গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৩৬)

নীল সবুজের লুকোচুরি

 

তাই যখন মিঠির সাথে প্রথম আলাপ হয়েছিল তখন ওর স্নিগ্ধ কোমল সান্নিধ্যে আরিয়ান পেয়েছিল ওর কাঙ্খিত সেই স্নেহের ছোঁয়া। অদ্ভুত এক শ্রদ্ধা আর ভালোলাগায় আরিয়ানের মন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তখন থেকেই ডাক্তার আয়ুস্মিতা মৈত্রকে ও পরমাত্মীয় বলেই মনে করে এসেছে। মিঠির সাথে ওর কোনো আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক থাকতে পারে এমনটা ও কখনোই মনে করেনা। কিন্তু অদৃশ্য একটা টান অনুভব করে ভীষণ ভাবে।
——–
মিঠি তো নিজের অজান্তেই কখন যেন এই একরোখা মেধাবী সুদর্শন ডাক্তারকে ভাই বলে মনে মনে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই আজ যখন আরিয়ান অনেকক্ষণ ধরে মনের কথা বলছিল তখনই একটুকরো রঙিন ফিতে ওর হাতের কব্জিতে বেঁধে দিতে মিঠির একটুও অসুবিধে হল না। আরিয়ানের মতামত জানার কিম্বা অনুমতি নেবার প্রয়োজনটুকুও আছে বলে মনে করলনা মিঠি। আরিয়ান অবশ্য বড় বড় চোখে খানিকটা ভেবলে গিয়ে তাকিয়ে ছিল মিঠির দিকে। তারপর হঠাৎই খুব জোরে হেসে ওঠে। আরিয়ানের হাসি দেখে মিঠিও একটু হকচকিয়ে যায়।
হাসির দমক কমলে আরিয়ান মিঠিকে বলে, ” এই কাজটা যদি কটাদিন আগে করতে তবে আমরা দু’ভাইবোনে মিলে মাটিতে স্বর্গ নামিয়ে আনতাম। যদিও আজকের এই মুহূর্তটাও কিছু কম নয়।তুমি তো আমার জীবনের একটা স্বপ্ন পূরণ করে দিলে! আমি তো কোনোদিন ভাবিনি যে কেউ আমার বোন হতেও পারে! Your lovely ribbon make my dream come true. God blessed me through you. তুমি তো আমার থেকে একটু বড় তাই আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকবনা। আর তুমি বলাটা বদলে ফেলতে একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি। কাউকে তো কখনো তুই বলে ডাকিনি। তাই তোমাকে “দি’ তুই” বলতে একটু সময় লাগবে। তবে এক্ষুণি হাত মেলাতে একটুও সময় লাগবেনা।” বলে হাত বাড়িয়ে দেয় মিঠির দিকে।
মিঠি হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দেয়। বলে,” পাগল একটা। এত কথা মনের মধ্যে জমিয়ে রেখে কি ভাবে চলতে পারে কেউ-ভেবেই আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। যাকগে – এখন মা’র কাছে নিয়ে যাব তোমাকে, I mean তোকে । হি হি, আসলে আমিও কাউকে কখনো তুই বলে ডাকিনি তো, তাই তুই – তুমি রা খুব গন্ডগোল বাঁধিয়ে দিচ্ছে, হি হি হি।” আজ ঠিক এই সময়ে যদি মিঠি আর আরিয়ানকে কেউ লক্ষ্য করে তবে মনে হবে যেন ছোট দুই ভাই বোন একে অপরের সাথে নানা রকম খুনসুটি করে চলেছে।
ভাবতেও অবাক লাগে যে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক বিখ্যাত ডাক্তার কিভাবে ছেলেমানুষি করে চলেছে এই মুহূর্তে।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।