গল্পবাজে পৃথা চট্টোপাধ্যায়

কোলাজ

শরৎকাল এলেই আমার মন কেমন করে। এই যে ঘাসের উপর আলতো করে ঝরে পড়ে শিউলি, সে শিশিরের কান্নার কথা জানে। কত মনের কথা শিশির বলেছে তাকে। শিউলির অনুরাগ যেন রাঙা হয়ে থাকে তার বৃন্তে। আমি কতবার শিউলি কুড়াতে গিয়ে ঘাসের কান্না কুড়িয়ে এনেছি। ঘাস আমাকে মাটির বিরহের কথা বলত। বিরহ কী ঘাসই আমাকে প্রথম বোঝাতে চেষ্টা করেছিল। বিরহ যে শুধুই বিচ্ছেদ নয়, দূরে থাকা নয়, দূরে চলে যাবার কষ্টের ভাবনার মধ্যেও যে অনন্ত ব্যথা লুকিয়ে থাকে সেদিন বুঝতে পারি নি। মাটির বুকে থেকেও ঘাসের এই বিরহ পরে বুঝেছি ‘দুঁহু ক্রোড়ে দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া’ একথা পড়ে। এদের সবার যে খুব কষ্ট তা আমি ছোটবেলা থেকেই জানি। আরও জানি গ্রীষ্মের দুপুরে অথবা শরতের গোধূলিতে চিলেকোঠায় জমে থাকে অনেক রঙের গল্প গাঁথা। এই সময় রং, তুলি, আঁকার খাতা নিয়ে আমি চলে যেতাম চিলেকোঠায় ছবি আঁকতে। যদিও আমার আঁকা হত না কিছুই। গ্রীষ্মের অলস ঘুম দুপুরে উত্তাপের আলোকবৃত্তে বেনীআসহকলার সপ্তাশ্ব রথে চড়ে মাঝে মাঝেই আসত এক জোতির্ময় রূপ। সে আমার চিলেকোঠা পেরিয়ে চলে যেত সদ্য পড়া ভুবনডাঙার মাঠে। আমার চোখ জুড়ে আসত ঘুম। ঘুমের ঘোরে দেখতাম ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছে সেই রাজকুমার আর দমকা হাওয়ায় উড়ছে তার রামধনু রঙের উত্তরীয়। আমার চিলেকোঠায় শরতের গোধূলি থাকত উৎসবের রঙে রঙিন। গো খুড়ে ওড়া ধূলিকণায় মিশে যেত উৎসবের রং। সেই রঙে আঁকা হত কত সুর, কত আল্পনা। একটা ঢেউ ভাঙা আলোর উচ্ছ্বাসে আমার সামনে এসে দাঁড়াত এক অপরূপ মেয়ে। তাকে ভালো করে দেখতে গেলেই ছায়া হয়ে দূরে সরে যেত।তাকে অনুসরণ করে চিলেকোঠা ছেড়ে আসতাম ছাদে মৃদু চাঁদের আলোয় খুব করুণ অথচ মধুর সেই মেয়ের মুখ।অনন্ত আকাশের নিচে জ্যোৎস্নাময়ী সেই মেয়েকে একা খুঁজতাম। কোন অনন্তে সে মিশে থাকত জানি না। আমার হাতে ধরা থাকত তুলি , চিলেকোঠায় ছড়িয়ে থাকত রং।সেই থেকেই একটা সুন্দরের কোলাজ এঁকে চলেছি আমি
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।