ধারাবাহিক রম্য রচনায় সংযুক্তা দত্ত – ৪

 

নাচ শেখা ও অনুষ্ঠান তো বেশ তরতর করে চলছিল। মাঝে মাঝে শারীরিক কারণে কয়েক বার সাময়িক বিরতি পড়েছে কিন্তু বন্ধ কখনোই হয় নি। তখন ক্লাস ৮, শ্রদ্ধেয় নৃত‍্যগুরু সাধন গুহ ও পলি গুহ র গ্রুপে যোগ দি কিন্তু বিধি বাম, ধরা পড়ল টাইফয়েড,ফলে নাচে আবার বিরতি। তারপর যা হয় মাধ্যমিক তারপর আবার উচ্চ মাধ‍্যমিকের চাপে পরে নাচ একটু ব‍্যাকসিটে চলে যায়। সেই সময় আমার বাবার এক বন্ধু ছিলেন স্লোভাক রিপাবলিক এর ওনারারী কনসোল । তাঁর বাড়িতে কিছু বিদেশী ডেলিগেটস দের জন‍্য ঘরোয়া একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে নৃত্য প্রদর্শনের জন্য ডাক পড়ল আমার। এবার এমন নাচ হতে হবে যা ওনারা উপভোগ করতে পারবেন আবার আমাদের সংস্কৃতি কেও ঠিকঠাক তুলে ধরতে হবে। গান বাছাই করাটাই সবচেয়ে দুরহ কাজ। আমাদের সংস্কৃতি আর কবিগুরুর তো অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক তাই ওনার একটা গান তো বাছতেই হবে আর সেই সময় বর্ষাকাল তাই আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি গান “এসো শ‍্যামল সুন্দর ” বেছে নিলাম। প্রাণের ঠাকুরের কথা ধার করেই বলি, ” দিবে আর নিবে, মিলালে মিলিবে” এই কথাটা যে কতবার কত ভাবে মিলেছে বলার নয়। এই গানটির মূল ভাবটি অপরিবর্তিত রেখে অল্প কথায় ইংরেজি write up তৈরি করে দিয়েছিলেন এক দক্ষিণী মহিলা যাঁর মননে ছিল রবীন্দ্রনাথ সর্বদা। এবার অনুষ্ঠানের দিন, সেদিন আমায় বলা হল আর একজন নৃত্য শিল্পী উপস্থিত থাকতে পারবেন না তাই আর ও একটি নাচ করতে হবে আর সেটি হতে হবে একটু দ্রুত লয়ের গান। ঝটপট মাথায় এল ” ধিতাং ধিতাং বলে”,এখন লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে ইউটিউব থাকত যদি তখন তাহলে কত সহজ হত কিন্তু এটা তো প্রায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের গল্প তাই তখন ক‍্যাসেট চালিয়ে প্রাকটিস শুরু, ভাগ‍্যিস গান, কবিতা সবকিছুর পর নাচটা ছিল। “শ‍্যামল সুন্দর “বেশ হাততালি পেয়েছিল তবে ” ধিতাং ধিতাং বোলে” সবাইকে ধিতাং ধিতাং করতে বাধ‍্য করে দেয়। আমি স্টেজ থেকে অনেকেই পায়ে তাল দিতে দেখতে পাই, এমনকি বিদেশী অতিথিরা দিব‍্যি তালে তালে হাততালি দিচ্ছিলেন। এই যে দর্শকদের একাত্মতা তাও আমাদের মাতৃভাষার সাথে পরিবেশনায়, একজন শিল্পীর কাছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছুই হয় না।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।