সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ১৪)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে ফুলটুসি বৌদি বিস্ফারিত চোখে দাঁড়িয়ে আছে। আর সুমন দেওয়ালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে চলেছে —
সবুজ ঘাসের কার্পেটে,
যখন সে চোখে দেখে
ঘন কালো চুলের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে, আলুথালু
বলে সে ” এতোদিন কোথায় ছিলেন!

হাতে ধরা ট্রের ওপর বসানো কাপ আর প্লেট থরথর করে কাঁপছে। ফুলটুসি বৌদি অনেক কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। অবশেষে সব জড়তা ভেঙে বিশ্ময়বিমূঢ় গলায় বলে উঠলো — অপূর্ব! কী সুন্দর! এ কবিতা আপনি লিখেছেন?
সুমন একটু বিনয়মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো — ওই আর কি। আপনার অত সুন্দর ছবিটা দেখে না জানেন, কেমন যেন ফল্গুধারার মতো বেড়িয়ে এলো জানেন? শব্দগুলো আসলে ওই ছবিটার ভেতরেই লুকিয়ে ছিলো। শুধুমাত্র আমার বুকের দরজা খুলে দখিনা বাতাসের মতো বেরিয়ে পড়লো। আচ্ছা — ওই ছবিটা কে এঁকেছেন? দেখে যেন মনে হচ্ছে যামিনি রায় স্বয়ং আপনাকে তার স্টুডিওতে বসিয়ে এঁকেছেন।
ফুলটুসি বৌদি মনে হচ্ছে যেন জ্বলন্ত মোমের মতো গলে যাবেন। তাঁর মুখে কথা সরছে না। সারাটা শরীর কেমন যেন অবশ অবশ লাগছে। চায়ের ট্রে টাকে কোনোরকমে সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে সোফাটার ওপর ধপাস করে বসে পড়লেন। বেশ কিছুটা সময় কথাহীন কেটে গেলো। সুমনের চোখ আপাতভাবে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে, আর ফুলটুসির নজর কুইক ফিক্সের মতো আটকে গেছে সুমনের চোখের দিকে।
— আপনি বুঝি মাঝেমধ্যেই নন্দনে যান?
— মাঝেমধ্যে!
একটা কৃত্রিম স্বর বেরিয়ে পড়লো।
— মাঝেমধ্যে কেন হবে বলুন দেখি ? আমি তো ঝড়, জল, বৃষ্টি যাই হোক না কেন নন্দনে যাই, ওটাই তো আমার দ্বিতীয় ঘরবাড়ি। ওখানে না গেলে আমার পেটের ভাত হজম হবে না।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।