গারো পাহাড়ের গদ্যে মোহাম্মদ শামীম মিয়া

অসাধারণ নৌভ্রমণ

এইবার ঈদুল আজহার সময় পুরো এক সপ্তাহের ছুটি পেয়ে কর্মস্থল গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর সুহিলপুর মৌলভীবাড়ি ছুটে এলাম। নিজের জন্মস্থানে এসে ঈদ উদযাপন করতে পেরে সত্যি ই অভিভূত হলাম। সবার সাথে মিলেমিশে আনন্দ উপভোগ করার তুলনা হয় নাই। নিজ গাঁয়ের রূপ ও প্রকৃতির ছোঁয়া পেয়ে মন ভরে গেলো। তো এইবার ঈদুল আজহায় অন্যরকম আনন্দের দেখা পেলাম। ঈদের তৃতীয় দিন সুহিলপুর রানিং প্লেয়ার এসোসিয়েশন আয়োজিত নৌভ্রমণ ছিলো অতুলনীয়,
জীবনের সেরা উপভোগ্য ও বৈচিত্র্যময় আয়োজন। ঐদিন সকালে সুহিলপুর বাজারের পূর্ব দিকে বাকাইল নৌকা ঘাটে আমরা সবাই সমবেত হলাম,কথা ছিল ঠিক সকাল নয়টায় নৌকা ছেড়ে যাবে। তবে অনেকের আসতে দেরী হওয়ায় সকাল এগারোটার একটু আগে নৌকা ছেড়ে গেলো। এর আগে আমরা সবাই বাকাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে ফটোসেশান ও দোয়ার
পর্ব শেষ করে নিলাম। আল্লাহর নামে সবাই যাত্রা শুরু করলাম। নৌভ্রমণে এলাকার অনেক গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সবার অংশগ্রহণ ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত। শান্ত তিতাসের স্বচ্ছ জলে নৌকা ছুটে চললো গন্তব্যের উদ্দেশে।খলাপাড়া, মীরহাটি,ঘাটুরা
পেরিয়ে নৌকা এসে পৌঁছে গেলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডায়। তারপর আনন্দ বাজার পেরিয়ে শিমরাইল কান্দি। পথে যাওয়ার সময় রহিছ মিয়া বাবুর্চি ও তার দলবলসহ রান্না করার জন্য নেমে পড়লো তিতাস নদীর পূর্ব পাড়ের এক ব্রিকফ্লিডের মনোমুগ্ধকর জায়গায়। নদী-খাল-বিল-ঝিল পেরিয়ে নৌকা ছুটে চললো, রোদ থেকে রক্ষা পেতে নৌকার ওপরে ত্রিফাল দিয়ে সামিয়ানা টানানো ছিলো। আমাদের অধিকাংশ ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহ ছিল নৌকার ওপরে বসা, এমনকি আমিও বাদ যাইনি। নৌকায় ধারণ ক্ষমতা ছিলো ১৫০ জনের মতো,তবে আমরা ছিলাম মাত্র ৭০ জনের মতো। পথে যেতে যেতে নাচে গানে,গল্প-আড্ডায় অসম্ভব সুন্দর কাটছিলো। এর ফাঁকে আমিও সবার অনুরোধে দু-তিনটি কবিতা উপস্থাপন করে নিলাম। আমার কবিতা শুনে সবাই খুবই খুশি হলেন। নৌকা গিয়ে পৌঁছালো আখাউড়ার খড়মপুর খ্যাত হযরত শাহ্ পীর কল্লা শহীদ (রঃ) মাজারে। ওখানে সবাই নেমে পড়লাম,নামাজ পড়লাম,সকলের মঙ্গলের জন্য দোয়া করলাম। ওখানে ৪০ মিনিটের মতো অবস্থান করে আবারও নৌকায় উঠে পড়লাম। ছুটে চললো আমাদের
নৌকা,ফিরতে ফিরতে অনেক সুন্দর দৃশ্যের দেখা মিলল, কেউ কেউ ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় মাছ ধরতে ব্যস্ত, ছোট ছোট ছেলেরা ব্রিজ থেকে বন্যার পানিতে লাফিয়ে পড়ে সাঁতার কেটে তীরে উঠছে। পৌনে চারটায় নৌকা এসে পৌঁছে গেলো সেই ব্রিকফ্লিডে যেখানে বার্বুচি রহিছ মিয়া ও তার দলবলসহ রেখে গিয়েছিলাম। সবার তখন খুবই পেটে খিদে পেয়েছিল, নৌকা থেকে নেমে আমরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। নৌকা আবারও ছুটে চললো নবীনগরের রসূলপুরের উদ্দেশ্য,কাউতলীর রেললাইন ও সড়ক ব্রিজ দুটি পেরিয়ে নৌকা এসে পৌঁছে গেলো রসূলপুর। অনেক সুন্দর জায়গা,অনেক মানুষের ভীড়ের মাঝে কিছু সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার আগমুহূর্তে আবারও নৌকা বাঁকাইলের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। নৌকায় ফিরতে ফিরতে লাটারী ড্র হলো,অনেকে পুরস্কার পেলেন। নৌকা যখন চলছিল তখন মোবাইলে খবর পেলাম আমাদের সহযাত্রী সাত কি আট জন উঠতে পারেননি,
ওনারা পরে বিকল্প পথে ফিরে এলেন। নৌকা থেকে কাউতলী কেউ কেউ যাতায়াতের সুবিধার জন্য নেমে পড়লেন। আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। আমি সাহস করে নৌকাতেই রয়ে গেলাম। তিতাসের বুক ছিঁড়ে মাঝ নদীর মধ্য দিয়ে নৌকা ছুটে চললো। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এসে পৌঁছে গেলাম বাকাইল বাজার নৌকা ঘাটে। দিন শেষে এইভাবে একটি সুন্দর নৌভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।