নিবন্ধে প্রীতম সাহা

প্রতিসমালোচনা

‘নন্দনকানন’-কে ঘিরে বিতর্ক একটা চিরকালীন বিষয়।একে তো ইন্দ্রের উপবন,তার উপর আমোদ,প্রমোদ,বিলাস,ছলা,কলার অনন্ত প্রাচুর্য!কটাক্ষ না হয়ে উপায়ন্তর থাকে না।
যেমনটা ঠিক স্বর্গের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই মর্ত্যের ক্ষেত্রে–মর্ত্যের ‘নন্দন’-কাননের ক্ষেত্রে।যা আজকের মেট্রোপলিটনে শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম প্রাঙ্গণস্থল(অনেকের মতে)হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।রবীন্দ্র সদন মেট্রো থেকে অদূরে অবস্থিত এই কাননকে ঘিরেও অনেকের ক্ষোভ,কটাক্ষ বিক্ষিপ্তভাবে বর্তমান।
বেশ কয়েকদিন আগে একটি সাহিত্য পত্রিকার অপার্থিব আড্ডায় কতকটা সেই বিষয়েরই সম্মুখীন হতে হয়।আলোচনার প্রসঙ্গ ছিল-কোনো পত্রিকার নিজস্ব লেখকগোষ্ঠী হয় কিনা এবং হলেও লেখার ক্ষেত্রে সেখানে তাঁরা স্বাধীন না পরাধীন?কিন্তু গুটিকয়েক জন ছাড়া প্রায় অধিকাংশকেই দেখলাম মূল প্রসঙ্গটির গভীরে প্রবেশ না করে দিব্যি প্রসঙ্গান্তরে চলে যেতে।আর তারপর হাইড্রেনে নেমে অবোধের মতো চির পরিচিত কাদা ছোড়াছুড়ি।এরই মধ্যে দু-একজন আবার নন্দনের প্রসঙ্গ টেনে এনে একেবারে তুলোধনার অর্কেস্ট্রা বসিয়ে দিলেন।একটু বিরক্ত হলাম আবার হলাম না।কেননা বর্তমান ব্যবস্থায় জিনিসটা একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেছে-সেটা এই যে, কোনো কিছুর আলোচনা করতে গিয়ে হরদম কেন্দ্র থেকে উৎকেন্দ্রিক হয়ে পড়া।ফলতঃ আলোচনার যা উদ্দেশ্য তা অনেকসময় তো সফল হয়’ই না,উল্টে সময় নষ্ট(অন্ততঃ সময়ের মূল্য নিয়ে যাদের মাথাব্যথা আছে)।তাই এরকম প্রচুর শখের আড্ডায়(সে পার্থিব হোক কিংবা অপার্থিব)যোগদান করবার আগে সাত পাঁচ ভাবা দরকার,অত্যন্তভাবে।
কিন্ত একবার যখন তর্ক বিতর্কে মাথাটাকে গলিয়েই দিয়েছি তখন নিতান্ত জগদ্দল হয়ে থাকাটা বেশ অস্বস্তিজনক।আলোচনার আবহাওয়া দেখে বিমূঢ় হয়ে পড়লেও নিজের জোরালো মন্তব্যটা উপস্থাপন না করা অব্দি শান্তি ছিল না।দৃঢ়প্রস্তুত হয়ে একটা প্রয়াস করলাম মূল বিষয়টির উপর নিজের যৎসামান্য বুদ্ধি-বিচার সহযোগে আলোকপাত করবার জন্য-কোনো পত্রিকার নিজস্ব লেখকগোষ্ঠী হয় কি হয় না?
