কবি শেলি: প্রয়াণলেখা – লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পরিশেষ’ কাব‍্যগ্রন্থের “প্রশ্ন” কবিতায় ভগবানকে প্রশ্ন করেছেন যারা পরিবেশ দূষণ করছে, সংস্কৃতিকে আক্রমণ করছে, বিচার ব‍্যবস্থাকে প্রহসনে পর্যবসিত করছে, তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে, অশেষ ক্ষমাশীল তিনি তাদেরকেও ক্ষমা করেছেন কি না। কিন্তু কবিতাটি আগাপাশতলা খুঁটিয়ে পড়লে বেশ বোঝা যায় কবি চান না, ভগবান ওদের ক্ষমা করুন। অথচ চালু অর্থে যারা ভক্ত, তারা জানেন ঈশ্বরের সকল কাজ মানুষের প্রশ্নের অতীত। এই চালু অভ‍্যাসটাকে আঘাত করেই কবি প্রশ্ন করছেন, তুমি কি বেসেছ ভাল? ভাবখানা যেন এই, তুমি যদি বেসেও থাকো, সে কাজটা ভালো করো নি। ঈশ্বরের দৈবী মাহাত্ম্যটাকেই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন কবি, আর বললেন মানুষী যুক্তিবিচারের কাছে কৈফিয়ত দেবার দায় স্বয়ং ঈশ্বর পর্যন্ত এড়িয়ে যেতে পারেন না। “ধর্মমোহ” কবিতায় কবি এমন কি নাস্তিকের গুণগান পর্যন্ত করেছেন।
মহাকবি পি বি শেলি ( ৪ আগস্ট ১৭৯২ – ৮ জুলাই ১৮২২) র কবিতা আবার প্রকাশকেরা ছাপাতেই সাহস করতেন না। কেননা, তাঁরা আশঙ্কা করতেন শেলির লেখায় ঈশ্বরের মহানুভবতার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে ও রাষ্ট্রের সর্বাত্মক কর্তৃত্বকে প্রশ্নের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশকদের আশঙ্কাকে অমূলক বলে লাভ নেই। কেননা, শেলি, ১৮১১ সালে বছর ঊনিশের কৈশোর ছাড়ানো সদ‍্যোতরুণটি, লিখেছেন দি নেসেসিটি অফ এথেইজ়ম। ১৮১২ তে লিখেছেন ডিক্লারেশন অফ রাইটস, ১৮১৫ তে লিখেছেন অন এ ফিউচার স্টেট। রাষ্ট্র ও তার বিচারব‍্যবস্থা প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ডের যৌক্তিকতা ন‍্যায়গ্রাহ‍্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে ধরেন শেলি। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে শেলি কি চোখে দেখতেন, তা তাঁর এই কবিতায় প্রতিভাত
ENGLAND IN 1819
An old, mad, blind, despised, and dying king,–
Princes, the dregs of their dull race, who flow
Through public scorn, mud from a muddy spring,–
Rulers who neither see, nor feel, nor know,
But leech-like to their fainting country cling,
Till they drop, blind in blood, without a blow,–
A people starved and stabbed in the untilled field,–
An army which liberticide and prey
Makes as a two-edged sword to all who wield,–
Golden and sanguine laws which tempt and slay;
Religion Christless, Godless, a book sealed,–
A Senate—Time’s worst statute unrepealed,–
Are graves from which a glorious Phantom may
Burst to illumine our tempestuous day.
কবিতা লিখে শেলি বিশ্বসেরা। ১৮১৯ এ লিখেছেন ওড টু দি ওয়েস্ট উইণ্ড, ১৮২০ তে যথাক্রমে প্রমিথিউস আনবাউণ্ড, টু এ স্কাই লার্ক, আর দি ক্লাউড।
তাঁর কবিতা প্রভাবিত করেছিল মহান দার্শনিকদের। কার্ল মার্ক্স, বার্ট্রান্ড রাসেল, মহাত্মা গান্ধী যাঁদের অন‍্যতম। লেখকদের মধ‍্যে বিশ্ববরেণ্য লিও টলস্টয়, বার্নার্ড শ, অস্কার ওয়াইল্ড এর রচনায় শেলির ভাবনার স্পষ্ট ছাপ আছে।
শেলি তাঁর গদ‍্য রচনায় জগৎ জীবন, রাষ্ট্রের একতিয়ার নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর লেখায় প্লেটো, ফ্রান্সিস বেকন, জাঁ জাক রুশো ও নেপোলিয়নের কথা এসেছে। তীব্র রোমান্টিক এই কবি আশাবাদীও। তিনি বলেন If winter comes, can spring be far behind? এক আলোকময় জগতে উত্তরণের কথা বলেন শেলি, যার চাবিকাঠি রয়েছে মুক্তিপিপাসু মানুষের হাতে।
ইংরেজ মহাকবি শেলির আজ প্রয়াণদিবস। ১৮২২ সালে আজকের দিনে ২৯ বৎসর বয়সে নৌকাডুবির ঘটনায় মারা যান। জন্মেছিলেন ১৭৯২ এর আগস্টের ৪ তারিখে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।