সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (মালশা পর্ব ২২)

সিরিজ – সাবেক কথা

মালশা

“নিরাভরণ এই শরীর ছুঁয়ে দিলে এবার তারাখসা লিখবে কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রাখবে গোপন অস্ত্রশস্ত্র? ” জানি, উত্তর নেই তোমার ঝুলিতে। লিখে রেখেছ আকীর্ণ যা-কিছু সবেতেই এখন লালপিঁপড়ের দল। নিজেদের মতো রাস্তা গুছিয়ে নিয়েছে যারা তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারোনি দ্বিতীয়বার। ঘরের মেঝেতে তামার মালশা। জলপূর্ণ সেই পাত্রে ভেসে আছে কয়েকটি কুন্দ আর আমাদের যৌথ যাতায়াত। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছ বলে জানা যাচ্ছে না তোমার জন্য কি বয়ে নিয়ে আসার কথা ছিল ওই জলের, পৌঁছনোর কথা ছিল ঠিক কোন দুয়ারে।

আপাতত সেই পাত্রের গা ঘেঁষে জমছে শ্যাওলা। বহুকাল অনাহারে থাকার পর খাদ্যবস্তু যেমন অবসাদ হয়ে আসে তেমনই পুরাণ বর্ণিত মালশা এখন জলজ শরীরে ধারণ করেছে বিগত জন্মের মায়া। তুমি তো জলচর, নিমেষেই শরীরের গড়ন বদলে নাও, মৎস্যরূপী দেহে তখন কত চিহ্ন কত দাগ অথচ তোমার ক্ষত দেখতে পায় না কেউ।সকলের চোখে কালো কাপড়। মালশার জলে কিলবিল করে মাছ, হাজারো পোকামাকড়। এসব ছেড়ে তুমি কেন ফিরে যেতে চাও ঈশ্বরের চরণে? কেন লাল লিপস্টিক দেখে ভয়ে গুটিয়ে নাও জোড়া আঙুল? ভোগ বেড়ে বসে থাকা বৈবাহিকা জানে সবটুকুই হরিণমোহ।মোহ’র ভিতর সাপের ঘর,খোলস পড়ে আছে সর্বত্র , এসো ধুইয়ে দিই বরং ওই চরণজোড়া। অন্নভোগ আর পরমান্ন গ্রহণ করো। ওই আরেকটু দূর হেঁটে পৌঁছতে হবে চাঁদের কাছে। চলো, অগ্রসর হই। গোধূলি আসন্ন…

মালশার ভিতর অন্ধকার নেমে আসছে,ঘন বনে ঢুকে যাবার পর যেভাবে রাস্তা হারায় পথিক সেভাবেই ওই পাত্রের ভিতর অবসণ্ণ অলস সন্ধে। এদিকে মহাদেব স্নানের সময় ঘি মধু দুধ গঙ্গাজল সংগ্রহ করে কারা যেন ধুতরা আর আকন্দ রেখে গেছে ওই তামার মালশার ওপর। এবার কি করা উচিত?
আমি দাঁড়িয়ে আছি বেদীর পেছনে,বেনারসীর সুতোয় অঝোর বৃষ্টি। জলে জলে চপচপে ভিজে গেছে সবটুকু লাল, ক্রমশ আরও উজ্জ্বল আরও পূর্ণ হয়ে উঠছে এই মালশার রঙ। শরীর জুড়ে সমুদ্র, ভেসে যাচ্ছে প্রিয় কুন্দ, প্রিয় ঝিনুক আর অজস্র মুহূর্ত।

এবারও কি সেই দৃপ্ত উচ্চারণে বলে উঠবে
” ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায়
ধীমহি তন্নো রূদ্র: প্রচোদয়াৎ”

২৪ শে বৈশাখ
ইছাপুরের বাড়ি

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।