অবশ্যই হয়।এবং সেটার পিছনে ক্রিয়াশীল থাকে আবহমান কালের পারম্পর্য রক্ষার স্বাভাবিকগত একটা মনোভাব;যেটা কিনা উত্তরাধিকার সূত্রেই সন্নিবেশিত।কী সেই পারম্পর্য?আসুন আমরা অতীতের ঘটনা-কাৰ্য্যক্রমের সূত্র ধরে বিষয়টাকে বোঝবার চেষ্টা করি।
সালটা ১৮৪৩।রেনেসাঁর আন্দোলনে ইতিমধ্যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সঞ্চার হয়ে গেছে।নব্যনির্মিত শহরের এক শিক্ষিত অংশ রিফর্মেশনের চিন্তায় মগ্ন দিবারাত্র।হিন্দুধর্মের আচার বিচারের অসারতা,সংস্কারাচ্ছন্ন সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে জেহাদও ঘোষণা হয়ে গেছে কয়েকবার(রামমোহনের একেশ্বরবাদের প্রবর্তন,সতীদাহর মতো ভয়ঙ্কর প্রথা নিরসনের জন্য অমানবিক পরিশ্রম;ডিরোজিও ও তাঁর ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর কার্যকলাপ)।ঠিক এরকমই অস্থির সময়ে আত্মপ্রকাশ ঘটছে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার।অনেকের মতে যেটি কিনা বাংলা সাহিত্যের ‘spectator’।কেননা সমাজের যাবতীয় ঘটনার কথা প্রতিফলিত হত এখানে এবং নানান দৃষ্টিকোন থেকে চলতো তার বিচার।এই যে কালাকালের বিচার,যুক্তি প্রতর্কগত বিশ্লেষণ-এই সমস্তকিছুর প্রয়োজন পড়তো না,যদি না তত্ত্ববোধিনী সভার নির্দিষ্ট কোনো মার্গ থাকতো।আদর্শগত একটি লক্ষ্য ছিল বলেই সভার মাসিক মুখপত্র হিসেবে পত্রিকাটির উদ্ভব।এবং স্বাভাবিকভাবেই সেখানে গড়ে ওঠে একটি লেখকগোষ্ঠী।যাঁরা কিনা সভার মূল লক্ষ্যটিকে তুলে ধরবেন পত্রিকার মধ্যে দিয়ে।
এরপর আসি ভারতীর কথায়।বাংলা সাহিত্যে যা কিনা ঠাকুরবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে ভাস্বর হয়ে থাকবে।
‘ভারতী’-র জন্মের পিছনেও প্রাগুক্ত পত্রিকার মতো কোনো কারণ ছিল কি?এর উত্তর দিচ্ছেন স্বয়ং অবন ঠাকুর।তিনি তাঁর ‘ঘরোয়া’ বৈঠকে বলছেন,-“নবযুগের গোড়াপত্তন করলেন নবগোপাল মিত্তির।চারদিকে ভারত,ভারত-‘ভারতী’ কাগজ বের হল।বঙ্গ বলে কথা ছিল না তখন।”
সুতরাং দেখা গেল এই পত্রিকারও জন্মলগ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি লক্ষ্য।দেশের দশের হিতসাধনের জন্য সাহিত্য সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে পথাণ্বেষণের চেষ্টা।আর এই চিকীর্ষু অভিপ্রায় থেকেই যে সেখানে কিছু বিদগ্ধ গুণীজনের সমাবেশ ঘটবে–সে তো স্বাভাবিক।ফলত ভারতীরও একটি লেখকগোষ্ঠী গড়ে ওঠে।
বিংশ শতকের দুটি বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকার ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা খাটে।একটি ‘কল্লোল’ পত্রিকা অপরটি ‘শনিবারের চিঠি’।
কল্লোলের লক্ষ্য ছিল মূলত প্রচলিত রক্ষনশীলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সাহিত্যের প্রচলিত প্যাটার্ন,ফর্ম ভেঙে পরীক্ষামূলক কিছু কাজকর্ম করা।রাবীন্দ্রিক রুচি(মঙ্গল,আলো,আশাবাদ এসব পরিহার করে)আরো ভালোভাবে বলতে গেলে কবিবরের প্রভাব কাটাবার নিত্যনতুন প্রয়াসের মধ্যে ফুটে উঠেছিল জীবনের অন্ধকার দিক;পাশ্চাত্য সাহিত্যের অনুসরণ কিংবা অনুকরণ।
শনিবারের চিঠি আবার হয়ে উঠেছিল কল্লোলের সেইসব উদীয়মান লেখকগোষ্ঠী এবং কীর্তিমান সাহিত্যিকদের শনি!জনৈক গবেষক বলছেন,-“শনিবারের চিঠির জন্মলগ্নে ছিল রাহু বক্রী,রবির উপর শনির দৃষ্টি।”অতঃপর এখানেও সেই লক্ষ্যপূরণের তাগিদে গড়ে ওঠে আরেকটি তরুণ লেখকদের গোষ্ঠী।
