সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ১৮)

সুন্দরী মাকড়সা

বাসে অটোতে পাশাপাশি বসেই এলো ওরা দুজন। কিন্তু ঋষি খুব সতর্ক। কোনোরকমে যেন স্নেহার কোনোরকম অসুবিধা না হয়। অটো থেকে নেমে যতোটুকু পায়ে চলা পথ পেরোতে হয়, সেটুকু পথ পেরোতে গেলে রাস্তার ওপরেই অল্প কজন পুরুষ ও মহিলা নানারকমের সবজি, মাছ এসব নিয়ে বসেন। দোকানগুলো দেখেই ঋষির রান্নাঘরের সবজির টুকরিটার চেহারা মনে পড়ে গেলো। আজ তাড়াহুড়োয় অফিসে আসার সময় খাওয়ার না খেয়েই আসতে হয়েছিলো ওর। পড়শুও কিছু না কিনেই চালিয়ে দিয়েছিলো। ঘরে যদিবা কিছু থাকে তাহলে অল্পকিছু আলু, আর দুএকটা পেঁয়াজ, ডিম আছে বেশ কয়েকটা।
— দাঁড়াও, কিছু সবজি কিনে নি। ঘরে কোনো সবজি নেই। মাছ খাবে? তবে আমি কিন্তু মাছ রাঁধতে পারি না। ডিম আছে ঘরে, সেটা খাওয়া যেতে পারে।
— ধুস বাজার কিসের জন্য? ঘরে চাল আছে তো?
এ কথার উত্তর দিতে গিয়েও একটু হোঁচোট খেলো ঋষি। গ্রামের ছেলে ও, মোটা চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত। স্নেহা কি সে চাল খেতে পারবে?
— উঁহু, দুজনের মতো নেই, আমারও আজ রাতের মতো হলেও কাল খেয়ে যাওয়ার মতো হবে না।
—- চালটা বরং কিনে নাও। আলু আর ডিম সেদ্ধ করে আজকের রাত চলে যাবে।
— ধুস, তোমার মাথাটা গেছে একেবারে। প্রথম দিন এসেছো, শুধু ভাতে সেদ্ধ ভাত খাওয়ালে সারাজীবন ধরে কথা শুনতে হবে।
কথাটা বলেই ঋষি বুঝতে পারলো ভুলটা। ও বোকার মতো তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিকে। স্নেহাও লজ্জায় মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
— কী বোকার মতো কথাটা বলে ফেললাম আমি! স্যরি, প্লিজ ফরগিভ মি স্নেহা।
স্নেহা ওর মুখের দিকে চাইলো। ওর সারা মুখ জুড়ে অপূর্ব সুন্দর হাসি। স্নেহাকে এতো সুন্দর কখনও দেখেনি ঋষি।
— তোমাদের এখানে চায়ের কোনো দোকান নেই? আর শোনো, প্রথমদিন ভাতে সেদ্ধ ভাত খাওয়াও ক্ষতি নেই, আমার কিন্তু রাতে খাওয়ার আগে বার দুয়েক আর ভোরবেলা দুকাপ চা চাইই চাই।
স্নেহার বলার ধরণ দেখে ঋষি পারিপার্শ্বিক সবকিছু ভুলে গিয়ে হা হা করে হেসে উঠলো। ভালো দামী চাল, আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, আর ভালো পাতা চা, দুধ চিনি এসব কিনে পাড়ার চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালো।

সিঁড়ির আলো জ্বেলে যখন ওরা দুজন যখন দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে উঠছে, তখন হঠাৎ করে ঋষির মনে হলো, ঘরের ভেতর ওই তো এক চিলতে তক্তপোষ। ওতে দুজনে শোবে কীকরে!

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।