অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

চড়

অঙ্কের মাস্টারমশাই অমলবাবু রঘুর গালে সপাটে চড় কশলেন। বারো বছর বয়সি রঘু অঙ্কের ক্লাসে কোনদিনই মনোযোগি থাকে না। পরীক্ষায় অঙ্কের নম্বরও বরাবরই কম। ঘটনার পরেই স্কুল জুড়ে হইচই। খবর চলে গেল স্কুলের সব ছাত্রের বাড়িতে। কোন এক খবরের চ্যানেলে এক গার্জিয়ান জানিয়ে দিলেন হোয়াটসঅ্যাপে।

পরদিন স্কুলের শুরুতেই গার্জিয়ানদের ভিড় হেড মাস্টারের ঘরের সামনে। চরম বিশৃঙ্খলা। পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। চ্যানেলের লোকজনও হাজির। সবাই হেড মাস্টারের সঙ্গে দেখা করতে চায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে হেড মাস্টার পুলক রায় অমলবাবুকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তখন সবাই চুপ। পুলক বাবু খুব রাশভারি লোক। শহরে তাঁর যথেষ্ট সুনাম আছে। গম্ভীর গলায় শুধু বললেন, “আমার স্কুলে ছাত্রদের দায়িত্ব আমার হাতে। আপনাদের আমি পরিষ্কার ভাবে জানাতে চাই যে ছাত্রদের শাসন করা উচিত প্রয়োজন পড়লে। কালকের ঘটনা আমি খতিয়ে দেখবো। কথা বলবো প্রহৃত ছাত্রের গার্জিয়ানের সাথে। এটা নিশ্চয়ই জানা সর্বাগ্রে প্রয়োজন ওঁদের কোন অভিযোগ আছে কি না। আমি এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি।” এমন সময় একজন পিছন থেকে ফোড়ন কেটে উঠলেন, “টাকা দিয়ে চাকরি পেলে চড় থাপ্পর দেওয়া ছাড়া আর কি জানবে?” পুলকবাবু কোন উত্তর না দিইয়ে অমলবাবুকে নিয়ে তাঁর ঘরে ঢুকে গেলেন।

চ্যানেলের লোক এইবার ছুটলো রঘুর বাড়ি। তখন বাড়ির চারিদিকে অগণিত উৎসুক মানুষের ভিড়। কিন্তু, কোন ভাবেই রঘুর বাড়ির কেউ বাড়ির বাইরে এলেন না। কিছুক্ষণ পরে চ্যানেলে প্রচারিত হলো ঘটনার বিবরণ। আর সাথে জানানো হলো যে প্রহৃত ছাত্রের পরিবার এতই বেদনাহত যে সাক্ষাৎকার দিতে পারেনি।

পরদিন রঘুর বাবা স্কুলে গেলেন। হেড মাস্টারের ঘরে অমলবাবুকে ডাকা হলো। অমলবাবুর দিকে হাত তুলে নমস্কার করে রঘুর বাবা বললেন, “আমি এতদিন যেটা করতে পারিনি, তা আপনি করেছেন। মা-ঠাকুরমার আদরে রঘু গোল্লায় যেতে বসেছে। আপনি আমার পূর্ণ সমর্থন পাবেন।”

হেড মাস্টার বেল টিপে পিওনকে ডেকে চা আনবার কথা বললেন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।