তাহলে আমরা দেখলাম, উপরিউক্ত প্রত্যেকটি পত্রিকার ক্ষেত্রেই কিন্তু একটা ‘লক্ষ্য’ কাজ করেছে।সেটা সামাজিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় প্রেক্ষাপটের দিক থেকে হোক কিংবা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির দিক থেকে-একটা লক্ষ্য বা আদর্শ কাজ করে গেছে প্রতিটামুহুর্ত।ফলত এই লক্ষ্যপূরণের তাগিদে যে পৃথক মতাবলম্বীর গোষ্ঠী তৈরি হবে এতে আশ্চর্য হওয়ার বা প্রশ্ন উত্থাপনের কোনো অবকাশ নেই।কারণ,পুরো বিষয়টাই দাঁড়িয়ে ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়ার উপর।একটা যুগ তার অন্তর্গত ঘটনাবলী প্রত্যেকের মনে এক একভাবে ছাপ রাখবে এবং সেই অনুসারে চলতে থাকবে ভিন্নধর্মী মানসিক গঠন।সেই গঠন অনুযায়ী পরিলক্ষিত হবে দৃষ্টিকোণের ভেদরেখা;পথ নির্ধারণ,সমস্যার হাল খোঁজবার জন্য স্বতন্ত্র ভঙ্গিমা।এটা নিয়ম;শ্বাশ্বত অমোঘ এক নিয়ম।উপরিউক্ত পত্রিকা,পত্রিকার কার্যক্রম এবং লেখকগোষ্ঠী এই নিয়মেরই দাসানুদাস।এই নিবন্ধটির শুরুতে যে আবহমানকালের পারম্পর্যের কথা বলছিলাম সেটা ঠিক এই নিয়মেরই ফলশ্রুতি।অন্তর্ভেদী বীক্ষা দিয়ে একটি যুগের মর্মভেদ করা।আর ঠিক এই অপরিহার্য ধারাটাই আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করে যাচ্ছি।তত্ত্ববোধিনী,ভারতী আরো অন্যান্য পত্রিকা সাময়িকপত্রগুলো,সেই সময়কার নীতিনিয়মগুলো নিজেদের মতো করে বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করেছে;তেমনি একালেও কিছু পত্রিকা,লিটল ম্যাগাজিনের কাজকর্মে সেই ফল্গুধারা একইভাবে বয়ে যাচ্ছে।একটু সন্ধান করলেই দেখা মিলতে পারে সেসব কাগজের;নিষ্ঠা,আদর্শ সহযোগে পরিচালিত সেসব পত্রিকার কর্মনির্বাহের।ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এরকম কয়েকটি পত্রিকার লড়াইয়ের সাক্ষী ছিলাম….
….হ্যাঁ ‘লড়াই’ শব্দটা ভেবেচিন্তেই প্রযুক্ত করলাম প্রাগুক্ত লিটল ম্যাগাজিনের(আমার দেখা)লড়াকু সদস্য অথবা লেখকগোষ্ঠীর কথা ভেবে।জ্বলজ্বল করছে সেখানে পত্রিকা করবার সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য,অফুরন্ত উদ্যম,স্ফূর্ত মেজাজ-কিন্তু বাধ সাধছে পকেটস্থ দীনতা(কেননা এদের অনেকেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া,এক অর্থে বেকার।কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে কাগজ করবার অতিশয় ক্ষিদে।)।তবু হাতখরচের যাবতীয় ব্যয় কেটেছেঁটে(পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকে আছে নিজেদের পেট মেরে টিফিনের খরচটুকু বাঁচাচ্ছে)পত্রিকা করা চাই-এই হচ্ছে জেদ,এই হচ্ছে নিষ্ঠাগত ঐক্য। যদিও এখন ই-ম্যাগাজিনের দৌরাত্মে উপরিউক্ত চালচিত্র ধীরে ধীরে আবছা হয়ে আসছে।কিন্তু আছে।খুঁজতে হবে সেসব কর্মচাঞ্চল্য,খুঁজলে খোদ ঈশ্বরেরও সাক্ষাৎ মেলে।
আর এই লড়াই লক্ষ্য থেকে সেখানে আপনা হতেই একটি গোষ্ঠী জন্মে যায়।যারা তাদের মতো করে সমকালের বিচার করে;বৈঠকি আলাপ আলোচনার মধ্যে ঋদ্ধ করে একে অপরকে।আর এতে কোনো দোষ বা চক্ষুশূল হওয়ার মতো ব্যাপার নেই।এতে করে সামাজিক সুস্থতার দিকটা যেমন প্রতিফলিত হয়(অবশ্যই তাই,কেননা মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ জীব সেই প্রাক-ঐতিহাসিক কাল থেকেই।”আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”মন্ত্র যতদিন থাকবে ততদিনই মঙ্গল)তেমনি জ্ঞানভাবনার পরিসরও হয় আরো বিস্তৃত।নিজেকে চেনা,জানা,বোঝার পথটাও হয় সুগম।
