“এই শ্রাবণে আষাঢ়ে গপ্পো” বিশেষ সংখ্যায় পরেশ নাথ কোনার

নূতন বাসা

আমি যে বার স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেলাম তখন ও আমি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র,সেই সুত্রে বড়বাজারের বনবাস হোস্টেলে থাকি। প্রথম প্রথম কয়েকট দিন হোস্টেল থেকে ই যাতায়াত করলাম। যেহেতুআমি ল পড়াটা আর কন্টিনিউ করবো না সেহেতু দুর্গাপুরে ই একটা বাসার খোঁজশুরু করলাম ।তখন দুর্গাপুরের কারখানা  গুলির এত দুরবস্থা হয় নি। কোয়ার্টারস ভাড়া পাওয়া খুব দুষ্কর ছিল।পাওয়া যে যেত না তা নয় ,তার জন্য মোটা টাকা সেলামী দিতে হতো। আমার এক মেসোমশাই দুর্গাপুরে, রেলের পি.ডাব্লুউ.আই।তিনিই রেলের একটি কোয়ার্টারস ঠিক করে দিলেন। পূর্ব দিকে যে ওভার ব্রিজ তার কাছাকাছি যে জলের ট্যাঙক তার নীচে একটি মাত্র কোয়ার্টারস,রেল কলোনী থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ,বস্তি লাগোয়া ঐ কোয়ার্টারস এর একটা ইতিহাস আছে।ঐ কোয়ার্টারসে যারাই থেকেছে তাদের কিছু না কিছু দুর্ঘটনাঘটেছে। একজনের বউ ওখানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্ম হত্যা করেছে।সবাই বলেতার আত্মা ওখানে ঘোরাফেরা করে।রাত গভীর হলে কখনো ঘুঙুরের শব্দ, কখনো খটখট করে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যায়।কখনো কখনো মরা জীব জন্তুর ঠ্যাঙ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।কোন কর্মীপরিবার নিয়ে ওখানে থাকতে পারে না। তাই কোয়ার্টারসটি ফাঁকা পড়ে আছে।
মেসোমশাই বাসাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন এবং আমায় জিজ্ঞাসা করলেন আমি ঐ বাসায় থাকতে পারবো কি না। আমি হ্যাঁ বললাম। ওখানে ই থাকার ব্যবস্থা হলো।
প্রথম রাতটা আমি একা থাকলাম না।আমার এক বন্ধু ভাগ্যধর,যে অন্ডালে রেলে কাজ করতো, তাকে থাকতে বললাম।এক ই চৌকিতে দুজন শোয়া।নাইট বাল্ব জ্বলছে।
ভাগ্য এই কোয়ার্টারস সম্পর্কে কোন কথা শোনে নি তাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। কোথাও একটু শব্দ হলেই টর্চ জ্বেলে দেখি।এই ভাবে সারা রাত প্রায় নিদ্রা হীন ভাবে কেটে গেল।
পরের  রাতে আমি একা ।ঘুম আর আসে না।চোখ কেবল ই সিলিং ফ্যানের দিকে চলে যায় ।চোখ বুজলে ই সেই অদেখা বৌ টির ছবি ভেসে ওঠে।বনবন করে ফ্যান ঘোরে কিন্তু হাওয়া গায়ে লাগে না।ঘামে নেয়ে এক সা।এর ই মধ্যে কখন যে সামান্য চোখ লেগে গিয়েছিল কে জানে রাত তখন দু টো হঠাৎ জানালার কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ।নাইট বাল্ব জ্বলছে না, অন্ধকার। তবু দেখলাম আমার ঘরের জানালার কাঁচ তো ঠিকই আছে।ভয় আরো বেড়ে গেল।
একটা অস্ফুট গোঙানী শব্দ পেলাম। নাকি সুরে কান্নার আওয়াজ, সঙ্গে ঘুঙুরেরশব্দ ভেসে আসছে। পাশের রুম থেকে কাঁচে র পাত্র চামচ দিয়ে বাজালে যেমন আওয়াজ হয় তেমনি ভেসে আসছে। ঠাকুমার কাছে শুনেছি অতৃপ্ত আত্মা রা ঐ ধরনের আওয়াজ করে।ভয়তো আরো বেড়ে
যাচ্ছে।গলা শুকিয়ে কাঠ ,চৌকির নীচেরাখাজলেরবোতল যে তুলে নেব সে ক্ষমতা নেই। টর্চ জ্বালি না । চোখ খুলে রাখি। এভাবেই ভয়ার্ত পরিবেশে সে রাতটি কেটে গেল।মনে মনে ভাবলাম এর একটা বিহিত করা দরকার।
কোয়ার্টারস এর একেবারে লাগোয়া বস্তি। স্কুল থেকে ফিরে বস্তি র দু একটি যুবকের সাথেযেচেপরিচয়করলাম। আসলে এই বস্তি গুলো রাতে খুবই সচল থাকে।
নূতন লোক এসে যাতে তাদের কাজে কোন অসুবিধা সৃষ্টি না করে বোধ হয় তার জন্য তারা ঐ সব করে।যারা তাদের কাজে নাক গলায় তাদের থাকা অসম্ভব হয়।যেদিন থেকে ওরা জানলো যে আমি অবিবাহিত একজন নির্ভেজাল স্কুল মাস্টার তারপর থেকে আমার আর কোন অসুবিধা হয় নি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।