গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, এফ.এফ. সৈনিক নম্বর-১৩৩৪৩২৪, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর-০৩০৪০৩০০৪৯, সমন্বিত তালিকা নম্বর-০১৬৯০০০২৩১৫, মোবাইল নম্বর-০১৭২৪৬৯৬৬৭০, পিতা ঃ আবুল কাশেম, মাতা ঃ ফাতেমা বেগম, স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম ও ডাকঘর ঃ দয়ারামপুর, উপজেলা ঃ বাগাতিপাড়া, জেলা ঃ নাটোর। বর্তমান ঠিকানা ঃ ঐ।
আবুল কালাম আজাদদের কোন বোন ছিল না। ২ ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন বাবা মায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের চাকুরীর জন্য নির্বাচিত হন। পশ্চিম পাকিস্তানের রেসালপুর ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেনিং সেন্টারে ৬ মাস প্রশিক্ষণ শেষে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানের খারিয়া ক্যান্টনমেন্টে পদায়ন করা হয়। সেখানে চাকুরীরত অবস্থায় ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের পটুয়াখালি ও ভোলায় প্রলয়ংকারী ঘুণিঝড় আঘাত হানে। ঘুর্ণিদুর্গত এলাকার মানুষদের সাহায্যের জন্য পাকিস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সি কোম্পানীকে পুর্ব পাকিস্তানের যশোর ক্যান্টমেন্টে বদলী করা হয়। সেখান থেকে আবুল কালামদের সন্দিপ, হাতিয়ায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে ৩ মাস দায়িত্ব পালন করার পর তারা যশোর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসে। ইতোমধ্যে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সেনারা মনে মনে বেশ খুশি হন। কারণ চাকুরীকালীন সময়ে তারা সব সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবাঙালি সেনাদের হাতে নানা অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হতো। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তহর না করায় দেশে প্রচন্ড গণআন্দোলন শুরুর হয়। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে থেকেও অবুল কালাম আজাদরা তার আঁচ অনুভব করতে পারছিলেন।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা সারা বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরিহ মানুষদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে মানুষ হত্যা শুরু করে। বিভিন্ন সুত্র থেকে আবুল কালাম আজাদরা তা জানতে পারছিল। কিন্তু ক্যান্টমেন্টের নিরাপদ আশ্রয়ে থা্কার পরও যে শুধু মাত্র বাঙালি হওয়ার অপরাধে তাদের উপর আক্রমণ করা হলো তা ভাবলেই আজও তার গা শিউরে ওঠে। ২৫ মার্চের আগেই যশোর ক্যান্টমেন্টের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সকল বাঙালি সেনাদের সীমান্ত এলাকায় ডিউটিতে প্রেরণ করা হয়েছিল। ২৯ মার্চ সীমান্ত ডিউটি শেষ করে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসার পর অস্ত্র জমা নিয়ে পরের দিন ভোর বেলায় তাদের উপর পাঞ্জার ও বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা অতর্কিতে আক্রমণ করে অসংখ্য বাঙালি সেনকে হত্যা করে। আবুল কালাম আজাদসহ কিছু ভাগ্যবান সেনারা সেদিন কোন মতে জীবন নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারপর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলা, লালগোলা ক্যাম্প হয়ে তাকে বালুরঘাট সীমান্তে পোস্টিং দেওয়া হয়। সেখানে ক্যাপ্টেন রশিদের নেতৃত্বে বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার আর মোজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটা কোম্পানী গঠন করা হয়। জুলাই মাসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে আসার পর আবুল কালাম আজাদকে লালগোলা অপারেশন ক্যাম্পে ফিরিয়ে এনে তার নেতৃত্বে ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা প্লাটুন গঠনকরে তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করা হয়। এই ক্যাম্প থেকে তারা মাঝে মাঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন শত্রুসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করে আবার নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসতেন।
বিলাবাড়িয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ ঃ রাজশাহী জেলার লালপুর থানার বিলাবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজাকার ও মিলিশিয়াদের ক্যাম্প ছিল। লালগোলা থেকে আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপটি বিলাবাড়িয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করলে ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। বাকি ১০ জন তাদের নিকট সারেন্ডার করে। সকল বন্দীদের সাথে নিয়ে তারা পদ্মার চরের খাজুরা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ফিরে আসে। এই ঘটনার কিছু দিন পর তারা লালপুর এলাকার গণপরিষদ সদস্য জিল্লুর রহমানের বাড়িতে অবস্থান করছিল। এই খবর পেয়ে রাজাকার কমান্ডার ঘুঘু মেকার নাটোরে গিয়ে সেনাবাহিনীকে ডেকে আনে। তারপর উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার পর শত্রুরা তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে পিছু হটে যায়। এই যুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধাও শহিদ হন। শত্রুসেনাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রগুলো জব্দ করে তা খাজুরিয়া ক্যাম্পে জমা দেওয়া হয়। তারপর তারা পাবনা-রাজশাহী রোডের আহম্মদপুর ব্রিজ পাহারারত রাজাকার ক্যাম্পের উপর আক্রমণ চালালে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। ৩ জন রাজাকারকে জীবিত ধরে এনে তাদের হত্যা করা হয়। ডিসেম্বর মাসে নিয়মিত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপটি ঝলমলিয়া ডাকবাংলো পাকিস্তানি সেনা ক্যম্পে আক্রমণ চালালে তারা কোন প্রতিরোধ যুদ্ধ না করে সব ফেলে নাটোর পালিয়ে যায়। তার মাত্র কয়দিন পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আবুল কালাম আজাদদের মতো নিভর্ীক মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। তাইতো আমাদের সব সময় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।