এপ্রসঙ্গে কৃত্তিবাস পত্রিকার জন্মেতিহাস,পথচলার কথা দ্রষ্টব্যঃ।পত্রিকার সম্পাদক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে-“কৃত্তিবাস বাংলদেশের তরুণতম কবিদের মুখপত্র।একেবারে তরুণদের সার্থক না হলেও ভালো নতুন কবিতার গতিপথের একটা নিরিখ যাতে পাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যে তাঁদের কবিতা এতে একত্র করা হবে।”সুতরাং এখানেও পরিলক্ষিত হল একটি উদ্দেশ্য;এবং সেই উদ্দেশ্যকে সাকার করতে নিজস্ব লেখকগোষ্ঠী-আর এতে করে কোনো কিছু সংকীর্ণ হয়ে পড়লো না;বরং বাংলা সাহিত্য পেল উত্তর আধুনিক কবিতার নতুনরূপ,নতুনপথ, গ্রহণযোগ্য দিশা।আর সেটি কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়াই,দেশ-কালের সংকীর্ণ সীমারেখা ভেঙে পত্রিকাটির পথচলা।প্রসঙ্গত,মনে রাখতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের একাধিক কবি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এতদূর অব্দি গেল কোনো পত্রিকার নির্দিষ্ট লেখকগোষ্ঠী হয় কিনা এবং কেন হয় সে সম্পর্কিত ব্যাখ্যাদান।
এবার আসি এই লেখকগোষ্ঠীর লেখার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বার বিষয়টিতে।সত্যিই তাঁদের ভাবনার উপর পত্রিকার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে কি না-সেই দিকটায় একবার অনুপ্রবেশ করা যাক।
‘তত্ত্ববোধিনী’ দিয়েই শুরু করা যাক।পত্রিকাটির যাত্রা মূলত ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যেকে স্মরণে রেখে শুরু হলেও সেখানে কিন্তু কেবলমাত্র ধর্মবিষয়ক সন্দর্ভই প্রাধান্য পায়নি।অক্ষয়কুমার দত্তের “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়”-এর মতো ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি সেখানে স্থান পায় বিদ্যাসাগরের “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা”-র মতো সামাজিক প্রস্তাব।প্রসঙ্গত বলে রাখি বিদ্যাসাগর মশাইও কিন্তু এই পত্রিকার লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে ছিলেন একজন।অতএব উক্ত উদাহরণটি থেকে সহজেই অনুমেয় হয় যে পত্রিকাটির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য,দৃষ্টিকোণ থাকলেও সেটি কোনোভাবেই লেখকদের লেখা বা চিন্তার পরিসরটুকুকে সংকুচিত করে তুলছে না।একই ছবি পরবর্তী পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
‘মহানগর’-এর মতো জীবনের জটিল খন্ডচিত্রগুলো প্রকাশ পায় যে পত্রিকায়,সেই পত্রিকাতেই আবার দেখা মেলে ‘রসকলি’র মতো গল্পের।অতএব ‘কল্লোল’ও কোনোভাবেই বাধা হয়ে দাঁড়ালো না লেখকদের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবার প্রসঙ্গে।উল্টে সেখানে দেখা গেল বৈচিত্র্যের শাখা-উপশাখা,ভাবনার গভীরতা,আধুনিক সমাজ ও সাহিত্যের যথার্থ স্বরূপ,মানবমনের বিচিত্র ও কুটিল স্রোত,কালের মন্দিরা হয়ে বেজে ওঠবার একান্ত সাধনা।
হ্যাঁ তবে এই দৃশ্যেরও কি হেরফের নেই? অবশ্যই আছে।এস্থানে আসে ‘শনিবারের চিঠি’র’ মতো পত্রিকার নাম।বহমান ধারার বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হতে গিয়ে পত্রিকাটিকে এতটাই ‘বিদ্রুপ’-এর আশ্রয় নিতে হল যে শেষমেষ খোঁচা দেওয়ার কথা উঠলেই ‘শনিবারের চিঠি’র’ নাম উঠে আসতো সর্বাগ্রে।সেখানকার লেখকরাও অনেকসময় পত্রিকার এই উদ্দেশ্যটি মাথায় রাখতো এবং সেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত দিকটির প্রমানও মিলতো সেসব রচনায়।
