সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২৩)

পদচিহ্ন

দীপঙ্কর বিন্দি। শ্যামল বর্ণের একজন সুঠাম শরীরের যুবক। ওর গাড়ি করে কলকাতা ফিরছিলাম। দিব্যি হাসিখুশী প্রাণচঞ্চল যুবক। জিজ্ঞাসা করলাম — তোমার বাড়ি কোথায় দীপঙ্কর?
— পাঁউশিতেই তো জেঠু। আপনি কি আমাদের হোমে গেছেন কখনও?
— তোমাদের হোম? মানে? কোন হোম? বলরাম করণের আশ্রম আর হোম বাদে এখানে আরও কোনো হোম আছে নাকি?
— আরে ওই তো, বলরাম জেঠুরই তো, মনচাষা রিসর্টের পাশে।
— তুমি কি ওই হোমে ছিলে নাকি?
— হ্যাঁ তো। ওখানেই তো ছোট থেকে বড়ো হয়ে উঠেছি গো।

আমার অবাক হওয়ার আরও কিছুটা বাকি ছিলো।

— ওখানে মানে ওই গ্রামে বলো! তা এখন কোথায় থাকো?
— যা বাবাঃ, আমি তো আশ্রমেই থাকি। রাস্তা দিয়ে আশ্রমে ঢুকলে পরে প্রথম যে বেড়ার ঘরটা পড়ে না, ওখানে তো আমার মা, দিদি এনারা থাকেন, আর আমি তো গাড়ি নিয়েই ছোটাছুটি করি। কলকাতার কালিকাপুরে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি, আর আশ্রমে থাকলে ওই দোতলায় কালিশংকরের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ি। আমি কালি আর বাসুদেব, এই তিনজন রাতে ঘুমোই।
আমি ওকে গাড়িটা থামাতে বলে পেছনের সিট থেকে সামনের সিটে ওর পাশে এসে বসি।
— তারমানে তুমিও ওই স্কুলেই পড়াশোনা করেছো?
— হ্যাঁ গো জেঠু, বলরামজেঠু যখন থেকে স্কুল শুরু করলেন সেই শুরুর দিন থেকেই তো আমি ওখানে। তখন তো লম্বা চালাঘর আর রাতেরবেলা গোরুর মশারী টাঙিয়ে আমরা মাটির মেঝেতে মাদুর পেতে পাশাপাশি শুয়ে ঘুমাতাম। জেঠু জেঠিমা, ময়নাদি চায়নাদি সবাই একসাথে। তখনও তো মণি হয়নি গো।

আমার এখন ময়নার বিষয়ে জানতে হবে। এই মেয়েটির যে অদ্ভুত সাংগঠনিক দক্ষতা সেটা আমাকে বিস্মিত করেছে। আমি ব্যাগ থেকে বিস্কুটের প্যাকেট বের করে নিজে দুটো নিয়ে ওর দিকেও দুটো বিস্কুট এগিয়ে ধরলাম। গাড়ি দীঘা কলকাতা হাইওয়ে দিয়ে হেঁড়িয়া পার করে হুহু করে এগিয়ে চলেছে।

ক্রমশ

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!