সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ২৯)

স্টেশন থেকে সরাসরি

২৮ শে মার্চ ২০২২
১১ ই চৈত্র ১৪২৮
সোমবার

চৈত্রের এই ভরদুপুরে বুকের গলিগালায় অকারণ যাতায়াত করে কেও একজন, শনাক্ত করতে পারি না, ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি। জানালার পর্দাটা বাতাসে সামান্য উড়লেই জোরজবরদস্তি ঘরে ঢুকে পড়ে উলঙ্গ রোদ, তাঁকে নহবতখানার পথ বাতলে দিয়ে ঢুকে যাই স্নানঘরে,সুগন্ধি সাবান আর প্যারাফিন বিহীন তেল খুঁজতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ব্লাউজে জমানো সেফটিপিন। কলে জল পড়ে একটানা।বিরক্তিকর সেই আওয়াজ,তবু তার নীচে লোহার একটা বালতি বসিয়ে ধুতে থাকি এযাবৎ-এর যাবতীয় স্পর্শ, এদের কোনোটা আমিষ কোনোটা নিরামিষ আবার কোনোটা মরুভূমিতে ডেসার্ট – এর মতো। ভেজা গায়ের জল শুকোতে ব্যস্ত তখন স্মৃতির ছদ্মপ্রশ্নে। কারা যেন ধাক্কাধাক্কি করে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো শরণার্থী, চোখ বন্ধ করলেই বুঝি বাইরে জমায়েত ভাঙছে। হইহল্লা, শব্দ, তীব্র…

বুঝি, একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর খোলস ত্যাগ করা ভীষণ প্রয়োজন বলেই এত তাড়া এত চিৎকার এত যানযট। কলতলা সমেত স্নানঘর প্রিয়তম যৌনসুখের মতোই বড্ড দামী। বুঝি, এই পাঁচ বাই পাঁচ বর্গক্ষেত্রের বাইরে আসলে একটা মাছের বাজার যেখানে মানুষ জমছে রোজ, পুকুর ভরছে পৃষ্ঠপাখনা আর পায়ুপথে।

অগত্যা পোশাক জড়িয়ে খুলে দিতে হয় দরজা। ফিরে এসেও ভুলে যাই চুল আছড়াতে, আয়না খুঁজি বালিশের তলায় । বিছানায় চাঁদ আসবে আজ সন্ধেতে, পুরনোটা তুলে বেগুনি রঙের গোলাপ প্রিন্ট ফুলছাপ সুতির চাদর পাতি,আর এককোণে বসিয়ে রাখি “শেষের কবিতা”র অমিতকে। ফাল্গুন যাবার সময় কানে কানে বলে গিয়েছিল, ‘পোড়ারমুখী তোর রূপেই মরণ’, অর্থ না বুঝেই আলমারিতে চাবি আটকে দিই । একখানা কালো জামদানী উঁকি মারে, চোখ টিপে হাসে। সাথে গাজর রঙের ব্লাউজের দেমাক।আমি বলি না কিছু শুধু একগাল হাসি ,মোটা করে কাজল পরি। চৈত্রে বড় অগোছালো হাওয়া বয়, টপটপ করে জল পড়া চুল কখন যে সন্ন্যাসীর মতো চোখের সামনে এসে ঝাপসা করে দেয় …
আমার ফাল্গুন আমার চৈত্র আমার বৈশাখ…

হাজার বালতি জল ঢালার পরেও শরীর ভেজে না কেন?… এ প্রশ্ন রহস্যের আড়ালেই থেকে যায় সমস্ত চৈত্র জুড়ে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।