সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র)

অক্ষয় তৃতীয়া

আজ একটু অন্যরকম লেখার চেষ্টা করছি ৷ আমরা সবাই আজ একান্ন পরিবারের মালা ছিঁড়ে নিজ নিজ বলয়ে ছোট্ট গন্ডীর মধ্যে নিজেদের বন্দী করে নিয়েছি ৷ আমরা যখন ছোটো ছিলাম ঠাকুমা- দিদিমা , মাসি -পিসি , সকলের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের গল্প শুনতাম আর সেইগুলো কল্পনায় আঁকতাম এবং সেই সমস্ত গল্প থেকে অনেকরকমের সংস্কার শিখতাম ,আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য সমন্ধে জানতাম ৷ আজকাল তো সেই বালাই নেই বললেই চলে ৷ এখন বাচ্চারা জন্মের পর থেকেই ব্যস্ত মায়েদের দৌলতে মোবাইলেই অভ্যস্ত হয়ে যায় ৷ না ব্যতিক্রম কিছু আছে হয়তো তার সংখ্যা খুবই কম ৷
কদিন আগেই অক্ষয় তৃতীয়া গেলো ৷ ছোটোবেলায় শোনা দিদিমা -ঠাকুমার কথা গুলো আজ লেখার চেষ্টা করলাম ৷বলা হয়, এই অক্ষয় তৃতীয়াতেই, গঙ্গাদেবী ভগবান শঙ্করের জটা থেকে অবতরণ করেছিলেন মর্ত্যে। গঙ্গাকে পথ দেখাতে দেখাতে সাগরে মিলন ঘটিয়েছিলেন ভগীরথ। মহাভারতের যুগে, আনুমানিক ৪৪৫০ বছর আগে, বদ্রিনারায়ণ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মানা গ্রাম। এই গ্রামের ব্যাস গুহায় বসে ব্যাসদেব শ্রুতিলিখনকারী গণেশজিকে সঙ্গে নিয়ে অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনে শুরু করেছিলেন লক্ষ শ্লোক মহাভারত রচনা।

কৌরব রাজসভায় রথী-মহারথীদের সামনে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি শ্রীকৃষ্ণের করুণায়। পাঞ্চালীর লজ্জা নিবারণ করেছিলেন বাসুদেব। দিনটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। বিশ্বাস করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ায় দেহ ত্যাগ হলে তার অক্ষয় স্বর্গলাভ হয়।

লৌকিক পরম্পরা অনুসারে, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন গঙ্গা থেকে জোয়ারের জল পুণ্যঘটে এনে ঘরে বা ব্যবসায় ক্ষেত্রে ছেটানো মঙ্গলজনক। এই পুণ্যতিথির গঙ্গাজল সার্বিক দুর্ভোগ দূর করে থাকে। ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার হলেন পরশুরাম। এই দিনটিই পরশুরামের জন্মতিথি হিসাবে খ্যাত। অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য দিনে ভগবান শঙ্করের আরাধনা করে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছেন কুবের ও লক্ষ্মী। মতান্তরে এই তিথিতেই কুবের লক্ষ্মী দেবী আরাধনা করে অত্যন্ত ধন-সম্পদ লাভ করেছিলেন।

অক্ষয় তৃতীয়ার আরেকটি নাম নবান্ন পার্বণ। এই দিনে বিষ্ণুর সঙ্গে বৈভব লক্ষ্মীর পুজো করলে ধনে-জনে লক্ষ্মীলাভ হয়। বছরের পর বছর ধরে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে প্রভু জগন্নাথ দেবের রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়াতে। জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভনাথ টানা এক বছর উপবাসের পর উপবাস ব্রত ভঙ্গ করছিলেন পবিত্র এই তিথিতে। সেদিন তিনি আখের রস পান করেছিলেন।

যদি কোনও বছর সোমবার রোহিণী নক্ষত্রে অক্ষয় তৃতীয়া তিথি পড়ে, তাহলে তাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা পবিত্র তিথি হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। পুরাণের কালে রাজা যুধিষ্ঠির অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে পেয়েছিলেন অক্ষয়পাত্র। এই পাত্রের সাহায্যে রাজা সারা রাজ্যের সমস্ত দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।এইদিনে শ্রীকৃষ্ণ সুদামা মিলন হয়।কুবের ধনসম্পদ রক্ষার দায়িত্ব পান এই দিনে। সকলে খুব ভালো থাকবেন ৷

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।