প্রবাসী ছন্দে নাসিমা রুবি (বাংলাদেশ)

একটি বিয়ের গল্প

চঞ্চলা কোমলমতী কিশোরী মেয়েটির আজ বিয়ে। তবে বিয়ে বাড়িটি কেমন যেন পানসে পানসে লাগছে। বাড়িতে কোনো মেহমান নেই, আয়োজন নেই, বাচ্চাদের হুড়োহুড়ি নেই, বাজি ফোটানোর ধুম নেই, গেইট প্যান্ডেল কিংবা ডেকোরেশন কিছুই নেই। তবুও আজ তার বিয়ে।

মেয়েটির মা সকাল থেকেই ব্যস্ত, ঠিক ওরকম ব্যস্ত থাকে বাড়িতে দু’চার জন মেহমান এলে। দুপুর বারোটার দিকে মেয়েটি বিয়ের গোসল করছে, তাও নিজে নিজেই। ঠিক যেভাবে রোজ গোসল করে।

গোসলখানায় শরীরে পানি ঢালতে ঢালতে তার মন আঁকুপাঁকু করে উঠলো। ভাবলো – ওইদিনও তো ছোনোরার বিয়ে গেলো, গোসল নিয়ে ছেনোরার বাড়িতে কত রকমের রং কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেছিলো নানি দাদীরা, সে নিজেও ছিলো ওই উৎসবে। কিন্তু আজ তার বেলায় তো কেউ নেই। পরক্ষণেই ভাবলো – ওহ্! থাকবে কেমন করে! তার বাবা তো কোনো লোকজন দাওয়াত করেনি।

ধপাস্ একটা আওয়াজ কানে এলো গোসলখানায়। উঁকি মেরে দেখতে পেলো উঠোনের সামনে দুইটা কলা গাছ রাখা হয়েছে, মাটিতে গর্ত করছে কেউ একজন। দেখতে দেখতেই গাছ দুটি পোতা হয়ে গেলো। একটা রশি গাছ দু’টিতে টান টান বেঁধে দিলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটাই তার বিয়ের গেইট।

বিয়েবাড়ির এসব দেখে মনে দুঃখের ঢেউ উথাল-পাতাল করছে মেয়েটির। তার বিয়ে অথচ বিয়ের কোনো অনুভূতিই পাচ্ছে না সে। জীবনে কতো জনের বিয়ে দেখেছে, কত সাজসজ্জা হয়েছে সেসবে। বাড়িভর্তি লোকজন কত আহ্লাদ করেছে সেইসব বিয়েতে।

গোসল সেরে এসব ভাবতে ভাবতে নিজের ঘরে গেলো। এর মধ্যেই বরযাত্রী চলে এসেছে। সাদা ধবধবে পাঞ্জাবীর ভিতর কুচকুচে কালো একটা মুখ, তাও আবার পাঁচ ফুটের চেয়েও খাটো। সাথে পাঁচ সাতজন লোক, হাতে একটা পুরোনো ট্যাঙ্ক।

মেয়েটিকে ঘরের পেছনে একটা পাটিতে বসিয়ে দিলো। নববধুর সাজে আজ সাজাবে তার কচি মুখখানা। পুরোনো ট্যাঙ্কটি সামনে আনা হলো। খুলতেই চোখে পড়লো একটা বিয়ের শাড়ি গোলাপি কালারের, তিন চারশো টাকার চেয়ে বেশি হবে না এর দাম। সাথে দুইটা সুতি শাড়ি , একটা ব্লাউজ, দুইটা পেটিকোট। কনে সাজানোর মত কোনো কসমেটিকস দেখা যাচ্ছে না ট্যাঙ্কে। তার আগের ব্যবহারের কসমেটিকস দিয়েই হালকা একটু সাজিয়ে দিলো তাকে।

বিয়ের কাজ সম্পুর্ণ হলে একটা রিকসায় বসিয়ে দিল বর কনেকে। একটা কাপড় পেচিয়ে পর্দা করে দিলো রিকসাটাকে। ওই যে বিয়ের বাজারের দুইটি মোটা কাপড় আর দুইটি পেটিকোট, তা দিয়েই যে কখন চার চারটি বছর চলে গেছে জীবন থেকে সে টেরও পায়নি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।