গল্পেরা জোনাকি তে নীল মিত্র

র – অফিসার
সঙ্গিতা বসাক কলকাতার মেয়ে। কলেজের পড়া শেষ করে চাকরি পেয়ে দিল্লি চলে গেছে। মাঝে মাঝে কলকাতাতে আসে। ওর এক মাসি থাকে এখানে। বাবা মা মারা যাওয়ার পর এই মাসির কাছেই ও বড়ো হয়েছে।
আজ দিল্লি থেকে আসা সব ট্রেন-ই অনেক দেরী করছে কুয়াসার কারণে। রাত ১২টার সময় এসে পৌঁছালো শিয়ালদহ স্টেশনে। অগত্যা একটা ওলা ক্যাব বুক করে রওনা দিলো সোদপুরের দিকে। ক্যাবের ড্রাইভারটাকে দেখে সঙ্গিতার বিশেষ সুবিধার মনে হয়নি। চাপ দাঁড়ি, পরনে জিন্স আর লাল টি-শার্ট। সঙ্গিতা বুঝতে পারলো ড্রাইভারটা মদ খেয়েছে, ওর মুখ দিয়ে এখন ও গন্ধ বেড়োচ্ছে। যাক কিছু করার নেই। এতো রাতে বাড়ি তো পৌঁছতে হবে।
গাড়ির কাঁচগুলো তুলে এ.সি. চালিয়ে দিলো। তারপর চলতে লাগল গাড়ি। দমদম অব্দি যাওয়ার পর গাড়িটা ডানদিকে ঘোড়ানোর কথা। কিন্তু ড্রাইভার বাম দিকের রাস্তাটা ধরলো। সঙ্গিতা ওকে বললো ডান দিকে চলুন। ড্রাইভার বললো বামদিক দিয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা আছে, তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবেন। হয়তো নতুন কোন রাস্তা হয়েছে, সঙ্গিতা জানে না, তাই কিছু না বলে বসে রইল। রাস্তাটা ভীষণ ফাঁকা, লাইট ও বিশেষ নেই এদিকে। একটু ভয় পাওয়ার-ই কথা একা মেয়ে তাও এতো রাত হয়েছে। কিছু দূর যাওয়ার পর ড্রাইভার হঠাৎ গাড়িটা দাঁড় করিয়ে দিল। সঙ্গিতা কিছু বলার আগেই ড্রাইভার পিছন ফিরে একটা চাকু ধরলো সঙ্গিতার গলায়, বললো চুপ করে বসে থাকো, একটু আওয়াজ ও করবে না। টাকা, গহনা যা আছে চুপচাপ বার করে দাও নয়তো গলা কেটে ফেলবো।
এরপর যা ঘটলো তা ড্রাইভার ভাবেও নি। সঙ্গিতা হাতদুটোকে তুলে একটা রদ্দা বসিয়ে দিলো ড্রাইভারের গলায়। ড্রাইভার লোকটা পড়ে গেলো সিটের উপর। ওকে সরিয়ে সঙ্গিতা ড্রাইভিং করতে লাগল। সোজা নিয়ে গেল সোদপুর থানায়। থানার বড়ো বাবু পুরো ঘটনাটা শুনে বললেন বাহ আপনি দারুণ সাহসিকতার কাজ করেছেন। কিন্তু এতো রাতে একলা মহিলা হয়ে আপনি কেনো বেরোলেন স্টেশন থেকে? এভাবেই তো বড় ঘটনা ঘটে যায়। আচ্ছা ম্যাডাম আপনি দিল্লিতে কি কাজ করেন? তখন সঙ্গিতা ওর আই. কার্ড-টা দেখালো অফিসারকে। আই. কার্ড দেখে অফিসার চেয়ার থেকে উঠে স্যালুট করলেন সঙ্গিতাকে। সঙ্গিতা একজন “র” অফিসার। ইন্ডিয়ান ইন্টিলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট এ কর্মরত। তারপর সেই অফিসার জিপে করে সঙ্গিতাকে ওর মাসির বাড়ি পৌঁছে দিলেন।