লেখার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বার বিষয়টি পত্রিকা,পত্রিকার বিষয়বস্তু,’সম্পাদক’-এর মনন আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে মেজাজের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল।’সম্পাদক’-এর কাজ কেবলমাত্র লেখা সিলেক্ট করে নিয়ে সূচিপত্র প্রকাশ করে দিয়ে বর্ণাঢ্য পত্রিকার প্রকাশের মধ্যে দিয়ে খালাস হয়ে যায় না।সম্পাদককে স্মরণে রাখতে হবে জহুরি হিসেবে নিজের দায়িত্ব,কর্তব্যগত বিষয়গুলো।কীভাবে লেখা আদায় করে নিতে হবে কিংবা কীভাবে একজন জাত কলমচির জন্ম দিতে হবে সবার আগে সেইদিকটা তাঁকে অধিগত করতে হবে(দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় দত্ত’র নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য)।আর এই সমঝদারির স্থানে যদি এতটুকু ছিদ্র থেকে যায় তবেই আসবে সমস্যা।যেগুলোর সম্মুখীন হতে হবে একমাত্র লেখককেই।তাতে করে ভালো সাহিত্যও যাবে হারিয়ে,চিন্তা,লেখার আস্বাদ থেকেও পাঠককুল হয়ে থাকবে বঞ্চিত।
বর্তমান সময়ে কিছু কিছু পত্রিকায় উপরিউক্ত সমস্যাটাই বিশেষভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।তার পরিসংখ্যান হয়তো অনেক।কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে।এমন অনেক লিটল ম্যাগাজিন এখনও বিদ্যমান যেখানে সমস্তটার কেন্দ্রে রয়েছে নিষ্ঠা,আদর্শ(লেখার মধ্যপরিচ্ছেদে এই বিষয়টা নিয়ে আমি বলেছি)।কিন্তু অনেক বোদ্ধাদের(এরা চিরকাল ফোপরদালালি করে কাটালো,অথচ নিজেরা সারাটাজীবন কিস্যু করলো না।)দেখি কিছু হলেই তারা ‘নন্দন’-এর প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসে(ঠিক এই আলোচনার শুরুতে যেটা দেখা গেল);যেন ওই কাননের বাইরে সাহিত্যচর্চা,সাহিত্যক্ষেত্র বলতে কিছু নেই।সাহিত্যের সবটুকু যেন ওখানেই বিরাজমান।ওই বেষ্টনীর বাইরে সব ধু ধু মরুপ্রান্তর,কোথাও কিছু নেই।যারা এরকমটা মনে করেই একটা অসম্পূর্ণ উপসংহারে চলে আসেন তাদের ‘কূপমণ্ডূক’ ছাড়া আর কীই উপাধিতেই বা ভূষিত করা যায়।তারা হয় ‘জীবন’-এর অনুশীলন করেননি নয়তো ‘নন্দন’ কাননকেই জীবনের,সাহিত্যের সমস্তটুকু বলে বেছে নিচ্ছেন।তাই অতীতকালের গৌরবময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে ‘গতস্য শোচনা’ নিয়ে তারা কেউমেউ করতে বসেন(হচ্ছেটা কী!!!!!!)।অযাচিত বাক্যবন্ধে একে ওকে ঠুকতে থাকেন,এবং অনেকাংশেই সেটা অযৌক্তিক,কেননা জীবনের একটা দিক নিয়ে তাদের বিচার চলে(পৃথিবীর একটি পৃষ্ঠে আলো পড়বার মতো),কিন্তু যুক্তিবাদী ব্যক্তিমাত্রেই মানবেন যে আলোচনার বৃত্ত সম্পূর্ণতা পায় আলোচ্য বিষয়েরই সমগ্রতায়।তবুও সেই কাকস্য পরিবেদনা।
বক্তব্য আর দীর্ঘায়িত করবো না।আলোচনার বিষয় নিয়ে উপরে নিজের যুক্তি,মন্তব্যগুলো রেখেছি।এবার যাদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হল তো হল আর যাদের কাছে হল না তারা পূর্বের মতোই ঢক্কানিনাদ করে বলতে পারে–পত্রিকার নিজস্ব লেখকগোষ্ঠী বলে কিস্যু হয় না এবং ওটি থাকতেও নেই।শেষ করবো জনৈক ফরাসি কবির উক্তি দিয়ে।সমালোচকদের বাড়বাড়ন্ত’র দিকে তর্জনী হেলিয়ে একবার কবিও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন-“kill the dog,because..” because কী!”because he is a rivewer.”ধন্যবাদ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।