কবিতায় মীনাক্ষী রায়

মল্লিকার ব্যাখ্যান

মৃত্যুর পর, দেহ যখন পুড়ছিল চিতার আগুনে,
মল্লিকা পৌঁছেছিল ভগবানের সামনে….
“মল্লিকা, কেমন ছিল এই ঊর্ধ – পঞ্চাশের জীবন?
শোনাও তোমার ভালো-থাকা ও মন্দ-থাকার উপাখ্যান ।
শুনেছি, ফুল ফোটাতে ভালোবাসতে তুমি,
কি হতে চায় পরের জন্মে মন?”
মল্লিকা হাসে মন-খারাপের হাসি …
” যা-হোক কিছু,
শুধু চাই একখানি মন,
বাবুই পাখির বাসার মতন,
ছোট এবং ছিদ্র হীন।”
ভগবান হেঁকে বলে দরাজ গলায়,
“এই যে দিয়েছিলাম এক-আকাশ মন,
ছিলে না কি খুশি ?”
” সেখানে আলো, আঁধার, তুফান …
সব কিছু ঢুকে পড়ে বড় বেশি ।
নিঝুম বর্ষা, বসন্ত বিকেল,
তুলো-মেঘ শরৎ আর কঠিন শীত,
বর্তমান আর অতীত,
সদাই বানভাসি …
আগল দেওয়ার ছিল না কোন উপায়
চোখের জলের অহেতুক অপচয়।
শোনো, তবে একে একে বলি….
বাগানে ফুল ফুটিয়ে ছিলাম অনেক
কিন্তু সেই যে গাছখানি গেরুয়া জবার,
এক গ্রীষ্মে শুকিয়ে গেল যার সমস্ত শিকড়
মন- খারাপে ভরে রইল বহুদিন এক- আকাশ মন,
কত রাত স্বপ্নে খুঁজেছি হারিয়ে যাওয়া গেরুয়া রং।
এক- আকাশ মন,
অন্ধকারে পাড়ি দেয় বহু যোজন পথ
শিরিষে আর কৃষ্ণচূড়ার ফুলে
খুঁজে বেড়ায় পুতুল খেলার দিন।
কাল- বৈশাখীর কালো ঘোড়ার দল,
জমে যখন ঈশান কোণের কোলে।
ঝামর হয়ে বৃষ্টি নামে লক্ষ ঘুঙুর পায়ে,
ইচ্ছে জাগে মনে,
তুফান তুলি ঘুমর নেচে
কাছ-অকাজের হিসেবে রাখি তুলে ।
এক-আকাশ মন,
জানলা থেকেই দু’হাত দিয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে ভাবে
এত যদি না থাকত শাসন!
যখন গভীর রাত্রি বেলা
আকাশ খেলে চাঁদের সাথে সখা-সখি খেলা,
ইচ্ছে করে খুলে রাখি,
বন্ধ ঘরের সকল কটি জানলা।
এক-আকাশ মন,
চুপটি করে ভাবে বসে পর্দা ঢাকা ঘরে,
যদি না থাকত শতেক খানি বারণ,
পাঠিয়ে দিত চাঁদের বাড়ি গোপন নিমন্ত্রণ !
ভাবে বসে এক- আকাশ মন,
দিন- রাত্রির হিসেব যদি যেত ভোলা,
পারত যদি বসতে কোথাও এক্কেবারে একলা
কথা যত যায় না কাউকে বলা,
সকল টুকু ভাসিয়ে দিত অন্ধকারে মুড়ে
দিগন্তরের দিশায়—-
এত যদি না থাকত বারণ!
অতীত কালের কত কান্না হাসি
গুছিয়ে রাখা সকল কিছু,
এক্কেবারে মনের ভিতর ঘরে।
যেদিন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যায়,
ঘুম দেয় না সাড়া—
এক-আকাশ মন,
চুপিসাড়ে পার হয়ে যায়
বাহির ঘরের কত শত দরজা।
ইচ্ছে করে সারাটি রাত ধরে,
নিশ্চিন্তে থাকি বসে মনের ভিতর ঘরে।
জড়িয়ে ধরি বুকের মাঝে কান্না হাসি যত,
সারিয়ে তুলি মনের ভিতর গোপন যত ক্ষত ।
এক-আকাশ মন,
ভুলে গেলে সম্পর্কের সকল অনুশাসন?
কষ্ট খুবই লালন করা,
বাঁধন-ঘেরা এক-আকাশ মন—-
দিও এবার এমন একটি মন,
যেমন একরত্তি বাবুই পাখির বাসা
ছোট্ট এবং এক্কেবারে ছিদ্রহীন।”
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।