কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মনিরুল ইসলাম (পর্ব – ৩)
by
·
Published
· Updated
হেরফের
এদিকে গ্রামের মেম্বার সন্ধ্যার সময় সাজানকে ডেকে বলল-
– শােনাে সাজান মিঞা, তােমার ছেলে রিন্টু নবাবের মেয়ের সঙ্গে ফস্টি-নস্টি করছে।নবাব জানতে পেরে শালিস ডেকেছে। আগামীকাল বাদ পরশু বুধবার মোড়ের মাথায় তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে আসবে।শালিস হবে সন্ধ্যা ৭ টার সময় তুমি চলে আসবে।
– আমাকে একবার জানানাের প্রয়ােজন মনে করল না?
-আমি তার কি জানি?
-আমি শালিসি সভাতে যাব না।
–না গেলে ওরা থানায় যাবে। তখন দুই বাপ-বেটায় জেলের ঘানি টেনে।
-আমার ছেলে এমন কি করলে যে আমাকে জেল খাটতে হবে?
-শালিসি সভায় এসাে জানতে পারবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে।
হন্তদন্ত হয়ে সাজান বাড়িতে ফিরে এলাে। ঘরে চুপচাপ বসে আছে, কোনও কথা বলে না। রাত
বাড়লে রিন্টু বাড়ি ফেরে। সাজান না খেয়ে বসে আছে। বউ ভাত বেড়ে রিটুকে ডাকে, রিন্টু খেতে
আসে, কিন্তু আব্বা না আসায় খেতে পারছে না। রিন্টুর বুঝতে অসুবিধা রইল না, নিশ্চয় সকালের ঘটনা কেউ আব্বাকে বলে দিয়েছে। এটা সে ভাবেনি, তার জন্য তার বাপকে শালিসি সভাতে বসতে হবে।
রিন্টু ভাত খাওয়ার কথা বলতেই সাজান ফেঁস করে ওঠে–
– তাের জন্য আমার মরণ হবে।
–কি অলক্ষুণে কথা বলাে দেখি। ছেলেটা বাড়ি এল আর অমনি ওর পেছনে লেগে গেছে।
-তােমার ছেলে কি করেছে শােনাে-
–কিকরল সে?
-তােমার ছেলের জন্য আমাকে শালিসি সভাতে বসতে হবে।
-কেন?কি করেছে আমার ছেলে ?
-তােমার ছেলে নবাবের মেয়ের সঙ্গে ফস্টি-নস্টি করছে। নবাব শালিস ডেকেছে, মেম্বার
আমাকে জানিয়ে দিল।
-আব্বা
-খবরদার তুই আমাকে আব্বা বলবি না। আমার কোনও ছেলে নেই, তাের মতাে ছেলের মুখ
দেখাও পাপ।
রিন্টু ভাত ফেলে উঠে গেল নিজের ঘরে।
—যাসনে, খােলাভাত ফেলে যাসনে, ছেলেটা না খেয়ে—
– যাক-ওর মতো ছেলে-
-আচ্ছা তুমি থামবে, ছেলেটা এই ক’দিন হল বাড়ি এল, আর এর মধ্যে এমনকি হল যে শালিস
ডাকতে হল।
-কি করল সেটা বড়াে কথা নয়, বড়াে কথা এটাই আমাকে শালিসে বসতে হবে।
-আসলে এসব কিছু নয়। মেম্বার ভােট না দেওয়ার প্রতিশােধ নিতে এই খেলায় নেমেছে।
– সে তােআমিও বুঝলাম, কিন্তু এখন উপায় কী?
-তুমি চিন্তা কোরাে না, একটা পথ বার হয়ে যাবে।