সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে মন্দিরা হাজরা (বসু) (পর্ব – ১৪)

এই পর্বের অনেকটা কেটেছে ” ব্যথাসুরের” সাথে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে।
পুরোনো একটি গানের কলি যদি কেউ কেউ মনে করতে পারেন ” এ ব্যথা কি যে ব্যথা বোঝে কি আনজনে ” ?
সত্যি সত্যিই এই ব্যথা বস্তুটি এতটাই সাবজেক্টিভ , যে এটিকে নিজে প্রতক্ষ্যরূপে বা অবজেক্টিভ ভাবে লাভ করার আগে এই আনজনেদের কাছে এ অনেকটা হলো “খায় না মাথায় দেয় ” গোছের জিজ্ঞাসা হয়েই  রয়ে যায় । পেইন ক্লিনিক থেকে অর্জিত বালতি ভরা আফিমে চুবিয়ে রেখেও আমার “ব্যথাসুরকে ” কব্জা করা যাচ্ছিল না । আর এই অবস্থায় আমি দিব্যি চলাফেরা করে বেড়ালেও চারপাশের লোকজন ” তফাত্ যাও ! হূঁশিয়ার ! ” ভঙ্গিতে সরে যাচ্ছিল পাছে তাদের উপর হূমড়ি খেয়ে পড়ি । এই পর্বের যবনিকাপতন হয় তৃতীয়বার অস্ত্রপীড়নের পর , তবে দীর্ঘসূত্রতার কারনে বলা যাক ” সেকথা এখোনো নহে ” !
তবে সব দুঃখ ভোগেরই বোধহয় কিছু কিছু ” সিলভার লাইনিং ” থাকে ! এই বারংবার হাসপাতাল অভিযানের ফলে আমার কিছু ” ফার্স্ট  হ্যান্ড ” অভিজ্ঞতা লাভ হয়, যা ডাক্তার হিসাবে কাজ করাকালীন কখোনো খেয়াল করে দেখিনি । আমি  এখন বুঝতে শিখেছি যে একটি অসহায় রোগীকে মাঝরাতে কতখানি ভরসা যোগাতে পারে একজন নার্সের মাত্র দশ মিনিট সময় । একজন সহসেবিকা চায়ের কাপের পাশে এক স্যাচেট  চিনি  এবং  একটি চামচ দিতে কখনো ভুলে যেতেন না ( এঁকে মনে থেকে যাবে এই কারনে যে বাকিরা অনুরোধ সত্বেও সঙ্গে  সঙ্গে ভুলে  যেতেন ) ! একজন সিনিয়ার ওয়ার্ড সিস্টার একান্নবর্তী পরিবারের বড়োবউ এর মতো রোগীদের ভোজনপর্ব তদারকী করতেন, যা, আমি নিশ্চিত তাঁর জব ডেসকৃপশন ‘ এ পড়ে না । একজন ছোটো ডাক্তারদিদি   সর্বদা আমাকে ভারী মিষ্টি করে  প্রথম নামে সম্বোধন করতেন । এক বড় ডাক্তারবাবু আমার নামটি , একই বেডে মাসখানিক বন্দী  থাকা সত্বেও,  মনে রাখতে পারেন নি এবং  সবসময় আমাকে  ” ইয়ং লেডি ” বলে কথা শুরু করতেন ; যা একই সাথে হতাশা এবং আত্মশ্লাঘা (এই বয়সেও ইয়ং লেডি, হুঁ হুঁ বাবা ! ) জাগাতো ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।