সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র – ৪৭)

পদবী

খ্রিস্টান বা ইসলাম লোকজন দের মধ্যে Title বা উপাধি নিয়ে জটিলতা বড়ই কম ।কেননা জাতপাত এর ব্যাপার নেই । কিন্তু হিন্দুদের আছে । যদিও Shakespeare এর কথাটা ঘুরিয়ে বলাই যায়, ” what’s in a Surname ? That which we call a Rose by any other name, would Smell as sweet . তবু আমরা এ বিষয়ে স্পর্শকাতর। যদিও একই উপাধি ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য, শূদ্র সবার মধ্যেই আমরা পাই। হয়তো এজন্যে বিহারে পদবী ব্যবহার না করবার রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। নিচু জাত গোপন করার চেষ্টায় অথবা জাতের সঙ্গে যুক্ত শত শত বছরের ভাবমূর্তিকে পরিহার করতে নামের পরে ঠাকুর অথবা যাদব লেখেন না বর্তমান প্রজন্মের অনেক বিহারী বাসীই। পাঞ্জাবের দলিত সম্প্রদায় ” বাল্মীকি “। তারা চট করে পদবী লিখতে চান না । কেরোলেও পদবী ব্যবহার কমে আসছে। এবারে খুশবন্ত সিং এর একটা লেখা পড়েছিলাম । ভালো লেগেছিল ৷ ।————What’s in a surname ? এই পদবীর চক্করে মানে জাত অজাতের কারণে এখনো বিভিন্ন জায়গায় কত প্রাণ বলি হয় প্রতি মুহূর্তে পরিসংখ্যান বলে ৷ খুশবন্ত সিং লেখাটা আমাদের শেয়ার করার চেষ্টা করছি যতটা মনে আছে পড়ুন ভালো লাগবে ৷ উনি লিখেছিলেন —–

        ৷ হিমাচলের বাসিন্দা জগন আমাদের অফিসের বেয়ারা। কোয়ার্টারে একাই থাকে। ছুটি না পাওয়ায় বেচারা বছর তিনেক হলো বাড়ি যেতে পারেনি। হঠাৎ সেদিন দেখি অফিসে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। দেশ থেকে খবর এসেছে ওর ছেলে হয়েছে। 

আমি ডেকে বললাম , “জগন্নাথ, এটা খুশখবরী হলো কিভাবে ? তুমিতো অনেকদিন বাড়ি যাওনি!”

নিরুত্তাপ জবাব এলো, আমাদের মুলুকে এটা একটা সাধারণ ঘটনা। বাড়ির পুরুষরা বাইরে থাকলে আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীরাই বউদের দেখভাল করে।”

বড়বাবু রসিকতা করে জিজ্ঞেস করলেন, “ছেলের পদবী কী হবে তাহলে ?”

শুনে জগনের জবাব, “এটা নির্ভর করছে কে দেখভাল করেছে তার ওপর । যদি দুজন প্রতিবেশী করে থাকে তবে দ্বিবেদী, তিন জন করে থাকলে ত্রিবেদী আর চার জন হলে চতুর্বেদী!!”

এটা শোনার পর প্রশ্নের ঝড় বয়ে গেলো। প্রেস কনফারেন্সের কায়দায় জগন এক এক করে তার জবাব দিল… “সবাই মিলে যদি দেখভাল করে থাকে তাহলে মিশ্র, যদি বউ প্রতিবেশীর পরিচয় জানাতে লজ্জা পায় তাহলে শর্মা, যদি নাম গোপন রাখতে চায় তাহলে গুপ্তা, আর যদি মনেই না করতে পারে তাহলে ইয়াদব!!”

অফিসের কমবয়েসীরা ফোড়ন কাটলো, “কেউ যদি জোর করে দেখভাল করে থাকে কিংবা তোমার বউ যদি নিজেই এগিয়ে যায় ?”

জবাব এলো, “প্রথম ক্ষেত্রে দোশী আর পরেরটায় জোশী!!”

সব শুনে বড়বাবু বলে উঠলেন, “ব্যাটার জন্মের পেছনে দেখি গোটা দেশের অবদান রয়েছে।”

জগন গম্ভীর হয়ে বললো, *”সেক্ষেত্রে পদবী হবে দেশপান্ডে৷ গল্পটি মজার হলেও বাস্তবে এত সহজ পরিস্হিতি নয় ৷ আমাদের সমাজ আধুনিকতার চরম শিখরে পৌঁছে গেলেও পদবীর ব্যাপারে এখনো তিমিরে আছেন ৷ একজন ডিভোর্সী মা তার ছেলে নিজের পদবীতে স্কুলে ভর্তি করাতে গেলেও শিক্ষিত লোকেরাও নানা প্রশ্ন তোলেন ৷ যদিও সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান রায় এখন অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে এইসব ক্ষেত্রে ৷ বাচ্চা বাবা বা মায়ের যার খুশি পদবী ব্যবহার করতে পারে আবার ইচ্ছা না হলে নাও ব্যবহার করতে পারে ৷ তবে এবার সময় এসেছে শুধু পোষাক আসাকে নয় বা গেজেটে আধুনিক নয় মনটাকে উদার করে আরো অধুনিক করার ৷ এই দুই বছরের প্যান্ডামিক আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়েছে ৷ টাকা পয়সা থাকলেও মৃত্যর সময় আপনজনকে চোখের দেখা পর্যন্ত দেখা যায় নি ৷ তাই কিসের এত অহংকার আমাদের ৷ আসুন আমরা মানবিক হই সব জাতপাত ভুলে ৷ মানবতাই হোক আমাদের জাত ,ধর্ম ৷

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।