সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৭)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

মা কালীর বিগ্রহের সামনে মন্দিরের তামার টাডে মন্দিরের পেছন দিকের পচা নালা থেকে জল ভরে আনতে বলে, তান্ত্রিক থরহরি চন্দনপাটায় অল্প পরিমান রক্তচন্দন ঘসে মন্দিরের সামনের উঠোন থেকে অল্পকিছু বেগুনী রঙা নয়নতারা ফুল এনে আগের দফায় ঘষে রাখা রক্ত চন্দন আর ফুলগুলোকে অব্যবহারে কালো হয়ে যাওয়া তামার পুষ্পপাত্রের ভেতর রেখে ধূপদানীতে দুটো ধুপকাঠি জ্বেলে আসন পেতে বসলেন। ঠিক এরকম সময়েই হজা তামার টাডে করে জল নিয়ে ঘরে ঢুকে দুচোখ বড় করে যেন ছবি হয়ে সেঁটে গেলো।
ঠিক এই দৃশ্য রচনার জন্যই যেন থরহরি এতো কৃচ্ছ্রসাধন করেছিলেন। হজাকে উঠোন পেরোতে দেখেই থরহরি চিৎকার করে উঠলেন — জয় মা ত্তারা।

হজা জীবনে অজস্রবার তারা ডাক ডেকে ছিলিম উৎসর্গ করতে দেখেছে। নিজেও ” জয় জয় মা ত্তারা ” আর ” জয়গুরু বামদেব ” বলে বুক ভর্তি করে ধুঁয়ো টেনে নিয়েছে। কিন্তু আজকের এই গর্জন এর আগে হজা কোনোদিনও শোনে নি। এই গর্জন হজাকে এনে সটান ফেলে দিলো থরহরিবাবার শ্রীচরণতলে।

— ” বাবা, আমাকে ট্রাক ড্রাইভার বানিয়ে দাও বাবা, আমি ফুলটুসি ট্রাক চালাবোওওওও — ”
–” চালাবি চালাবি, শুধু ফুলটুসি ট্রাক কেন রে হজা, তুই শ্রীদেবী হেলিকপ্টার, মাধুরী দীক্ষিত এ্যারোপ্লেনও চালাবি রে পাগলা। ”
— আমাকে অত স্বপ্ন দেখিও না বাবা, চালানো তো দূরের কথা ছুঁতে গেলেও ঝাঁঝে মরে যাবো, তুমি আমাকে ট্রাক… ”
— ” তাহলে দে দেখি, ওর এককপি ছবি দে। দেখছি ফুলটুসি তো ফুলটুসি, ওর গনাগুষ্টী কীভাবে তোকে এড়িয়ে যায়… ”
—” ছবি তো নেই! ”
— ” নেই? তাহলে তুই কী করতে এসেছিস? যাকে ভালোবাসিস তার ছবিও রাখিস নি? ”
–” রেখেছি তো, কিন্তু সে তো বুকের ভেতর লটকে রেখেছি বাবা, আমার মন মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা! ”
— ” তাই দে রে হতচ্ছাড়া, ওই মোবাইল ক্যামেরায় তোলা ছবিই দেখা। ”
” — বাবা —- ”
কাতর ডাক ছেড়ে হজা থরহরির দুপা জাপটে ধরে।
— ” একবার ছবি তুলতে গেছিলাম তো -”
— ” তো? অমন ব্যা ব্যা আর তো তো করছিস কেন? ছবি আছে না কি নেই সেটা বল হারামজাদা ”
—” নেই তো, মুখের ওপর আঁচলের ঝাপটা মেরে বললো — তুমি কী স্ট্যাটাস কথাটা শোনোনি? তোমার মতো লো স্ট্যাটাসের কারো এলবামে আমার ছবি?? বলে কি বললো জানো বাবা? ”
— ” কী বললো? ”
—” আগে হেয়ার রিমুভারের পজিশনে যাও তাপ্পরে না হয় ছবি তুলো কেমন? যত্তোসব বোগাস আগলি পিপুল –”
— ” কী! তোকে পিপুল গাছ বললো? বলিস কী রে? সে তো অনেক বড়ো –”
— ” পিপুল — পিপুল গো, বাংলায় যাকে পিপল বলে। পিপল মানে মানুষ — ”
— ” যাকগে যাক, তোর মতো গাধাকেও যে মহিলা মানুষ বলেছে, সে সত্যিই অসাধারণ। যাকগে যাক, আসল কথায় আয় রে, ছবি ছাড়া কাউকেই সম্মোহিত করতে পারবোনা। সে হেমা মালিনী হোক কি ছাগল চরানি। তোর মতো ছাগলকে তাকে দিয়ে চড়িয়েই ছাড়বো। “

এতোক্ষণে যেন হজার পৌরুষ ওর মনের দরজায় ধাক্কা দিলো। থরহরির পা ছেড়ে মেরুদণ্ড সোজা করে উঠে দাঁড়ালো হজা।

–” আমি ছাগল? আমায় চড়াবে? কে? কে চড়াবে শুনি? ফুলটুসি বৌদি? রাখো তোমার তন্তরমন্তর, বশীকরণের ভুলভাল, আমি চাইনেকো, কোনোদিনও চাইবো না। বরং ওই চাইবে। দিন এলে পর তুমি দেখে নিও। ”
বলেই হনহন করে হাঁটা লাগালো হজা।
পেছন থেকে থরহরি ডেকেই চললো — ওরে শোন, শোন রে খ্যাপা, ওই ট্রাক তোর জন্য নয় রে, সব জমিতে সব চাষী লাঙ্গল চালাতে পারেনা। এ জন্যই শেয়াল বলেছিলো — আঙুরফল টক —“

ইতি প্রথম পর্ব সমাপ্ত।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।