গুচ্ছকবিতামূলে রতন বসাক

১। জীবন পথে নারী

জন্ম নিয়েই প্রথম দেখি
মায়ের খুশি মুখ,
সময় মতো যখন তখন
পেলাম কত সুখ ।
বড় হতেই পেলাম আমি
একটা মিষ্টি বোন,
খেলার সাথী পেয়ে তাকে
ভরলো পুরো মন ।
পত্নী রূপে পেলাম আমি
এমন একটা ধন,
যার সেবাতে ঘরে এখন
সুখেই কাটে ক্ষণ ।
আমার ইচ্ছে পূরণ করতে
প্রভু দিলো বর,
কন্যা সন্তান দিয়ে আমার
আলো করে ঘর ।
জীবন পথে নারীর মতো
দামী কিছুই নাই,
ওরা সবাই ভালো থাকুক
এটাই আমি চাই ।

২।এমন নেতা

যখন কিছু ঘটে থাকে
সমাজের এই বুকে,
প্রতিবাদে মুখর হয়ে
বলে মানুষ মুখে ।
ক’দিন ধরে করবে মানুষ
প্রতিবাদের মেলা,
কিছু মানুষ দূরের থেকে
দেখবে শুধু খেলা ।
ধীরে ধীরে সবই যখন
ব্যস্ত হবে কাজে,
কিছু মানুষ বলবে হেসে
ওসব ছিল বাজে ।
প্রতিবাদে হয় না কিছুই
যতই আগে যাবে,
সবাই যখন ভুলে যাবে
বদনাম তুমি পাবে ।
যাদের হাতে শক্তি আছে
নিরব থাকে তারা,
মজা দেখে প্রতিবাদের
করতে পারে যারা ।
ভোটের আগে বলবে হেসে
এসে তোমার ঘরে,
পাবে নাতো দেখা তাদের
ভোটে জেতার পরে ।
ভাবতে হবে নতুন করে,
শক্তি দেবার আগে,
এমন মানুষ করবে নেতা
সবার কাজে লাগে ।
নেতার কথায় হতে পারে
অনেক কিছু ভালো,
মানব সেবায় মনটা যদি
রাখেন তিনি আলো ।

৩। মনের দ্বন্দ্ব

বাড়ি ছেড়ে নিজের জেদে
সবার কথা ফেলে,
টাকা পয়সা আয়ের জন্য
শহর গেলো ছেলে ।
শহর এলো গাঁয়ের ছেলে
অনেক আশা নিয়ে,
বহু লোকের ভীড়ের মাঝে
ফাঁসলো সেথা গিয়ে ।
মন লাগে না কোন কাজে
গাঁয়ের কথা ভাবে,
সকাল সন্ধ্যা ভাবতে থাকে
ঘরে ফিরে যাবে ।
ফিরে গিয়ে শহর থেকে
ভাবটা দেখায় এমন,
গাঁয়ের ছেলে হয়ে গেছে
শহরবাসী যেমন ।
আগের থেকে পাল্টে গেছে
গেঁয়ো ছেলের চলন,
গাঁয়ের মানুষ শুনেই হাসে
শহর বাবুর বলন ।
ভাবতে থাকে নিজের মনে
এ কি আমার হলো !
কোথায় থাকি শহর না গাঁও
কেউ তো এখন বলো ?

৪। পাখি

ভোরের থেকে গগন জুড়ে
উড়ছে পাখির দল,
সবুজ কচি ঘাসের ডগায়
শিশির ভেজা জল ।
সকালবেলা কূজন শুনে
ভাঙে রাতের ঘুম,
বনের মধ্যে চলতে থাকে
পাখি নাচের ধুম ।
উড়ে বসে এডাল ওডাল
যেদিক মনে চায়,
আবার কভু ডানা মেলে
ভেসে চলে যায় ।
কিচিরমিচির করতে থাকে
সূর্য ওঠার পর,
পাখির খেলা দেখার জন্য
বসে থাকি ঘর ।
চঁড়ুই টিয়া দোয়েল ময়না
উড়ে আসে কাক,
নানান সুরে হরেক শব্দে
শুনতে থাকি ডাক ।
সময় কাটে ওদের দেখে
সকাল থেকে রোজ,
কেউ ভেবোনা ধরার জন্য
ওরা কোনো বোঝ ।

৫। অপেক্ষায়

মাঝে মধ্যেই মনটা ভাবে
যখন একা থাকি,
ইচ্ছেগুলো আজও কত
রয়ে গেছে বাকি ।
অনেক স্বপ্ন হলো নাতো
আমার পূর্ণ করা,
এই জীবনে হয়তো বুঝি
থেকে যাবে খরা !
মনের খাঁচা শূণ্য করে
মন পাখি যায় দূরে,
ভাবি বসে তখন থেকে
আসবে সে কি ঘুরে ?
নতুন দেশে মনের সুখে
উড়বে বাঁধা খুলে,
এমন কিছু পেয়ে পাখি
যাবে নাতো ভুলে ?
তার অপেক্ষা করে আমি
থাকব দু’চোখ মেলে,
মনটা আমার ভরবে সুখে
আবার কাছে পেলে ।

৬। জলের মূল্য

পৃথিবীতে আছে তিন ভাগ জল
আর মাত্র এক ভাগ হলো স্থল ।
যদিও সব জল ব্যবহার যোগ্য নয়
সামান্য জল খাবারের জন্যই হয় ।
সেই জল অকারণে যদি করো নষ্ট
একদিন পেতেই হবে সবাইকে কষ্ট ।
জল ছাড়া বাঁচবে না কারো জীবন
জলের অভাবেই সবার হবে মরণ ।
অর্থের দম্ভে কেউ জল করে অপচয়
মনে রেখো সবাই এটা কিন্তু ঠিক নয় ।
একদিন এই জল পাবে না দিয়ে অর্থ
যতই খরচা কর না কেন সব হবে ব্যর্থ ।
জল পেতে কেউ লম্বা লাইনে দাঁড়ায়
কেউবা জল দিয়ে গাড়ি ধুয়ে ভাসায় ।
কেউ-কেউ বোঝেনা জলের কোন মানে
তারা শুধু বোঝে অভাব আছে যেখানে ।
জল কেউ যেন করোনা নষ্ট অকারণে
অপচয় করব না, কথাটি রেখো মনে ।
তবুও কেউ যদি জল করে থাকে নষ্ট
বোঝাও তাকে জলের মূল্যটা স্পষ্ট ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।