সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র)

ফেরা

সকাল থেকেই কথা বারবার ঘরবার করছে ৷ মা বলেছে আজ বাবা বাড়ী আসবে ৷ গতবছর পূজোর পরেই বাবা কাজ করতে ব্যাঙ্গালোর গেছে ৷ মা বাড়ী বাড়ী ঠিকা কাজ করে ৷ পেশায় রাজমিস্ত্রী কথার বাবা ৷ গরীবের কেটে যাওয়া সংসার হলেও বাবা মা মেয়েকে আদর করে নাম রেখেছে রূপকথা ৷বাবার মনের রাজকন্যা ৷ বাবা টাকা পাঠায় মাকে দুতিন মাস অন্তর অন্তর ৷ হাতে মা হাত দেয় না বলে রেখে দিচ্ছি তোর পড়াশোনা আর বিয়ের জন্য ৷ বৈশাখের ঝড়ে কুঁড়েঘরটা লড়বড়ে হয়ে গেছিলো ৷ মা তাই বাবুদের বাড়ী গুলো থেকে পূজার শাড়ি জামা না দিয়ে বোনাস হিসাবে টাকা চেয়ে নিয়েছে ৷ সেই টাকা দিয়ে ঘরটাকে টুকটাক সারিয়েছে ৷ কিন্তু কথার মনটা আজ খুব খারাপ৷ মায়ের কাছে পূজার জন্য জামা আর একটা নতুন জুতা চেয়েছিল ৷কথার সব বন্ধুদের মায়েরা বাবুঘর থেক টাকা নিয়ে কিনে দিয়েছে নতুন জামা জুতো ৷ কিন্তু কথার মা বলেছে বাবক মহালয়ার দিন সুবলকাকুর দোকানে ফোন করে বলেছে এবার পূজায় বাড়ী আসবে আর কথার জন্য রাজকন্যার মত জামা -জুতা ও মায়ের জন্য নাকি শাড়িও আনবে বলেছে ৷ বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো আসছে না কেনো বুঝতে পারছে না কথা ৷ কখন জামা পড়বে !কখন অঞ্জলি দেবে! তাই বার বার মাকে জিজ্ঞাসা করছিলো “মা আর কত দেরি ? বাবা কখন আসবে ??” কথার মারো যে চিন্তা হচ্ছিল না তা নয় ৷ ভোর চারটায় ট্রেন পৌঁছানোর কথা সেই ট্রেন এখন বারটার সময়েও আসলো না কেনো বুঝতে পারছে না ৷ অভিমানে কথার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল৷ সব বন্ধুরা নতুন জামা পরে পাড়ার মন্ডপ থেকে অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়ে এসেছে ৷ হঠাৎ সুবলকাকুকে বাড়ীর ভিতরে আসতে দেখে মাকে ডাক দেয় কথা ৷ দেখে কাকুর হাতে একটা নতুন জামা আর জুতার প্যাকেট ৷ সুবলকাকু প্যাকেটটা কথার হাতে দেয় ৷কথা প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা রাজকন্যার মতো সুন্দর জামা আর জুতা ৷ আনন্দে চিৎ করে ওঠে বলে ” দেখো মা , কি সুন্দর !” মায়ের কান্নার শব্দে কথা তাকিয়ে দেখে কারা যেনো বাবাকে একটা সাদা চাদরে মুড়িয়ে খাটে শুইয়ে নিয়ে এসে উঠানের তুলসী গাছের সামনে নামিয়েছে ৷ সবুল কাকু মাকে বলছে সকালে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ীর ফেরা সময় একটা ট্রাক ধাক্কা মেরেছে ৷স্পটেই শেষ৷ শেষসময়েও হাতে কথার জামার প্যাকেটপ্যাকেটটাই ধরা ছিলো ৷ কথা ছুঁড়ে ফেলো দিয়ে জামাটা ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলছে মা জামা চাই না বাবা কে উঠতে বলো না –,

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।