সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ১৩)

সুন্দরী মাকড়সা

ধীর পায়ে সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় পা রাখলো ঋষি। আজকের ঘটনাটা কিন্তু ওকে ধরে সত্যিই নাড়া দিয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব? ঘরে ঢুকে ও ধীরপায়ে গিয়ে দক্ষিনের জানালাটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালায় দাঁড়িয়ে ফের অকুস্থলের দিকে তাকালো। নাহ্, সবকিছুই আগের মতোই স্বাভাবিক। যে জায়গাটাতে সেই মহিলার শরীরটা পড়ে থাকতে দেখেছিলো ঋষি, এখন সেখানে দুটো কাঠবেরালি নিজেদের মনে খেলা করছে। এই কাঠবেরালি দুটোকে প্রায়ই বাড়ির আনাচেকানাচে দেখতে পাওয়া যায়। কাঁচের জানালাটায় এখন আর রক্তের কোনো ছোপ লেগে নেই, কেউ যেন এসে ধুয়ে দিয়ে গেছে। ঘরের ভেতর সেই চামড়া পচা দুর্গন্ধটাও আর নেই। সেই সময়টা যেন অদ্ভুতভাবে ঋষিকে টাইমমেশিনে করে পিছিয়ে নিয়ে গেছিলো। সে যাই হোক না কেন, বাথরুমের বালতিটাতে বেশ কিছুটা ফিনাইল ঢেলে ঘর মোছার মপটাকে বালতিতে বেশ ভালো করে ডুবিয়ে নিয়ে ঘরের মেঝেটাকে পরিষ্কার করা শুরু করলো ঋষি। আজ সম্ভবত পূর্ণিমা। পূর্ণিমা না হলেও সেটা ধারেকাছেই হবে। ঘর থেকে চাঁদটা দেখা যাচ্ছেনা তবে আলোয় চারদিক থৈ থৈ করছে। আর এই আলোয় কাঠবেরালিদুটোও যেন খেলায় মেতেছে। বাথরুমে ঢুকে ভালো করে গা হাত পা ধুয়ে নিলো ও। গা মুছে আলমারি খুলে একটা পরিষ্কার হাতাকাটা গেঞ্জি গলিয়ে তার ওপরে একটা ফুলহাতা শার্ট পড়ে নিলো ঋষি। মনটাকে অন্যরকম কিছুতে পালটে ফেলতে হবে। আলমারির তাক থেকে ডিও বের করে সারাটা শার্টে স্প্রে করে ঘরে রাখা একমাত্র উপন্যাস মুজতবা আলির শবনমটাকে হাতে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

এ কদিন ধরে যা সব ঘটনা ঘটছে, সেইসব ঘটনাগুলোকে একটা প্রোজেক্টর মেসিনের সাহায্যে মনের পর্দায় ঘোরাতে শুরু করলো ঋষি। আজ আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না ওর। ভাতের হাঁড়িতে জল না বসিয়ে খাটের আশ্রয় নিতেই ঘুমে দুচোখ জড়িয়ে গেল ঋষির।

ক্রমশ

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!