দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২২৫)

পর্ব – ২২৫

অনসূয়া বুঝতে দিলেন না যে তিনি একটু অবাক হয়েছেন। আর একটু বিরক্তও হয়েছেন। মুখে হাসি টেনে এনে বললেন, মেয়ের সাথে দেখা হয়েছে? বাসন্তীবালা বললেন, মেয়ে তো অঘোরে ঘুমোচ্ছে। কোনোদিন তো দুপুরে এভাবে ঘুমিয়ে পড়তে দেখিনি ওকে। সব সময় হয় পড়ছে নয় লিখছে।
অনসূয়া কাজের সহায়িকার উদ্দেশে বললেন, দিদি, এঁদের চা জলখাবার দাও।
ভিতর থেকে উত্তর এল, এই যে দিই। প্লেট সাজিয়ে ফেলেছি।
শশাঙ্ক পাল বললেন, এবাড়িতে বহু বছর পর এলাম। সব দেখছি এক‌ই রকম আছে।
অনসূয়া স্মিত মুখে বললেন, আপনারা বসুন। আমি কোর্টের কাপড় বদলে আসি।
শ‍্যামলী যে ঘরে শুয়ে ছিল, সে ঘরে ঢুকে তিনি শ‍্যামলীকে ঠেলে তুললেন। বললেন, দ‍্যাখ, কারা এসেছেন। তারপর তিনি নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন।
শ‍্যামলী মুখে চোখে জল দিয়ে বাবা মায়ের সামনে বসল।
বাসন্তীবালা বললেন, আমার ওপর অভিমান করে চলে এলি?
শশাঙ্ক পাল বললেন, বাড়িতে চ।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, কলেজ হোস্টেলে থাকার জন‍্য দরখাস্ত করেছি। সেটা অ্যাপ্রুভ হয়েছে।
বাসন্তীবালা বললেন, হোস্টেলে থাকবি? নিজের বাড়ি ফেলে?
শ‍্যামলী বলল, মেয়েদেরকে তো পরের বাড়ি পাঠাতে মায়েরা নিজেকে তৈরি রাখে। মনে করো না, আমি অন‍্য কারোর বাড়িতে থাকছি।
শশাঙ্ক বললেন, আমি তোকে অনেকদিন আগেই বলেছি। বিয়েটা করে ফ‍্যাল, নন্দীদের ফ‍্যামিলি ভাল। ওখানে থেকে পড়তিস।
শ‍্যামলী বলল, বাবা, গতসন্ধ‍্যায় ওঁদের বাড়ি গিয়েছিলাম। রমানাথবাবু আর তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করে বিদায় নিয়ে এসেছি।
বাসন্তীবালা বললেন, তুই কাল ওদের বাড়ি চলে গিয়েছিলি?
শ‍্যামলী বলল, হ‍্যাঁ মা। জ‍্যেঠিমাকে বলে এলাম আমি একজন কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। আর বাড়ি থেকে আমি বেরিয়ে এসেছি।
বাসন্তীবালা বললেন, এইসব কথা তুই ওদের বললি?
শশাঙ্ক বললেন, আজ হোক কাল হোক, রমানাথের সঙ্গে তোর বিয়ে হবে। এসব কথা ওদের বলে তুই ঠিক কাজ করিস নি। পাঁচকান হতে কতক্ষণ?
না বাবা, পাঁচকান যাতে হয়, তার বন্দোবস্ত করেই এসেছি।
বাসন্তীবালা বললেন, নিজের ভাল পাগলেও বোঝে। তুই কি নিজের ভাল কিছুতেই বুঝবি না?
শশাঙ্ক রুক্ষ স্বরে বললেন, এরপর রমানাথ যদি তোকে বিয়ে না করে, তোর কি গতি হবে, বুঝতে পারছিস? কলেজের হোস্টেলে তোকে কদিন রাখবে?
শ‍্যামলী বলল, না রাখলে নাই থাকলাম বাবা। যখন যা হবে, দেখা যাবে। আমাকে নিয়ে তুমি আর ভেবো না বাবা। মনে কোরো, একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলে। ভোর হতে সে দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে।
অনসূয়া কাপড় বদলে চলে এসে সোফায় বসে বললেন, রমানাথ বাবুর সাথে যদিও আমার পরিচয় নেই, তবু আমি জেনেছি শ‍্যামলীর সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছিল।
বাসন্তীবালা বললেন, হচ্ছিল মানে, সব ফাইনাল হয়েই গিয়েছিল। মাঝখান থেকে তার বাবা হঠাৎ করে মারা না গেলে অ্যাদ্দিনে চারহাত এক হয়েই যেত।
সহায়িকা খাবার টেবিলে খাবার গুছিয়ে ডাকল সবাইকে।
শশাঙ্ক বললেন, এ বাড়িতে আমি আগে অনেকদিন খেয়ে গিয়েছি। কিন্তু আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না।
অনসূয়া বললেন, বাবার আমলে কিন্তু কেউ এবাড়ি থেকে না খেয়ে যেত না। আশা করি, তিনি নেই বলে এবাড়ির সেই সুনাম আপনি নষ্ট করবেন না। আমাকে যদি আপনার ভাল নাও লেগে থাকে, বাবার সাথে সম্পর্কের কথা মনে করে একটুখানি খেয়ে নিন।
শশাঙ্ক আর প্রতিরোধ করতে পারলেন না। খেতে বসলেন।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।