়ে যেতে যেতে
গোধূলির আলো বলে গেলো
মনের খাজাঞ্জিখানায়
দু হাতের অঞ্জলিতে
ভরে নিয়ে গেছো
সব কথা , সব প্রতিশ্রতি ।

৩) ডুবুরি আসেনি আজও

অতলান্ত সমুদ্র-মন অনন্ত প্রতীক্ষায়
শুধু এক দুঃসাহসিক ডুবুরির।
হাজার জাহাজ ভেসে যায়
অন‍্য কোনো বন্দরের ঠিকানায়
সৈকতে উৎসাহী পর্যটকের ভীড়
ডুবুরি তোমার পথ চেয়ে দিনান্তে
বিরহী অন্ধকারে ডোবে নীড়।

গোধূলি ডানায় মেখে অন্ধকারে
বলাকার ঘরে ফিরে আসা
মাঝ দরিয়ারে রেখে আঁধারে
নৌকা তটে খোঁজে বাসা
সারারাত যন্ত্রনার ছায়ানট বাজে
অন্তহীন পথ চাওয়া যাপনে
কেউ কি কড়া নেড়ে গেছে দুয়ারে!

৪) প্রিয়তম মরণ

কি আর আছে আচ্ছাদনে ঢাকা
কোন কথা যে করবো তোমায় গোপন
এ তো নয় বিষের দরজায়
অমৃতের মিথ‍্যা বিজ্ঞাপণ।

অনুভব বুঝিয়ে দিলো আজ
অভিজ্ঞানের অভিধানেই ভুল
পরিমিতি ধ্রুবক হারায় রোজ
একই প্রস্থে অকূল আর কূল।

না বুঝে মৃত‍্যুর সন্ধানেও
বেঁচে থাকে জন্মান্তরের আশা
ফাল্গুন বলেনিতো কানেকানে
মরণ আসে সাজিয়ে ভালোবাসা।

কবর নয়, চিতার আগুন নয়,
নয় অন্ধকারে হীন আত্মহনন
এসো ভালোবাসা,এসো মরণ প্রিয়তম
বিনিময় হোক একান্ত শেষচুম্বন।

৫) এ ঘাটে পক্ষপাত নেই

শেষ লপ্তের আগে আরো একবার!
না হে! দরকার নেই জিরিয়ে নেবার
সময় নির্দ্ধারিত যেখানে
বৃদ্ধির উপহার জোটে কি সেখানে!
বিশ্রাম মানেই পিছিয়ে পরা
পাছে যদি জড়িয়ে ধরে জড়া
না ছুঁয়েই ছেড়ে যেতে হবে
আকাঙ্খার অজস্র অচেনা পথ।

বরং চলো জোরে পা চালাই
সময়ের আগেই ঘাটে পৌঁছে যাই
শেষ খেয়া পাড়ি দেবার আগে
দেখা হয়ে যাবে অগ্রগামীদের সাথে
বুঝে নেওয়া যাবে ভালো করে
আল্লাহ্ – ঈশ্বরের জাত-পাল্লায়
মুখ চিনে কাওকে ফেলে যাওয়া
এখানে একেবারেই অসম্ভব।

৬) দিনগোনা

পাছে মরচে পরে যায়
ভালোবাসার সিন্দুকটায়!
মোমের আস্তরণে আটকেছিলাম
হৃদয়পুরের সব দেওয়াল,
নোনা হাওয়া রুখবো বলে।

কোনো এক নষ্টচন্দ্রা রাতে
চুপি চুপি চুমুতে চুমুতে ভরেছিলে
সে মোম-পলিস্তরার ক্ষেত্রফল
কখন অজান্তেই অনায়াসে
সে আস্তরণ জল হয়ে গেছে গলে।
সদর্পে জং এসে ঘর বেঁধেছে
হৃদয়ের পরতে পরতে
কেউ আসেনি নিয়ে রসায়ন নিদান
ক্ষয়ে যাওয়া অবিরত আবহমান
বদামী অবশেষ মেশে নীলনদ জলে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।